পথের ধারে অশথতলে
          মেয়েটি খেলা করে ;
আপন-মনে আপনি আছে
          সারাটি দিন ধরে ।
উপর-পানে আকাশ শুধু ,
          সমুখ-পানে মাঠ ,
শরৎকালে রোদ পড়েছে ,
          মধুর পথঘাট ।
দুটি-একটি পথিক চলে ,
          গল্প করে , হাসে ।
লজ্জাবতী বধূটি গেল
          ছায়াটি নিয়ে পাশে ।
আকাশ-ঘেরা মাঠের ধারে
          বিশাল খেলাঘরে
একটি মেয়ে আপন-মনে
          কতই খেলা করে ।
  
  
মাথার'পরে ছায়া পড়েছে ,
          রোদ পড়েছে কোলে ,
পায়ের কাছে একটি লতা
          বাতাস পেয়ে দোলে ।
মাঠের থেকে বাছুর আসে ,
          দেখে নূতন লোক ,
ঘাড় বেঁকিয়ে চেয়ে থাকে
          ড্যাবা ড্যাবা চোখ ।
কাঠবিড়ালি উসুখুসু
          আশেপাশে ছোটে ,
শব্দ পেলে লেজটি তুলে
          চমক খেয়ে ওঠে ।
মেয়েটি তাই চেয়ে দেখে
          কত যে সাধ যায় —
কোমল গায়ে হাত বুলায়ে
          চুমো খেতে চায় !
  
সাধ যেতেছে কাঠবিড়ালি
          তুলে নিয়ে বুকে ,
ভেঙে ভেঙে টুকুটুকু
          খাবার দেবে মুখে ।
মিষ্টি নামে ডাকবে তারে
          গালের কাছে রেখে ,
বুকের মধ্যে রেখে দেবে
          আঁচল দিয়ে ঢেকে ।
‘‘ আয় আয়''' ডাকে সে তাই —
          করুণ স্বরে কয় ,
‘‘ আমি কিছু বলব না তো
          আমায় কেন ভয় ! ''
মাথা তুলে চেয়ে থাকে
          উঁচু ডালের পানে —
কাঠবিড়ালি ছুটে পালায়
          ব্যথা সে পায় প্রাণে ।
  
  
রাখাল ছেলের বাঁশি বাজে
          সুদূর তরুছায় ,
খেলতে খেলতে মেয়েটি তাই
          খেলা ভুলে যায় ।
তরুর মূলে মাথা রেখে
          চেয়ে থাকে পথে ,
না জানি কোন্ পরীর দেশে
          ধায় সে মনোরথে ।
একলা কোথায় ঘুরে বেড়ায়
          মায়াদ্বীপে গিয়ে —
হেনকালে চাষী আসে
          দুটি গোরু নিয়ে ।
শব্দ শুনে কেঁপে ওঠে ,
          চমক ভেঙে চায় ।
আঁখি হতে মিলায় মায়া ,
          স্বপন টুটে যায় ।

  (কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)