আমি      নিশি - নিশি কত রচিব শয়ন
                   আকুলনয়ন রে !
     কত       নিতি - নিতি বনে করিব যতনে
                   কুসুমচয়ন রে !
     কত       শারদ যামিনী হইবে বিফল ,
                   বসন্ত যাবে চলিয়া !
     কত       উদিবে তপন আশার স্বপন ,
                    প্রভাতে যাইবে ছলিয়া !
     এই       যৌবন কত রাখিব বাঁধিয়া ,
                   মরিব কাঁদিয়া রে !
     সেই      চরণ পাইলে মরণ মাগিব
                   সাধিয়া সাধিয়া রে ।
     আমি      কার পথ চাহি এ জনম বাহি ,
                   কার দরশন যাচি রে !
     যেন      আসিবে বলিয়া কে গেছে চলিয়া ,
                   তাই আমি বসে আছি রে ।
     তাই      মালাটি   গাঁথিয়া পরেছি মাথায়
                   নীলবাসে তনু ঢাকিয়া ,
     তাই      বিজন আলয়ে প্রদীপ জ্বালায়ে
                   একেলা রয়েছি জাগিয়া ।
     ওগো     তাই কত নিশি চাঁদ ওঠে হাসি ,
                   তাই কেঁদে যায় প্রভাতে ।
     ওগো     তাই ফুলবনে মধুসমীরণে
                   ফুটে ফুল কত শোভাতে !
  
  
     ওই       বাঁশিস্বর তার আসে বার বার ,
                   সেই   শুধু কেন আসে না !
     এই       হৃদয় - আসন শূন্য যে থাকে ,
                   কেঁদে মরে শুধু বাসনা ।
     মিছে     পরশিয়া কায় বায়ু বহে যায় ,
                   বহে যমুনার লহরী ,
     কেন      কুহু কুহু পিক কুহরিয়া ওঠে —
                    যামিনী যে ওঠে শিহরি ।
     ওগো     যদি নিশিশেষে আসে হেসে হেসে ,
                    মোর হাসি আর রবে কি !
     এই       জাগরণে ক্ষীণ বদন মলিন
                   আমারে হেরিয়া কবে কী !
     আমি      সারা রজনীর গাঁথা ফুলমালা
                   প্রভাতে চরণে ঝরিব ,
     ওগো     আছে সুশীতল যমুনার জল —
                   দেখে তারে আমি মরিব ।

(কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থ)