আহুতি এক দ্বান্দ্বিক বিস্ময়
পুড়বে জেনেও পতঙ্গ আগুনে ঝাঁপ দেয়। প্রেম থেকেই সৃষ্টির উদ্ভব,উদ্ভাস। জীবন ও জগত রঙের খেলা। স্রষ্টা রঙিলা তাই সৃষ্টিও। বসন্ত -রঙের বাহার মানুষকে যে ভাবে উদ্বেলিত করে তা দেখে কবির বিস্ময় জাগে। মিলনের আশায় প্রেমের প্রদীপে কোন সুখের জন্য প্রেমিক নিজেকে জ্বলায় তাও কবির আরেক বিস্ময়। এ বিস্ময় দুটি কৌণিক দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে। প্রথমত সৌন্দর্যের সৌকর্য ও মিলনের প্রত্যাশা, যার চেরাগে প্রেমিক প্রোজ্জল হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত বসন্তে যে কোকিল কুহু কুহু তানে বন মাতায়, মন মাতায় বসন্তের অবসানে সে কোথায়? সৌন্দর্যই-বা কদিনের। তাহলে কী সুখের লাগি এ অগ্নিদাহ? সুখটাইবা কী? কবি তো তাঁর পূর্বসূরী কবিকন্ঠে শুনেছেন সুখ সুখ করে কেঁদনা আর যতই কাঁদিবে ততই বাড়িবে হৃদয় ভার । আবার যে মিলনের জন্য অতটা জ্বলা, তা কি হবে? এ ভাবনাও প্রচ্ছন্নভাবে এসে যায়।
“রংএর ছোঁয়ায়, কোন অনুরাগে,
বসন্ত বাহার কন্ঠে বাজাও!
মিলন আশায়, প্রেমের চিরাগে
কি সুখের লাগি, নিজেরে জ্বলাও!”
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় কবিতাটি মাত্রাবৃত্তে অসম পর্বে লিখা। ৭/৬// ৭/৬// ৬/৬//৬/৬ মাত্রায় বিন্যস্ত। অবশ্য রংএর> রঙের এবং কন্ঠে> বাঁশিতে করা গেলে অক্ষরবৃত্তেও ৬/৬ পর্ব নিয়মিত হয়। কবি প্রতি পঙতির শেষ দু মাত্রায় অন্ত্যমিল ব্যবহার করে কানকে তৃপ্ত করেছেন। অন্ত্যমিল নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। পর্ব শেষে যতি চিহ্ন ব্যবহার না করলেও পারতেন। কেননা পর্বপ্রান্তে স্বাভাবিক ভাবেই যতি পড়ে।
শব্দ সচেতন কবির চিরাগ এবং জ্বলাও শব্দদ্বয়ের প্রয়োগ বিমুহিত করেছে। জ্বলাও শব্দটির জন্যই দ্বিতীয় কোণ থেকে ভাববার সুযোগ ঘটেছে। চার চরণের একটি কবিতায় এতকিছু পেলে কবিকে গোলাপগুচ্ছ দিতেই পারি।
বেঁচে থাকুন কবি সৃষ্টির মাঝে।