পৃথিবীতে এসেছিলাম নির্জনে, নগ্ন,
শুধু মাটির গন্ধ আর মায়ের কোলের উষ্ণতা।
আমার প্রথম পোশাক ছিল একটি চাদর,
যা জড়িয়ে ছিল ভালোবাসায়।
তখন ছিল না কোনো লজ্জা,
ছিল না কোনো ব্যথা।
ছিলাম কেবল একটি প্রাণ,
যার স্পর্শে নতুন সূর্যের আলো।
তারপর সময় এগোলো।
আমি বড় হলাম,
পোশাক এলো,
তবে সেই পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে থাকল
একটি অজানা শূন্যতা।
সেই শূন্যতা, যা পোশাকের রঙে ঢাকে না।
আমি দেখলাম,
পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে আছে অনেক কান্না।
শিশুর চোখে দেখেছি আমি,
কেমন করে তারা কাদামাটিতে খেলে।
নগ্ন পায়ে ছুটে চলে,
তাদের হাসি মুক্ত বাতাসে মেশে।
তাদের দেহে নেই কোনো মোহের বস্ত্র,
তবুও তাদের হাসি নদীর ঢেউয়ের মতো স্নিগ্ধ।
আমরা কি কখনো তাদের সেই নির্মল হাসি দেখেছি?
আমরা কি বুঝতে পেরেছি,
সেই হাসির আড়ালে নেই কোনো মিথ্যে?
তবুও বড় হতে হতে আমরা বেঁধে ফেলি নিজেদের।
একটি শৃঙ্খলা,
একটি পোশাকের গ্লানি।
কেউ পোশাকহীন, শীতার্ত,
যার ঠোঁট ফাটে ঠান্ডার কামড়ে,
যার শরীরে বেদনার চিহ্ন,
কিন্তু তার মুখে থাকে একটি নির্জন আর্তনাদ।
কেউ আবার দামি পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকে,
তার চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ,
কিন্তু ভেতরে শুধুই শূন্যতা।
কেউ পোশাক ছাড়াই পথের ধারে ঘুমায়,
তারা কি পোশাকের স্বপ্ন দেখে?
না কি শুধু এক টুকরো উষ্ণতার?
জীবন একদিন থেমে যাবে।
আমরা সবাই নগ্ন হবো,
মাটি আমাদের বুকের ভেতর টেনে নেবে।
পোশাক রয়ে যাবে পড়ে,
তার গায়ে থাকবে মানুষের স্মৃতির ধূলি।
তখন কেউ কি আমাদের এই পোশাকের কথা মনে রাখবে?
না কি মনে থাকবে আমাদের কান্নার শব্দ?
তোমরা কি বুঝতে পারো?
পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে আছে
অসংখ্য মুখ,
অসংখ্য ব্যথা,
অসংখ্য নির্জন কান্না।
তুমি যদি চোখ বন্ধ করো,
তুমি যদি অনুভব করো,
তবে দেখবে—
তোমার বুকেও সেই কান্নার সুর বেজে উঠেছে।