আবহাওয়া অফিস থেকে
জারি করা হয়েছে
দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত।
উপকূল জুড়ে ধেয়ে আসছে
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিয়াজ।
যা ডুবিয়ে দেবে, ভাসিয়ে নেবে
আমার আজীবন কষ্টে গড়া স্বপ্নের বাসর।
স্বেচ্ছায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরে না গেলে
জোর করে সরিয়ে নেয়া হবে বলেও
দেয়া হয়েছে প্রবল হুংকার।
জীবনের ভয়ে, ত্রাসে নুয়ে
আমি ছাড়তে বাধ্য হই
আমার চিরজনমের সাধের সাজানো ঠিকানা।
ভালোবাসার সুতো ছিঁড়ে
প্রাণের সুরম্য প্রাসাদ ছেড়ে
উঠি গিয়ে জীর্ণশীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রের এক আঁধার খাঁচায়।
এরই এক নিভৃতকোণে মলিন বদনে বসে ভাবি-
ফেলে আসা জ্বোনাক-জ্বলা দিনগুলোর আকুলতার কথা।
আজীবন যাযাবর আমার এ নিঃস্ব জীবনে
হঠাৎ এসে ধরা দিল
সুখের ঘর বাধার এক বিরল সুযোগ।
আজন্ম স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
এই আমি কি পারি তা দু'পায়ে দলে যেতে?
তাই ঘোরলাগা এক স্বপ্নিল মুগ্ধতায়
দু’হাত অবার প্রসারিত করে
গ্রহণ করেছিলাম মায়ার সংসারের এই কুহক নিমন্ত্রণ।
আমার মনে পড়ে-
অনেক যত্নে সাজিয়েছিলাম
আচমকা প্রাপ্ত এ সুখের ঠিকানা।
উপকূলের স্নিগ্ধ হাওয়া সকাল-সাঁঝে
ভরিয়ে দিতো আমার মনের এ উতল ঘর,
বেলাভূমি উপচে উঠা উত্তাল ঊর্মিমালার পরশে
শিহরিত হতো যৌবনদীপ্ত কমনীয় দেহের প্রতিটি লোমকূপ।
নিশীরাতে চাঁদের আলোর বন্যায় যখন ভাসতো
আমার চপল আঙিনার চারিপাশ
আমি মোহাবিষ্ট হয়ে মজে যেতাম এই আলয়ের ছায়ায়।
কী এক নিবিড় ঘোরে হারিয়ে যেতাম
মায়ার গৃহের প্রতিটি কোণে উপকোণে।
আবেশের সেইক্ষণে নিজে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম
শত ঝড়েও কোনদিন যাবো না ছেড়ে
শত জনমের সাধনায় পাওয়া এ প্রিয় কানন।
এভাবে নিরলস বসে ভাবি আর প্রহর গুনি
কখন সাঙ্গ হবে এ নিদান ঘূর্ণির অনাহুত তাণ্ডবলীলা।
আমি আবার ফিরে যাবো
আমার প্রাণের প্রান্তরে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে হঠাৎ জানলাম
ঘূর্ণিঝড় রিয়াজের এ বিপদসংকেত ছিল
নিদারুণ এক মেকি-মধুর খেলা।
আসলে এ নামে কোন ঝড়ের অস্তিত্ব কভু ছিল না এ ধুলির ধরায়।
প্রবল আহত হয়েও পুনরায় ফিরে গিয়েছিলাম আপন গৃহের দ্বারে
পুলকিত মনে, কম্পিত হৃদয়ে।
কিন্তু হায়! কোথায় আমার সেই সাজানো বাগান!
কিছুই যে নেই আর বাকি!
হায়! সবকিছুই যে মোর হয়ে গেছে চুরি!
সেদিন ভীষণ এক অজানা অভিমান বাসা বেঁধেছিল এই অবুঝ বুকের গহীনে।
তাই, আর এ চরণ ফেলিনি প্রিয় সেই আলয়ের দাওয়ায়।
সেই থেকে আমি আবার ফিরে গেছি
আমার পিছু সেই যাযাবর জীবনের পানে।
আমার এ জীবনই যে বেশ ভালো।
যেখানে মিথ্যা পাওয়ার যেমন হাতছানি নেই
তেমনি নেই হারানোর যাতনাও।
শুধু মাঝে মাঝে সবকিছু কেমন শূন্য মনে হয়!
তবু, এ জীবনই দিয়েছে আমায় প্রীতির অকৃপণ পূর্ণতা।
শান্তিবাগ, ঢাকা।
১৪/০২/২০০২ খ্রি.
রাত ১১.৩৭টা