(ডিসেকশন ক্লাস রুমে দু’টি কংকাল: একটি দেহদানকারী ধনী ব্যক্তির আর অন্যটি বেওয়ারিশ দেহপসারিণীর)

ডিসেকশন রুমে দু’টি কংকালের জবান গেল খুলে
বলতে শুরু করলো তারা স্মৃতির পাতা তুলে।

একটি কংকাল বললো কেঁদে কি ছিল না আমার
কয়েকটি বড় কারখানা ছিল, ছিল বিশাল খামার
দাসদাসী আর লোকলস্করে চলতাম রাজার বেশে
নানান রকম রঙিন নেশায় ভাসতাম কল্পদেশে।
স্বার্থকে শুধু সম্মান করে সবাইকে করতাম হেলা
টাকার গরমে ক্ষমতার দম্ভে কেটেছে কতো না বেলা!
নিজ স্ত্রী, সন্তান সব কবেই গিয়েছে বখে
সুপথে আনতে পারিনি তাদের বিলাসী জীবনের ধকে।
মৌজ মাস্তিতে যৌবন শেষে বিদায় বেলার ধারে
হঠাৎ অন্তরে দিল ডাক, যেতে হবে ওপারে।
ওপারের চিন্তায় খুললাম যখন নিজের জীবন খাতা
খুলে দেখি পূণ্য কোথায়, পাপে ভরা প্রতিটি পাতা।
ভেবে দেখলাম আমার খাতায় পূণ্য তো আর নাই
পূণ্যের আশায় করলাম দান নিজের দেহটাই।
বিদ্যার্জনে যদি কখনো আমায় কাজে লাগে
মহান প্রভুর বিশেষ কৃপায় পূণ্য জুটবে ভাগে।

অন্য কংকাল তীব্র ঘৃণায় বললো অট্টহেসে
আমার দেহের ঝলকানিতে কাঁপন ধরতো দেশে।
নানান বয়সী মানুষের শয্যায় কাটিয়েছি রাত কতো
মিথ্যে প্রেমের অভিনয়ে হৃদয় করেছি ক্ষত।
খ্যাতির মোহে টাকার মোহে ছিলাম জ্ঞানশূন্য
মোহের তাপে ভুলেই ছিলাম জগতের সব পূণ্য।
রূপের ঝলকে দেহের ঝংকারে ছিলাম খ্যাতির চূড়ায়
দামী গাড়ী দামী ফ্ল্যাটে ফূর্তি যেন না ফুরায়!
খ্যাতির চূড়ায় থাকাকালে দেখলাম একদিন ভেবে
দেহের ঝলক ফুরিয়ে গেলে সবই যাবে ডেবে।
ছাই পাশ ভাবতে ভাবতে বিষাদ ধরলো চেপে
দেহ ছাড়া কি আছে আর, অন্তর উঠলো কেঁপে।
বিষাদের ছোঁয়ায় নিজের প্রতি উঠলো প্রবল রাগ
দেহের বিনিময়ে স্বপ্নবিলাসে পড়লো মরণ দাগ!
আত্মদ্বন্দ্বে সবার অজান্তে ঝাঁপ দিলাম নদীর জলে
মনের সকল ঘৃণা জ্বালা ডুবলো স্রোতের তলে।
অবশেষে বেওয়ারিশ হয়ে স্থান হলো এক মর্গে
কংকাল হয়ে পরিনত হয়েছি মেডিকেলের পাঠ্য বর্গে।
যখন নিজ কংকালের হাড় দেখি অবাক হয়ে
এই কি ছিলাম আমি, কেঁপে উঠি তীব্র ভয়ে।
কোথায় গেল দেহের ঝলক, কোথায় মোহের খেলা
এখন কেউ আর করে না স্মরণ, কি নিষ্ঠুর বিদায় বেলা।

কংকাল দু’টি একই সাথে বললো আর্ত স্বরে
জগৎ সংসার সবই মিছে কেউ নয় কারো তরে।
এমনি করে প্রতিদিনই ডিসেকশন ক্লাশ রুমে
হাজারো কংকালের গোপন কান্না ঘুমায় অতৃপ্ত ঘুমে।