ওই   যে রাতের তারা
            জানিস কি , মা , কারা ?
সারাটিখন ঘুম না জানে
চেয়ে থাকে মাটির পানে
          যেন কেমনধারা!
আমার যেমন নেইকো ডানা ,
আকাশ - পানে উড়তে মানা ,
          মনটা কেমন করে ,
তেমনি ওদের পা নেই বলে
পারে না যে আসতে চলে
          এই পৃথিবীর ‘পরে ।
  
  
সকালে যে নদীর বাঁকে
জল নিতে যাস কলসী কাঁখে
          সজনেতলার ঘাটে ,
সেথায় ওদের আকাশ থেকে
আপন ছায়া দেখে দেখে
          সারা পহর কাটে ।
ভাবে ওরা চেয়ে চেয়ে
' হতেম যদি গাঁয়ের মেয়ে
           তবে সকাল - সাঁজে
কলসিখানি ধরে বুকে
সাঁতরে নিতেম মনের সুখে
          ভরা নদীর মাঝে ' ।
  
  
আর আমাদের ছাতের কোণে
তাকায় , যেথা গভীর বনে
          রাক্ষসদের ঘরে
রাজকন্যা ঘুমিয়ে থাকে ,
সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তাকে
          জাগাই শয্যা‘পরে ।
  ভাবে ওরা , আকাশ ফেলে
হত যদি তোমার ছেলে ,
          এইখানে এই ছাতে
দিন কাটাত খেলায় খেলায়
তার পরে সেই রাতের বেলায়
          ঘুমোত তোর সাথে ।
  
  
যেদিন আমি নিষুত রাতে
হঠাৎ উঠি বিছানাতে
          স্বপন থেকে জেগে
জানলা দিয়ে দেখি চেয়ে
তারাগুলি আকাশ ছেয়ে
          ঝাপসা আছে মেঘে ।
বসে বসে ক্ষণে ক্ষণে
সেদিন আমার হয় যে মনে
          ওদের স্বপ্ন বলে ।
অন্ধকারের ঘুম লাগে যেই
ওরা আসে সেই পহরেই ,
          ভোরবেলা যায় চলে ।
আঁধার রাতি অন্ধ ও যে ,
দেখতে না পায় , আলো খোঁজে ,
          সবই হারিয়ে ফেলে ।
তাই আকাশে মাদুর পেতে
সমস্তখন স্বপনেতে
          দেখা - দেখা খেলে ।

(শিশু ভোলানাথ কাব্যগ্রন্থ)