যেমন আছ তেমনি এসো, আর কোরো না সাজ।
      বেণী নাহয় এলিয়ে রবে,        সিঁথি নাহয় বাঁকা হবে,
             নাই-বা হল পত্রলেখায় সকল কারুকাজ।
           কাঁচল যদি শিথিল থাকে নাইকো তাহে লাজ।
          যেমন আছ তেমনি এসো, আর করো না সাজ।।

              এসো দ্রুত চরণদুটি তৃণের 'পরে ফেলে।
   ভয় কোরো না - অলক্তরাগ        মোছে যদি মুছিয়া যাক,
               নূপুর যদি খুলে পড়ে নাহয় রেখে এলে।
           খেদ কোরো না মালা হতে মুক্তা খসে গেলে।
              এসো দ্রুত চরণদুটি তৃণের 'পরে ফেলে।

          হেরো গো ওই আঁধার হল, আকাশ ঢাকে মেঘে।
        ও পার হতে দলে দলে        বকের শ্রেণী উড়ে চলে,
             থেকে থেকে শূন্য মাঠে বাতাস ওঠে জেগে।
             ওই রে গ্রামের গোষ্ঠমুখে ধেনুরা ধায় বেগে।
         হেরো গো ওই আঁধার হল, আকাশ ঢাকে মেঘে।।

            প্রদীপখানি নিবে যাবে, মিথ্যা কেন জ্বালো?
কে দেখতে পায় চোখের কাছে        কাজল আছে কি না আছে,
             তরল তব সজল দিঠি মেঘের চেয়ে কালো।
           আঁখির পাতা যেমন আছে এমনি থাকা ভালো।
           কাজল দিতে প্রদীপখানি মিথ্যা কেন জ্বালো?।

          এসো হেসে সহজ বেশে, আর কোরো না সাজ।
     গাঁথা যদি না হয় মালা        ক্ষতি তাহে নাই গো বালা,
             ভূষণ যদি না হয় সারা ভূষণে নাই কাজ।
             মেঘ মগন পূর্বগগন, বেলা নাই রে আজ।
           এসো হেসে সহজ বেশে, নাই-বা হল সাজ।।



শিলাইদহ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৭
(কাব্যগ্রন্থঃ সঞ্চয়িতা)