দিনের আলো নিবে এল সুয্যি ডোবে ডোবে ।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে ।
মেঘের উপর মেঘ করেছে, রঙের উপর রঙ ।
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা বাজল ঠং ঠং ।
ও পারেতে বৃষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা ।
এ পারেতে মেঘের মাথায় একশো মানিক জ্বালা ।
বাদলা হাওয়ায় মনে পরে ছেলেবেলার গান--
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা--
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়, কেউ করে না মানা ।
কত নতুন ফুলের বনে বৃষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন কেহ্লা কোথায় ভেবে পায়!
মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে,
কত দিনের লুকোচুরি কত ঘরের কোণে!
তারি সঙ্গে মনে পরে ছেলেবেলার গান--
বিষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
মনে পরে ঘরটি আলো, মায়ের হাসিমুখ--
মনে পরে মেঘের ডাকে গুরুগুরু বুক ।
বিছানাটির একটি পাশে ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের 'পরে দৌরাত্মি সে না যায় লেখাজোকা ।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে করে দাপাদাপি--
বাইরেতে মেঘ ডেকে উঠে, সৃষ্টি উঠে কাঁপি ।
মনে পরে মায়ের মুখে শুনেছিলেম গান-
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।
মনে পরে সুয়োরাণী দুয়োরাণীর কথা,
মনে পরে অভিমানী কঙ্কাবতীর ব্যথা ।
মনে পরে ঘরের কোণে মিটিমিটি আলো,
চারি দিকের দেয়াল জুড়ে ছায়া কালো কালো ।
বাইরে কেবল জলের শব্দ ঝু--প্ ঝু--প্ ঝু প
দস্যি ছেলে গল্প শোনে, একেবারে চুপ ।
তারি সঙ্গে মনে পরে মেঘলা দিনের গান--
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
কবে বৃষ্টি পড়েছিল, বান এল সে কোথা--
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল কবেকার সে কথা!
সেদিনও কি এমনি তরো মেঘের ঘটাখানা!
থেকে থেকে বাজ-বিজুলি দিচ্ছিল কি হানা!
তিন কন্যে বিয়ে করে কী হল তার শেষে!
না জানি কোন্ নদীর ধারে, না জানি কোন্ দেশে,
কোন্ ছেলেরে ঘুম পাড়াতে কে গাহিল গান--
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।