আজ সেই দিন
যে দিনে আলমারির ভেতর মায়া নিয়ে ভাজ করা সেই হলুদ পাঞ্জাবিটা খুঁজি
খুব ভোরে উঠে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে এলোমেলো ভাবনায় ডুবে চেয়ে থাকি পাঞ্জাবিটার দিকে
তারপর এক টুকরো শিহরণ মেরুদণ্ড বেয়ে বিদ্যুতের গতিতে বয়ে যায় সমস্ত পিঠ জুড়ে
সেই অগোছালো ভাবনার ভিড়ে কখন যে দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে বলতে পারি না
মাস দুয়েক হল দাড়ি কামাই নি চুলগুলোও বেশ বড় হয়ে গেছে
অধীর আগ্রহ নিয়ে এই দিনটা পালনের আয়োজন অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় নিজের অজান্তেই
সূর্য মোটামুটি আলো ফোটানোর আগেই বের হয়ে পড়ি নগ্ন পায়ে সেই চিরচেনা ব্যস্ত রাজপথে
হেঁটে যেতে হবে দূর বহুদূর
রোদের মিষ্টি আলোয় হলুদ পাঞ্জাবিটাও খুব সুন্দর দীপ্তি ছড়াচ্ছে
অগোছালো এলোমেলো এক তরুণ আবার তার পুরনো উদ্যমে হেঁটে চলেছে এই ব্যস্ত রাজপথের বুক চিরে
তবে গন্তব্যটা উদ্দেশ্যহীন নয়
আমার গন্তব্যটা হোতাপাড়া হতে আট কিলোমিটার দূরে এক স্নিগ্ধ শ্যামল গ্রামে
নাম নুহাশ পল্লী
এখন বুঝতে পারছেন তো আমি কে?
আমি,আমি হিমু
আমার চরিত্রের স্রষ্টা প্রিয় হুমায়ূন স্যার
স্যার আমাকে নিয়ে কত কিছুই না করেছেন
কখনও ভিক্ষে করিয়েছেন,কখনও বিয়ে দিয়েছেন,কখনও পুলিশে ধরা খাইয়েছেন আরও কত কি
নানা ধরণের উদ্ভট কাজ করিয়েছেন
স্যার আজ নেই
কেউ আর সেই উদ্ভট কাজগুলো করে না আমাকে নিয়ে
খুব খারাপ লাগে জানেন মাঝে মাঝে আমি কেমন যেন হয়ে গেছি
আগের মত উদ্ভট আচরণ করতে পারি না লোকে মন্দ বলে তাই
স্যার থাকলে আমার কোন চিন্তাই থাকতো না
তিনি এই মন্দ বলা লোকদেরকে কোন না কোনভাবে ঠিকই বুঝিয়ে দিতেন যা আমি পারি না
খুব খারাপ লাগে মাঝে মাঝে কেউ এখন আমাকে নিয়ে ভাবে না এই ভেবে
তবুও হিমুরা কি আর তার জায়গা থেকে সরতে পারে বলুন
এখনও ভুলে যাই শার্টে পকেট লাগাতে,এখনও রাত বিরাতে বের হয়ে পড়ি উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে
খালি পায়ে হাঁটাটাও পুরোপুরি ছাড়তে পারি নি
তাই আজ সেই খালি পায়ে শূন্য পকেটে বের হয়ে রওনা হয়েছি নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে
স্যার নেই জানি তবুও মাঝে মাঝে ছুটে যাই সেই অদম্য টানে
সেই গাছগুলো আগের মত নেই জানেন
কেমন যেন মুষড়ে পরেছে
তবুও সেই গাছগুলোর সাথে কথা বলি,স্যারের হাতে সকল গাছের সকল পাতার ছোঁয়া লেগে আছে
তাদেরকে ছুঁয়ে স্যারকে অনুভব করার চেষ্টা করি
তবুও দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে
অনেকক্ষণ কান্না জড়ানো চোখে বসে থাকি সেই লিচু বাগানে স্যারের কবরের পাশে
মনে মনে অনেক অভিযোগ করি
জানি না স্যার সেগুলো শোনেন কিনা
যদি শুনে থাকেন তবে সবচেয়ে বেশি শোনেন যে অভিযোগটা তা হল
অনেক লুকোচুরি হয়েছে স্যার আর ভাল্লাগে না
এবার ফিরে আসুন প্লীজ
দেখুন আপনাকে ছাড়া মিসির আলি কেমন কালোমুখ করে বসে আছে
আমারও ভালো লাগছে না
শুভ্রটাও কেমন যেন বদলে গেছে
আমি স্যার কে নিয়ে এত কথা বললাম কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন
আমি স্যার কে কখনও সামনা সামনি দেখি নি
কিন্তু স্যার এর সৃষ্টিকর্মে মুগ্ধ হয়ে তার মৃত্যুর পরও বারেবার ছুটে যাই তার আঙিনায়
খুব মিস করছি স্যার আপনাকে
জানি না কোথায় আছেন
তবে যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা পাঠালাম আপনার নামে উড়ো ঠিকানায়
যদি এই ভালোবাসা কোন মাধ্যমে যদি ডাকযোগে আপনার নিকট পৌঁছে তবে সাদরে গ্রহণ করবেন
খুব ধন্য মনে করবো নিজেকে

ইতি
আপনার হিমু

রাহাত হোসেন