সেথায় কপোত-বধূ লতার আড়ালে
দিবানিশি গাহে শুধু প্রেমের বিলাপ ।
নবীন চাঁদের করে একটি হরিণী
আমাদের গৃহদ্বারে আরামে ঘুমায় ।
তার শান্ত নিদ্রাকালে নিশ্বাস পতনে
প্রহর গণিতে পারি স্তব্ধ রজনীর ।
সুখের আবাসে সেই কাটাব জীবন ,
দুজনে উঠিব মোরা , দুজনে বসিব ,
নীল আকাশের নীচে ভ্রমিব দুজনে ,
বেড়াইব মাঠে মাঠে উঠিব পর্বতে
সুনীল আকাশ যেথা পড়েছে নামিয়া ।
অথবা দাঁড়াব মোরা সমুদ্রের তটে ,
উপলমণ্ডিত সেই স্নিগ্ধ উপকূল
তরঙ্গের চুম্বনেতে উচছ্বাসে মাতিয়া
থর থর কাঁপে আর জ্বল ' জ্বল ' জ্বলে!
যত সুখ আছে সেথা আমাদের হবে ,
আমরা দুজনে সেথা হব দুজনের ,
অবশেষে বিজন সে দ্বীপের মাঝারে
ভালোবাসা , বেঁচে থাকা , এক হ ' য়ে যাবে ।
মধ্যাহ্নে যাইব মোরা পর্বতগুহায় ,
সে প্রাচীন শৈল-গুহা স্নেহের আদরে
অবসান রজনীর মৃদু জোছনারে
রেখেছে পাষাণ কোলে ঘুম পাড়াইয়া ।
প্রচ্ছন্ন আঁধারে সেথা ঘুম আসি ধীরে
হয়তো হরিবে তোর নয়নের আভা ।
সে ঘুম অলস প্রেমে শিশিরের মতো ।
সে ঘুম নিভায়ে রাখে চুম্বন-অনল
আবার নূতন করি জ্বালাবার তরে ।
অথবা বিরলে সেথা কথা কব মোরা ,
কহিতে কহিতে কথা , হৃদয়ের ভাব
এমন মধুর স্বরে গাহিয়া উঠিবে
আর আমাদের মুখে কথা ফুটিবে না ।
মনের সে ভাবগুলি কথায় মরিয়া
আমাদের চোখে চোখে বাঁচিয়া উঠিবে!
চোখের সে কথাগুলি বাক্যহীন মনে
ঢালিবে অজস্র স্রোতে নীরব সংগীত ,
মিলিবেক চৌদিকের নীরবতা সনে ।
মিশিবেক আমাদের নিশ্বাসে নিশ্বাসে ।
আমাদের দুই হৃদি নাচিতে থাকিবে ,
শোণিত বহিবে বেগে দোঁহার শিরায় ।
মোদের অধর দুটি কথা ভুলি গিয়া
ক ' বে শুধু উচছ্বসিত চুম্বনের ভাষা ।
দুজনে দুজন আর রব না আমরা ,
এক হয়ে যাব মোরা দুইটি শরীরে ।
দুইটি শরীর ? আহা তাও কেন হল ?
যেমন দুইটি উল্কা জ্বলন্ত শরীর ,
ক্রমশ দেহের শিখা করিয়া বিস্তার
স্পর্শ করে , মিশে যায় , এক দেহ ধরে ,
চিরকাল জ্বলে তবু ভস্ম নাহি হয় ,
দুজনেরে গ্রাস করি দোঁহে বেঁচে থাকে ;
মোদের যমক-হৃদে একই বাসনা ,
দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে বাড়িয়া বাড়িয়া ,
তেমনি মিলিয়া যাবে অনন্ত মিলন ।
এক আশা রবে শুধু দুইটি ইচছার
এই ইচছা রবে শুধু দুইটি হৃদয়ে ,
একই জীবন আর একই মরণ ,
একই স্বরগ আর একই নরক ,
এক অমরতা কিংবা একই নির্বাণ ,
হায় হায় এ কী হল এ কী হল মোর!
আমার হৃদয় চায় উধাও উড়িয়া
প্রেমের সুদূর রাজ্যে করিতে ভ্রমণ ,
কিন্তু গুরুভার এই মরতের ভাষা
চরণে বেঁধেছে তার লোহার শৃঙ্খল ।
নামি বুঝি , পড়ি বুঝি , মরি বুঝি মরি ।
— Shelley (অনূদিত কবিতা)