খোকা মাকে শুধায় ডেকে —
       ‘ এলেম আমি কোথা থেকে ,
  কোন্‌খানে তুই কুড়িয়ে পেলি আমারে । '
                    মা শুনে কয় হেসে কেঁদে
                 খোকারে তার বুকে বেঁধে —
  ‘ ইচ্ছা হয়ে ছিলি মনের মাঝারে ।
  
                   ছিলি আমার পুতুল - খেলায় ,
                   প্রভাতে শিবপূজার বেলায়
  তোরে আমি ভেঙেছি আর গড়েছি ।
                 তুই আমার ঠাকুরের সনে
                   ছিলি পূজার সিংহাসনে ,
          তাঁরি পূজায় তোমার পূজা করেছি ।
  
                 আমার চিরকালের আশায় ,
                 আমার সকল ভালোবাসায় ,
          আমার মায়ের দিদিমায়ের পরানে —
                 পুরানো এই মোদের ঘরে
                 গৃহদেবীর কোলের ‘পরে
               যে লুকিয়ে ছিলি কে জানে ।
  
                    যৌবনেতে যখন হিয়া
                        উঠেছিল প্রস্ফুটিয়া ,
           তুই ছিলি সৌরভের মতো মিলায়ে ,
                  আমার তরুণ অঙ্গে অঙ্গে
                  জড়িয়ে ছিলি সঙ্গে সঙ্গে
            তোর লাবণ্য কোমলতা বিলায়ে ।
  
                  সব দেবতার আদরের ধন
                   নিত্যকালের তুই পুরাতন ,
             তুই প্রভাতের আলোর সমবয়সী —
                     তুই জগতের স্বপ্ন হতে
                    এসেছিস আনন্দ - স্রোতে
               নূতন হয়ে আমার বুকে বিলসি ।
  
                      নির্নিমেষে তোমায় হেরে
                       তোর রহস্য বুঝি নে রে ,
              সবার ছিলি আমার হলি কেমনে ।
                        ওই দেহে এই দেহ চুমি
                        মায়ের খোকা হয়ে তুমি
                মধুর হেসে দেখা দিলে ভুবনে ।
  
                    হারাই হারাই ভয়ে গো তাই
                      বুকে চেপে রাখতে যে চাই ,
                  কেঁদে মরি একটু সরে দাঁড়ালে ।
                      জানি না কোন্‌ মায়ায় ফেঁদে
                           বিশ্বের ধন রাখব বেঁধে
               আমার এ ক্ষীণ বাহু দুটির আড়ালে । '

(শিশু কাব্যগ্রন্থ)