২৯ আগস্ট ১৯৭৬। ঢাকার পি জি হাসপাতাল। ডাক্তার নার্সদের ব্যস্ততা। জীবনমৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছেন। ৭৭ বছর বয়সী নির্বাক, মূক অপলক দৃষ্টির এক মানুষকে বাঁচানোর লড়াই। না হেরে গিয়েছিল গোটা হাসপাতাল। অমোঘ মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেই মানুষটিকে। তারপর সবটাই ইতিহাস। বাংলাদেশ বেতার তরঙ্গে সমগ্র বিশ্ব জানাল দীর্ঘ ৩৪ বছর নির্বাক, মূক অপলক দৃষ্টি নিয়ে আজও বেঁচে ছিলেন কবি নজরুল। দুই বাংলা জুড়ে পালিত হল তাঁর স্মরণ সভা। তাঁর নাম গড়ে উঠল অগণন সভা , সমিতি। এই বিষয়ে বড় ব্যথায় তিনিই বলেছিলেন, " যেদিন আমি দূর তারার দেশে চলে যাব, আমাকে নিয়ে কত সভা হবে, সমিতি হবে, ত্যাগী, বীর, বিপ্লাবী, বিশেষণের পর বিশেষণ ,টেবিল ভেঙে ফেলবে বক্তার পর বক্তা। "বাংলা মননে-চিন্তনে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।
দেদীপ্যমান রবীন্দ্র প্রতিভার যুগে কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই বাংলাদেশের ইতিহাস। সাহিত্যের প্রতি তাঁর সমসাময়িক চিন্তাভাবনা বাংলা সাহিত্যকে আরও সম্পদযুক্ত করে তোলে । সময়ের সাথে সাথে প্রচুর বাঙালি মুসলিম লেখক বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে আলোকিত করে। সকলের চাইতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান, সর্বাধিক বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে।
কবিরা হলেন এমন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী যাঁরা নৈর্ব্যক্তিক কল্পনায় জীবনের নতুন দিশা আবিষ্কার করতে পারেন। কবি এবং তাদের শৈল্পিক অভিব্যক্তি সর্বদা সাহিত্যকে নতুন সুর দ্বারা সমৃদ্ধ করেন। নৈর্ব্যক্তিক কল্পনায় জীবনের নতুন দিশা আবিষ্কার ও শৈল্পিক অভিব্যক্তিতে সাহিত্যের ইতিহাসকে আলোকিত করার অন্যতম কারিগর ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে কবি নজরুল ইসলামের জন্ম, বেড়ে ওঠা। মাতৃভূমির পারধীনতা ও দাসত্বশৃঙ্খল তাঁকে পীড়া দিত।সাম্রাজবাদী ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুক্ত-স্বাধীন দেশ ছিল তাঁর আজীবনের সাধনা।যুদ্ধবিদ্যা ও কৌশল করায়ত্ব করার অদম্য ইচ্ছায় ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা।
সৈনিক জীবন ত্যাগ করে নজরুল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে। পরিচিত হন সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সাথে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতা গুচ্ছ। এরই সাথে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ জাগ অনশন বন্দী ওঠ রে যত- তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেড ফ্ল্যাগ-এর অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান।
তখন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা মুহাম্মদ আলি ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন- অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতারণ। আর খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্ত শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা, কারণ এই সমন্বিত সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে প্রায় সকল মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলিফা জ্ঞান করতো। নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা স্বরাজ অর্জনে বিশ্বাস করতেন যা মহাত্মা গান্ধীর দর্শনের বিপরীত ছিল। আবার মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার আন্দোলনের প্রতি নজরুলের সমর্থন ছিল। তারপরও তিনি অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর কারণ, এই সংগ্রাম দুটি ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের সম্মিলিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। গান্ধীজির স্বরাজের অর্থ দেশের স্বাধীনতা নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গান্ধীজি শুনিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে এদেশে স্বায়ত্বশাসন ও স্বরাজ এসে যাবে বলে দেশের মানুষকে আশা দিয়েছিলেন এবং আন্দোলন বদ্ধ রেখেছিলেন। ফলে বিরূপ হয়েছিলেন দেশবাসী। নজরুলই প্রথম তাঁর লেখনীতে বলেন, স্বরাজ নয়, চাই পূর্ণ স্বাধীনতা।" বিদ্রোহীর বাণী কবিতাতে শোনালেন,
“বুকের ভিতর ছ-পাই ন-পাই, মুখে বলিস স্বরাজ চাই,
স্বরাজ কথার মানে তোদের ক্রমেই হচ্চে দরাজ তাই!
‘ভারত হবে ভারতবাসীর’ – এই কথাটাও বলতে ভয়!
সেই বুড়োদের বলিস নেতা – তাদের কথায় চলতে হয়!”
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই ১২ তারিখে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক- এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় "মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়।
১৯২৬ সালের ২ এপ্রিল কলকাতায় শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ এই দাঙ্গার বীভৎসতা নজরুলের হৃদয়ে তীব্র বেদনা সৃষ্টি করেছিল৷ সেই ঘটনাকে সামনে রেখে লিখেছিলেন এই ‘মন্দির ও মসজিদ’ প্রবন্ধটি৷ এই দাঙ্গার পরও দেশ বহু দাঙ্গা দেখেছে৷ দাঙ্গায় মরে সাধারণ মানুষ৷ তারা শুধু হিন্দু নয়, শুধু মুসলমান নয়৷ নজরুল সেদিনই বলেছিলেন, ‘ভূতে–পাওয়ার মতো ইহাদের মন্দিরে পাইয়াছে, ইহাদের মসজিদে পাইয়াছে’৷ ‘মন্দির ও মসজিদ’ প্রবন্ধে তিনি লিখলেন, ‘মারো শালা যবনদের’ ‘মারো শালা কাফেরদের’ আবার হিন্দু–মুসলমানি কাণ্ড বাঁধিয়া গিয়াছে৷ প্রথমে কথা–কাটাকাটি, তারপর মাথা–ফাটাফাটি আরম্ভ হইয়া গেল৷ … হিন্দু–মুসলমান পাশাপাশি পড়িয়া থাকিয়া এক ভাষায় আর্তনাদ করিতেছে– ‘বাবা গো, মা গো’ … দেখিলাম হত–আহতদের ক্রন্দনে মসজিদ টলিল না, মন্দিরের পাষাণ দেবতা সাড়া দিল না৷ শুধু নির্বোধ মানুষের রক্তে তাহাদের বেদি চিরকলঙ্কিত হইয়া রহিল’’৷
১৯৩০ সালে আরএসএস–এর আজমির অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে শ্রীপরমানন্দ বলেছিলেন, ‘‘হিন্দুস্তান শুধুমাত্র হিন্দুদের দেশ এবং মুসলিম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য জাতের যেসব মানুষ ভারতে বাস করেন, তাঁরা কেবলমাত্র আমাদের অতিথি৷ যতদিন অতিথি হিসাবে থাকতে চান, ততদিন তাঁরা এ দেশে বাস করতে পারেন৷’’ ১৯৩৮–এ নাগপুর অধিবেশনে আরএসএস নেতা সাভারকর উগ্র হিন্দুত্বের প্রচার তুলে বললেন, ‘‘ভারতবর্ষ কেবলমাত্র হিন্দুর৷ এটি হিন্দু জাতির পিতৃভূমি ও পবিত্র ভূমি৷’’এর বিপরীতে ১৯৩৮–এ কুমিল্লার একটি জনসভায় সুভাষচন্দ্র বসু বলেন, ‘‘…হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় বলে হিন্দুরাজ–এর ধ্বনি শোনা যায়৷ এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা৷’’ ১৯২৬–এর দাঙ্গার পর কৃষ্ণনগরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলন হয়৷ নজরুলকে সেখানে উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইতে হয়েছিল৷ আর এক সঙ্গীতজ্ঞ দিলীপকুমার রায়কে সঙ্গে নিয়ে গেয়েছিলেন ‘কান্ডারি হুঁশিয়ার’ গানটি৷ দেশের প্রকৃত কান্ডারির খোঁজে সেদিন গেয়েছিলেন–
‘‘অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ
কান্ডারি আজি দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ৷
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম?’ ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার’’
নজরুলের রাজনৈতিক কবিতার আর একটি ক্ষেত্র হলো বিদ্রূপ ভঙ্গিতে লেখা ব্যঙ্গ-হাস্য মিশ্রিত রচনা। সেগুলো ‘চন্দ্রবিন্দু’ নামক সংকলনে একত্রিত করা হয় এবং প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংকলনটি বাজেয়াপ্ত হয় ১৯৩১ সালে। এই সংকলনে আছে – ‘ডেমিনিয়ান স্টেটাস’, ’লীগ-অব-নেশন’, ‘দে গরুর গা দুইয়ে’, ’রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স’, ‘সাহেব ও মেমসাহেব’, আইমন কমিশনের রিপোর্ট: প্রথম ভাগ - ‘ভারতের যাহা দেখিলেন’, এবং দ্বিতীয় ভাগ- ‘ভারতের যাহা দেখাইলেন’, ‘প্রাথমিক শিক্ষা বিল’ প্রভৃতি। চিত্তরঞ্জন দাস হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে মুসলমানদের জন্য অধিক কর্মসংস্থান সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে যে প্রস্তাব করেছিলেন, চিত্তরঞ্জনের অনুরাগী হওয়া সত্ত্বেও তা পছন্দ করতে পারেননি নজরুল। ‘চন্দ্রবিন্দুতে’ প্যাক্ট কবিতাটিতে তিনি লিখেছিলেন- ‘বদনা গাড়ুতে গলাগলি করে, নব প্যাক্টের আশনাই,/মুসলমানের হাতে নাই ছুরি, হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই॥’ তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ “কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল করলে লোপাট/রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী/ওরে ঐ তরুণ ঈশান, বাজা তো প্রলয় বিষাণ/ধ্বংস নিশান, উড়ুক প্রাচীন প্রাচীর ভেদি।/গাজনের বাজনা বাজা, কে মালিক কে সে রাজা,/ কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে।/হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি/সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে।’’
১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণের চেষ্টা করেন। প্রথমে কংগ্রেসে সমর্থন লাভের জন্য তিনি কলকাতা যান। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে তিনি একাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে তিনি তেমন সাফল্য পাননি। এরপর সাহিত্যের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যায়। রাজনৈতিক নেতাদের নীতিহিনতা, ভ্রষ্টাচার আর দেশপ্রেমের নাম আত্মপ্রেম, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল মানতে পারেননি নজরুল ইসলাম। শিখা কবিতায় শোনালেন,
“যে হাতে পাইত শোভা খর তরবারি
সেই তরুণের হাতে ভোট-ভিক্ষা-ঝুলি
বাঁধিয়া দিয়াছে হায়! – রাজনীতি ইহা!
পলায়ে এসেছি আমি লজ্জায় দু-হাতে
নয়ন ঢাকিয়া! যৌবনের এ লাঞ্ছনা
দেখিবার আগে কেন মৃত্যু হইল না?”
না। যৌবনের লাঞ্ছনা দেখার আগে তার মৃত্যু হয়নি। মৃত্যু হয়েছে তাঁর চেতনার। তাই দীর্ঘ ৩৪ বছর তিনি কাটিয়েছেন নির্বাক, মূক, বধির জীবন। আজকের ভারতবর্ষেও যুবকদের অবস্থা ত থৈ বচ। এই যুবকদেরই তিনি বলেছেন,
“অতীতের দাসত্ব ভোলো! বৃদ্ধ সাবধানী
হইতে পারে না কভু তোমাদের নেতা।
তোমাদেরই মাঝে আছে বীর সব্যসাচী
আমি শুনিয়াছি বন্ধু সেই ঐশীবাণী
ঊর্ধ্ব হতে রুদ্র মোর নিত্য কহে হাঁকি,
শোনাতে এ কথা, এই তাঁহার আদেশ।”
মূলত কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটি যুগ। জরাগ্রস্ত একটি জাতির চেতনা। স্বল্প পরিসরে তাঁর সার্বিক বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়। তাঁর লেখনী সমগ্র বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ব করেছিল জাতীয় চেতনায়। কবি নিজ জীবনেও তাঁর কোন মূল্যই পাননি , চরম দারিদ্রতা , কবিপুত্র বুলবুলের মৃত্যু , শারীরিক অসুস্থতা, ঋণ, চিত্তরঞ্জনের মৃত্যু, রবীন্দ্র প্রয়াণ, স্ত্রী প্রমীলার পক্ষঘাত, একের পর এক কাব্যগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত হওয়া , প্রকাশকদের নিকট থেকে পারিশ্রমিক না পাওয়া , সমকালীন রাজনৈতিক বিভাজন, প্রবল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কবির জীবনে নামিয়ে আনে চরম অসুস্থতা। বাক শক্তি হারান কবি। তারপর দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আবারও জাতীয় চেতনা জেগে ওঠে। বাংলাদেশ বেতারে তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। আজও ভারতীয় উপমহাদেশের চলমান রাজনৈতিক দুরাবস্থা , শোষণ-শাসন , সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প, যুবকদের বিপথগামিতা থেকে একমাত্র নজরুল সাহিত্যই পারে পথ দেখাতে। আজও নবযৌবনের অগ্রদূত কাজী নজরুল ইসলাম। তাই বলতেই হয়,
“পার করেছি দেশ-কাল,
লেখনী তোমার অবিকল,
জাগায় প্রেরণা মনে- প্রাণে,
প্রতিদিন প্রতি ক্ষনে।
লক্ষ-কোটি হৃদয়ের বুলবুল
কবি কাজী নজরুল।”
রচনাকাল ২৭/০৮/২০২০