বাবা !
তুমি নেই ভাবতেই পারি না...
মানতে ও খুব কষ্ট হয়...
কতো দিন ;
কতো কাল তুমি নেই...!
তোমার যাওয়ার হিসেব কষি নি কোন দিন...
তোমার যাওয়ার প্রতিটি দিনই
যেন কতো বছরের যোগ ফল বাবা...!
আজ তুমি নেই
তোমার স্মৃতিরা ভীড় করে রোজ
মনের অলিতে গলিতে...
জীবন চলার প্রতি পরতে..
করি তোমার জীবন্ত অনুভব...
খেতে চাইতাম না বলে
মা যখন মারতো-
তুমি তেড়ে এসে আমায় আগলে নিতে
কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে নিতে...
মা মারতো বলে -
তুমি মাকে কতোই না বকা দিতে
আমার জন্যই রোজ তোমরা ঝগড়া করতে..
তুমি ও কতো ছল করে খাওয়াতে চাইতে..
কখনো ধমকটি ও দাও নি বাবা...
পড়তে চাইতাম না তাই
নানান রকমের লোভ দেখাতে...
বল দিবে ব্যাট দিবে...
নতুন স্কুল ব্যাগ দিবে..
নানা বাড়ি ...
মেলায় নিবে...
ফুঁ ঝিক ঝিক রেল গাড়ী দিবে..
রঙ্গীন লালা জামা দিবে...
ছবি আঁকার জল রঙ কিনে দিবে..
জরি করা কলম দিবে...
নতুন পেন্সিল খাতা দিবে...
তুমি যখন তোমার ব্যবসার কাজে যেতে রোজ আমার
কপালে
দু চোখে-দু কানে
দু গালে-ঠোঁটে
গলায়-জামিতে
দু হাতে- তালুতে
দু হাতের পিঠে
দু বাহুতে
কতো গভীর ভাল বাসার চুম্বন এঁকে দিতে... বাবা...
তোমার কোমল স্নেহাস্পার্শে ধন্য হতাম রোজ..
আবার-
কোলে তুলে গেইটের সামনে যেতে...
চোখের আড়াল হওয়ার আগ মুহূর্তে
তুমি ফ্লাইং কিস দিতে
আমি ও দিতাম
তোমার শেখানো ছিলো বলে...
আমার একটু কষ্ট দেখলে
একটু উহ্ শব্দতেই তুমি খুব অস্থির হয়ে যেতে...
সেইবার -
তোমার সেভিং ব্লেডে আমার যখন আঙ্গুল কেটে গেলো
আমার ঐ ফোঁটা দুই রক্তে তোমার চোখে সমুদ্র ধারা বইতে থাকে...
রোজ রাতে তোমার বুকে না ঘুমালে আমার ঘুমই হতো না।
তোমার ও কাজ থেকে আসতে খুব দেরী হতো
তবু ও মা আমাকে কখনোই ঘুম পাড়াতে পারতো না...
তুমি এলেই আমার চোখে রাজ্যের ঘুম মিছিল করে
তোমার গভীর ওমে...
তুমি কতো সব রাজা -রাজকুমার আর রাজকন্যার গল্প বলে আমায় ঘুমপাড়াতে বাবা...
আমি ও তোমাকে গল্প বলতে চাইতাম...
আমার অসংলগ্ন অগোচালো কথায় তুমি আর মা
হেসে লুটি পুটি খেতে রোজ...
তুমি আমাকে কতো নামেই না ডাকতে -
সাত রাজার ধন
নয়ন মনি
বেবী রাহা
সোনা মনি
রাজকন্যা
রাহা মনি...
খেতাম না বলে কতো ডাক্তার কবিরাজ করে
কতো ফকির বৈদ্য করে
তোমার কষ্টের আয় নষ্ট করলে আমার জন্য বাবা...
কখনো আমার শিক্ষা চিকিৎসায় এতো টুকুন কার্পন্য করো নাই..
কখনো আমার কোন বায়না তুমি অপূর্ন রাখো নাই...
তুমি বলতে আমি থাকতে আমার মেয়ের কোন আশাই অপূর্ণ অবহেলায় থাকবে না...
আমার যা কিছু সবই যে তার..
মরলে সবাই নাকি তারা হয়ে যায়...
তুমি বলতে “ওসব ছেলে ভুলানো কথা..”
আমি ও যে আজ সেই ছেলে ভুলানো কথায়
ভুলেছি বাবা ...
অতোবড় আকাশটায় হন্য হয়ে খুঁজি
কোন তারাটা তুমি - বাবা ?
আমায় আঁধার রাতে ঘোর তমশায়
যে তারাটা আলো দেখায়
মনের মাঝে অভয় জাগায়
আলতো করে কাঁধটা ধরে
“ কোন ভয় নেই শব্দ করে”
সেই তারা কি তুমি বাবা?
পুঃন জন্মে তোমার আস্থা ছিলো না কভু
বলতে “ পুঃন জন্ম বলে কিছুই নেই”
আমার যে কেবল তাতেই বিশ্বাস করতে মন চায় ..বাবা !
তাতেই যদি ফিরে আসো কোন ছলে...
ছায়া হয়ে থাকবে সদা চলার পথে...
তুমি কি দোষ নিবে ..বাবা?
মরে গেলে কাঁদতে নেই
তুমি বলতে...
“ তাতে আল্লাহ নারাজ হয়”
তাও কি মন মানে - বাবা?
বাবা তুমি যেথায় থাকো জানি কোন স্বর্গে আছো...
আমরা কতো অসহায় আজ
স্বর্গ হতে ভাবতে পারো...
বাবা.. !
বাবা গো...!
ও বাবা...!
বড্ড কষ্ট হয়...তোমার কথা যখন মনে পড়ে..
যখন তোমার ছবি দেখি..
জানিতো-
''মরার পরে ছবি দেখা গুনার কাজ...''
তুমি কতো বলতে...
কি করবো বলো..
মনতো শাসন মানে না বাবা...!!
আজ তুমি নেই
যেন মাথার উপর ছাদ নেই
বট বৃক্ষের ছায়া নেই
ঝড় তুফানে ছাতা নেই...
শরীরের শিরদাঁড় যেন হারিয়ে গেছে বাবা..!!
তোমায় খুব ভালোবাসি বাবা
মা ও কি তোমায় কম ভালোবাসে
সেটা তোমার চেয়ে বেশি কে জানে ..বাবা...?
বাবা..
ও বাবা
তুমি কি সব ভুলে গেলে
মনেই যদি আছে তবে-
কেন গেলে
কেন গেলে
কেন
কেন
কেন গেলে...?
বাবা...
তুমি স্বর্গ সুখে থাকো ...
এই দোয়া আজ দু’হাত তুলে ।
ইতি তোমার কলিজা
রাজকন্যা
“রাহা মনি ’’