আমাদের চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাইদের কে নিয়ে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করেছিলাম আমি। গ্রুপের নাম "Brother's group". সেই গ্রুপে আমাদের নানারকম যোগাযোগ, কথাবার্তা, দুষ্টুমি, মধুর ঝগড়াঝাঁটি অনেক কিছু হয়ে থাকে। টক ঝাল হাজারও কথোপকথন এর মধ্য হতে এক দিনের কথোপকথন নিম্নরূপঃ
মুন্না(মামাতো শ্যালক)ঃ রফিক ভাইয়ের কবিতার বই প্রকাশ হইলো, অথচ আমাদেরকে বললো না! এটা কি ঠিক হইলো? হারু ভাই, এ সম্পর্কে কিছু বলেন, প্লিজ।
হারু ভাই(মুন্নার দূর সম্পর্কের ভাই)ঃ কবি আর পাগল আপন ভাই। আমরা কোনো পাগল চাই কি?
মুন্নাঃ বুঝলাম না হারু ভাই। একটু ক্লিয়ার করে বলেন, প্লিজ।
হারু ভাইঃ কবির কাব্য, ছন্দ সাধারণ মানুষের বুঝ এর বাইরে। জীবনানন্দের ‘সোনালী ডানার চিল ঐ উড়ে মেঘের আকাশে।‘ বাস্তবে সোনালী ডানার চিল কোথায়? নজরুল, রবি ঠাকুর, মধূকবি আরও যারা ছিলো বা আছে, তাদের দর্শনগত বিষয় ক'জন আমরা ধরতে পারি? ভালবাসা-বিরহ, মিলন, প্রেম-অপ্রেমের দ্বন্দ্ব, সদা সংশয় আমরা কতটা বুঝি?
মুন্নাঃ রফিক ভাই, হারু ভাই তো জটিল যুক্তি ছেড়ে দিলো!
হারু ভাই কবি কে ডাইরেক্ট 'পাগল' বলার পরও এতক্ষণ মাথা ঠান্ডা রেখে শুধুই দেখছিলাম আমি। কিন্তু রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ সহ সবাইকে একসাথে অপমান করতে দেখে আর চুপ থাকা গেলো না! কাব্যিক সত্ত্বায় কিছুটা আঘাত লেগে মাথাটা একটু উষ্ণ হলো। তাই লিখলামঃ
বুঝিস যারে পূঁজিস তারে, না বুঝিলেই বিষ?
বোঝার বাইরেও সঠিক আছে, জানিস রে ‘খবিশ’!
ভাষাটা একটু শক্ত হলো বটে, কিন্তু কিছুই করার নেই আমার। কারণ হারু ভাই আমার সাথে শুরুটাই করলেন শক্ত ভাষা দিয়ে! যার সাথে আমার পূর্বে কখনও কথা হয় নি।
যাহোক, এবার হারু ভাই লিখলেনঃ
এক বাউল আর এক কবি মারা যাওয়ার পর বিচার চলছে। শাস্তি নির্ধারিত হলো। কিছু দিন পর বাউলের শাস্তি শেষ। সে আরামের জায়গা জান্নাত লাভ করলো। কবি সাহেবের মাইর আরও দিগুণ হলো। মাঝে মাঝে আরও বেশি হয়। কবি বললো- বাউলতো জান্নাতে, আমি কেন মাইর খাবো? দুনিয়াতে আমাকে সভ্য সমাজে কত সমাদর করা হতো। আর বাউল তো তুচ্ছ ছিল আমার কাছে। ফেরেশতা বললো- বাউল শুধু মঞ্চে নাচানাচি করতো। বাউল মরার পরে তার কিছু শাস্তির সাথে সাথে পাপ শেষ। তুই যা লিখেছিস তা কেউ না কেউ ছেঁপে বা পাঠ করে মাতলামি করে সুধীজন সাজে। যত দিন এই বেয়াদবি চলবে, তোর কপালে ততোদিন মাইর জুটবে।
*
হারু ভাই একটু বেশিই বলতে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হলো, তাই কবিকূলের সন্মান বাচাতে লিখতে বাধ্য হলামঃ
*
স্থান-কাল-পাত্র বুঝে, কথা বলিস ভাই।
নইলে কিন্তু বাউল সেজেও, পাবি না রে ঠাঁই!
ব্যক্তি আমি তুচ্ছ অতি, নেইকো তাতে ক্ষতি।
সবাই যদি ঢিল ছুঁড়ে, তোর হবে রে কোন গতি?
*
হারু ভাই আমার প্রথম দু-লাইনের উত্তরে লিখলেনঃ
আমি মানতে পারলাম না। গণিত,বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা বা অন্য কোনো বিষয় যদি কেউ না বোঝে তাহলে সেটা কি বিষ হবে? না বোঝার সাথে বিষের সম্পর্ক কিসের? বিষে বিষক্ষয় বা বিষময় যা খেলে বা পান করলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিষয় না বুঝলে বিষ হবে? গণিত,বিজ্ঞান বা কবিতা না বুঝে কেউ বিষময় হয়েছে! তা আমি মানি না।
*
হারু ভাই এখন নিজেই নিজের বিপরীতে! কিন্তু ছোটোখাটো চিটচ্যাটে মনে হলো, তিনি তার যুক্তি দাড় করাতে বদ্ধপরিকর। তাই একটু শক্ত জবাব প্রয়োজন মনে করে লিখলামঃ
যে বোঝে না; সে মানে না, বুঝলে তুই মানবি।
না-খান্দা; নালায়েক-অবুঝ, আর কতকাল র'বি?
কোথায় যে তুই বাজাইলি শিস! জায়গাটা কি চিনিস?
'কাণ্ডজ্ঞান' কাকে বলে, তুই কি তাহা জানিস?
অসময়ে শিস বাঁজাস তোর, আক্কল রে সেলাম!
তোর ডিরেক্ট ব্যবহার দেখে, সত্যিই অবাক হলাম!
*
এবার হারু ভাই, কবিকে পাগল বানানোর যুক্তি টানা বন্ধ করলো। আমিও বুঝতে পারলাম-একেই বলে "Tit for tat".
অবশেষে হারু ভাইকে উদ্দেশ্য করে নিম্নরুপ একটা কবিতা সাজালাম-
কাণ্ডজ্ঞান
__/রফিকুল ইসলাম

মানব স্বভাব! নাইরে জবাব! হোক সে নারী-নর।
জিতে গেলে দেয় বাহবা, হারলে দূরে সর!
পড়লে গলে জয়ের মালা, কেউ থাকে না পর।
হেরে গেলে তখন বলে , দূরে গিয়ে মর!
বুঝিস যারে পূঁজিস তারে, না বুঝিলেই বিষ!
বোঝার বাইরেও সঠিক আছে, জানিস রে ‘খবিশ!’

স্থান-কাল-পাত্র বুঝে, কথা বলিস ভাই।
নইলে কিন্তু বাউল সেজেও, পাবি না রে ঠাঁই!
ব্যক্তি আমি তুচ্ছ অতি, নেইকো তাতে ক্ষতি।
সবাই যদি ঢিল ছোঁড়ে, তোর হবে রে কোন গতি?

যে বুঝে না; সে মানে না, বুঝলে তুই মানবি।
না-খান্দা; নালায়েক-অবুঝ, আর কতকাল র'বি?
কোথায় যে তুই বাজাইলি শিস! জায়গাটা কি চিনিস?
'কাণ্ডজ্ঞান' কাকে বলে, তুই কি তাহা জানিস?
অসময়ে শিস বাজাস তোর, আক্কল রে সালাম!
ডিরেক্ট তোর এই ব্যবহারে, সত্যিই অবাক হলাম!
®
[স্বরবৃত্তঃ ৪+৪+৪+১/২]
১৬/৩/২০১৭
দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি।
*
বিঃদ্রঃ হারু ভাই  দীর্ঘ দিন ধরে "Brother's group" এ কোনো প্রকার মন্তব্য করা থেকে বিরত আছেন। সরি,  হারু ভাই। তোর অবিবেচকের মত মন্তব্যের কারণে কিছু শক্ত কথাই বলতে হলো।)