হেমন্তেরই নিশীথ রাতে
বসেছিলাম বাহিরপানে,
পল্লী মা তার রূপের ছটায়
মোহ জাগায় আমার প্রাণে।
মর্মতলে বাজিয়ে বাঁশি
কনকবরণ পূর্ণ শশী
উঠলো দিয়ে রাঙা হাসি
সুনীল অসীম গগনে।
মনোহরা রজতধারা
ছানাবড়া নয়নতারা
হৃদয়পাখি বাঁধনহারা
দুলে উঠে পবনে।
কাঁঠালিয়া নদীর জলে
পড়ছে যেন জ্যোৎস্না গলে
মায়াবী পরশ পলে পলে
বুলিয়ে দিচ্ছে চরণে।
হিমেল রাতের কুয়াশা-কনে
লুকোচুরি চাঁদের সনে
লাজুকমনে লুকোয় বনে
চোখ তুলে না শরমে।
মিলিয়ে সকল প্রাণে প্রাণ
কণ্ঠে ধরে সুমধুর তান
রমিজ কৃষাণ মাড়াচ্ছে ধান
হর্ষধারা বইছে তাদের মননে।
ছিন্ন ধান্যে ব্যজন দিয়ে
নির্মলিছে প্রাণের প্রিয়ে
আত্মজা তা ড্রামে নিয়ে
সেদ্ধ করছে উনুনে।
শিশুর দলে রজত-রাতে
দুষ্টুমি আর খেলায় মাতে
নিশী বাড়ে, ধায় যে প্রাতে
নিদ্রা তবু না পায় বুঝি চরমে।
ফিসফিসে আর লাজুক হাসে
কিশোরীদল স্বপ্নে ভাসে
এই বুঝি রাজপুত্তর আসে
নিয়ে যায় বেশরমে।
কোন সুদূরে শাপলা হাটে
গানের তালে পরাণ ফাটে
প্রণয়তরী ভিড়ল ঘাটে
কার বা নব চরণে।
হৃদয়-পাখি উঠল দুলে
চায় সে যেতে কোথা চলে
হারাতে চায় কোন আঁচলে
বাঁধ মানে না বারণে।
এ স্নিগ্ধ অনন্ত বসুধায়
এ চন্দ্রালোকে, হেমন্ত সূধায়
মরণ যদি ধায় পিছু ধায়
শিহরণ নিয়ে বিজনে।
হারিয়ে যেতে উম্মুখ আমি
ডাকে যদি এমন যামী
স্রষ্টাপানে ইহাই কামী
আমি সদা কায়মনে।।
(বারহাজারী, মেঘনা, কুমিল্লা
২২/১১/১৯৯০, রাত ৯.৪০টা)