একটি প্রিয় কবিতা নিয়ে
রমেন আচার্য

    বাংলাদেশের কবি ও কবিতার সঙ্গে আমার যে ঘনিষ্ট  সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি, তার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে করি। ‘উপাংশু’ সম্পাদক বাংলাদেশের কবিতা নিয়ে লিখতে বলায় রণজিৎ দাশ ও সাজ্জাদ শরিফ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বইটির শেষ থেকে পাতা ওলটাতে গিয়ে হঠাৎ একটা কবিতায় জড়িয়ে গেলাম। কবিতার মধ্যে যেন একটা জীবনানন্দীয় সৌরভে নিমজ্জিত হচ্ছিলাম, সেই অনুভূতি প্রকাশের চেষ্টা করবো। তার আগে কবিতাটি আবার পড়া যাক –

মানুষের মানচিত্র: ৭  
বনের হরিণ নয়, বাঘ নয়, এতো রাতে চৌকিদার চলে।
হোই কে যায়? কে যায়? গঞ্জের বাতাস ফেরে হিম, নিরুত্তর।
কে যায়? কে যাবে আর! দশমির অন্ধকার একা একা যায়,
একা একা চৌকিদার আঁধারের বাঁকে বাঁকে নিজেকে তাড়ায়।

নিজেকেই প্রশ্ন করে কে যায়? কী নাম তোর? কোথায় থাকিস?
কী তুই পাহারা দিবি, জীবনের কতোটুকু আগলাবি তুই!
ছিঁচকে-সিঁধেল চোর – আর যেই চোর থাকে দিনের আলোয়?
আর যেই চোর থাকে দেহের ভেতর, শরীরের অন্ধকারে?

রাতের আঁধারে খুঁজে  তারে তুই পাবি? চৌকিদার, পাবি তারে?
যে চোর পাহারা দেয়, পাহারার নামে করে ভয়ানক চুরি,
চুরি করে মানুষের ঘিলু-মাংস-রক্ত-হাড় বুকের বাসনা,
তারে পাবি, যে-তোর জীবন থেকে চুরি করে পূর্ণিমার রাত?

যে তোর জীবন থেকে চুরি করে পয়মন্ত দিনের খোয়াব,
যে-তোর শিশুর স্বাস্থ্য, দুধভাত, চুরি করে বোনের সিঁদুর,
তারে পাবি, যে-তোর গতর থেকে খুলে নেয় মানব-শরীর?
কিসের পাহারা তবে? কেন তবে রাতভর রাতকে তাড়ানো?

অন্ধকার পৃথিবীতে শুধু কিছু তারা জ্বলে, দূরের নক্ষত্র।
ঝিঁঝিঁ ডাকে। পাটের পচানি থেকে গন্ধ আনে রাতের বাতাস।
পুরোনো কবর খুঁড়ে শেয়ালেরা বের করে আধ-পঁচা লাশ –
হোই কে যায়? কে যায়? পৃথিবীর অন্ধকারে চৌকিদার চলে।

    ‘জীবনানন্দীয় সৌরভ’ কথাটা কি অসতর্ক ভাবে এসে গেল কলমে! দুই কবিরই জন্ম বরিশালে, এই মিলটুকু ছাড়া দু’জন কবির মধ্যে আর কী মিল আছে? লেখার কোথায় পেলাম সেই মিল? তাহলে তো দু’জনের


মাঝখানে আবার রবীন্দ্রনাথকেই ডেকে আনতে হয়। রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দকে চিহ্নিত করতে গিয়ে তাঁর কবিতাকে বলেছিলেন ‘চিত্ররূপময়’, বলেছিলেন  ‘তোমার লেখায় ---- তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।’ এখন দেখা যাক, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র কবিতাটির কোথায় এই ‘চিত্ররূপময়তা’ আর কালো কালো অক্ষরগুলির দিকে তাকিয়ে আনন্দ পাওয়াটাই বা কেমন!
    ‘হোই কে যায়? কে যায়? গঞ্জের বাতাস ফেরে হিম, নিরুত্তর। / কে যায়? কে যাবে আর! দশমির অন্ধকার একা একা যায়,’  -- এই কথাগুলিই তো শব্দ দিয়ে আঁকা ছবি। ‘বাতাস’ ও ‘অন্ধকার’ দেহহীন হলেও যেন দুটি অবয়ব নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। যে ভাবে জীবনানন্দের কবিতায় ‘যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে / চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ – কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে’ – এখানে মানবিক বোধ নিয়ে চাঁদও একটি চরিত্র, যে যেতে যেতে চুপ করে ফসলহীন মাঠের শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দৃশ্যগুলি কবি এঁকেছেন শব্দ দিয়ে, তাই পঙ্‌ক্তিগুলি ‘চিত্ররূপময়’, ফলে আমরা যখন কালো কালো অক্ষরগুলির দিকে তাকাই, তখন দেখি দেহহীন বাতাস ও অন্ধকার দেহ ধারন করে চরিত্র হয়ে উঠেছে। দেখি তাদের হেঁটে যাওয়া, আর মনশ্চক্ষে এই দৃশ্য দেখে ‘তাকিয়ে দেখার আনন্দ’ পাই। মনে হয় চৌকিদার একটু পা চালিয়ে গেলে নিরুত্তর হিম শীতল বাতাস ও একা একা হেঁটে যাওয়া ঘন অন্ধকারের পেছনে এসে ওদের কাধে হাত রেখে বলতে পারবে – কোথায় যাচ্ছো তোমরা? অথবা চৌকিদারের হাঁক শুনে বাতাস ও অন্ধকার নিজেরাই পেছন ফিরে তাকাবে। এ যেন রূপকথার জগৎ বা জাদু বাস্তবতা! কবিতার শিল্পকলায় এটা যে কত বড় প্রাপ্তি তা সমালোচকের কলমে প্রকাশ্যে আসেনি। জীবনানন্দের কবিতার অন্দরমহলে প্রবেশের এই মূল্যবান ও জরুরী চাবিটি কি পাঠকও হারিয়ে ফেলেছেন? না হলে তো এতোদিনে জীবনানন্দ ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র মতো কবিদের এরকম শিল্পকর্ম আমাদের আরো বেশি প্রিয় হয়ে উঠতো।
    কবিতার শিরোনামে আছে সাধারণ দুটো শব্দ –মানুষ ও মানচিত্র। কিন্তু শব্দ দুটি যুক্ত করে –‘মানুষের মানচিত্র’ হয়ে উঠেছে গভীর অর্থবহ। আমাদের ভিতরে শৈশব, যৌবন, বর্তমানের স্বপ্ন ও স্মৃতি নানা রঙ ও রেখায় আঁকা আছে এই মানচিত্রে। এবার আমরা কবির নির্মাণশিল্পের দিকে তাকাবো। আমরা জানি যে, চৌকিদার সাধারণত পাহারা দেয় লোকালয়ে। তাহলে কবি কেন লিখলেন – ‘বনের হরিণ নয়, বাঘ নয়, এতো রাতে চৌকিদার চলে।’ হঠাৎ হরিণ, বাঘ ও বনের কথা এখানে কেন টেনে আনলেন? এটা যদি কবির অসতর্কতায় হয়, তাহলে কেন দু-দু’বার ‘নয়’ বলার পরেও কেন মুদ্রিত কবিতায় যুক্ত রাখলেন যা ‘নয়’ তাকে? কারণ গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ রাত্রি নয়, কবিতার ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল অরণ্যের ঘন অন্ধকারে বাঘের খাদ্য হিসেবে অসহায় নিরীহ হরিণের বিপন্নতার। কারণ দু’বার ‘নয়’ বলার পরেও অবচেতনায় পাঠকের মনে থেকে যায় বাঘ, হরিণ ও রহস্যময় অন্ধকার অরণ্যের ছবি। অর্থাৎ খাদ্য ও খাদকের মিলিত এই পশ্চাৎপট প্রয়োজন ছিল ‘মানুষের মানচিত্র’ নামক কবিতাটির জন্য।
    এই কবিতা শুধু পাঠককে রূপে ভোলাতে চায়নি, জীবনের রহস্যময় জটগুলি ও না-বোঝা অন্ধকারগুলিতে বোধের আলো ফেলে জীবনের ধ্বংসাত্মক জীবাণুগুলিকে শনাক্ত করতে চেয়েছে। তাই চোর তাড়াতে এসে চৌকিদার ‘আঁধারের বাঁকে বাঁকে নিজেকে তাড়ায়।’ মানুষের ভিতরে যে বিপজ্জনক আঁধারের বাঁক নিজেরই অজ্ঞাতে ভয়ঙ্কর ও রহস্যময় হয়ে আত্মগোপন করে থাকে, তাই চৌকিদার  নিজেকেও বিশ্বাস করে না, নিজের স্বরূপ জানতে নিজেকেই প্রশ্ন করে সে – ‘কী নাম তোর? কোথায় থাকিস?’ তাহলে কি তার নিজের ভিতরে এমন কেউ আছে, যে লোভী ও ভয়ঙ্কর? রক্ষক কি তাহলে এভাবেই ভক্ষক হয়ে ওঠে? একটা অবিশ্বাস ও রহস্যময়তা জড়িয়ে আছে কবিতার সর্বাঙ্গে। তাহলে আসল চোরটি কে? ‘রাতের আঁধারে খুঁজে তারে তুই পাবি? চৌকিদার, পাবি তারে? / যে চোর পাহারা দেয়, পাহারার নামে করে ভয়ানক চুরি,’ – এই ধাঁধাঁর উত্তর জানা নেই। সে কি সমাজ-সংসারে কেউ-কেটা সেজে থাকা কেউ, নাকি অচেনা-অজানা ‘নিয়তি’, ‘যে-তোর জীবন থেকে চুরি করে পূর্ণিমার রাত’ – এটা কি এমন কোনো অলৌকিক হাত? না, নিয়তি নয়। সে এমন চোর, যে দিনের আলোয় সর্বসমক্ষে  আছে।  ‘কী  তুই  পাহারা দিবি, জীবনের কতোটুকু আগলাবি তুই! / ছিঁচকে-সিঁধেল চোর – আর যেই  


চোর থাকে দিনের আলোয়? / আর যেই চোর থাকে দেহের ভেতর, শরীরের অন্ধকারে?’ বারবার নানা ভাবে ফিরে এসেছে এরকম প্রশ্ন ও সংশয়। কথাগুলি এসেছে প্রসারণগুণ নিয়ে। ভালো কবিতায় থাকে এমন এক একটা শব্দ, যার ভিতরে থাকে না-বলা কথার বীজ – সৃজনশীল পাঠকের কল্পনায় প্রসারিত হবে বলে। লেখাটি সংক্ষিপ্ত করার প্রয়োজনে আমরা এবার সে রকম কিছু শব্দের কাছে যেতে পারি।
    একটি সরল বাক্য, যা সুন্দর অর্থ ধারণ করে আছে – ‘তারে পাবি, যে-তোর জীবন থেকে চুরি করে পূর্ণিমার রাত?’ ধনী বা দরিদ্র সকলের ভিতরেই থাকে কোনো স্বপ্ন, তার ব্যক্তিগত মাধুর্যমণ্ডিত ‘পূর্ণিমার রাত’। আর একটি বাক্য –‘যে-তোর গতর থেকে খুলে নেয় মানব-শরীর?’ এ আবার কী রকম কথা! আসলে ‘মানুষ’ ও ‘মানব’ শব্দ দুটি অভিধানে সমমর্যাদায় পাশাপাশি অবস্থান করলেও, আমরা দুটি শব্দকে একই ভাবে দেখি না। পথেঘাটে চলাফেরায় প্রায়ই ধাক্কা লাগে মানুষের ভিড়ে, মানুষের সঙ্গে। কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে কোথাও কোনো মানব বা
মহামানবের দেখা পাই না। তবু তো আমরা জানি – ‘মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়’। এই কবিতায় এসেছে ‘মানব-শরীর’, যা আসলে মনুষ্যত্বের মহিমায় স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল। শরীর থেকে তা খুলে নিলে পড়ে থাকে এক খণ্ড বোধহীন পাথর। আবার পড়ি – ‘কেন তবে রাতভর রাতকে তাড়ানো?’ ‘রাতকে তাড়ানো’ মানে কী? অপরাধ ও অন্যায়কে আড়াল করে যে কালো রাত্রি, সে অন্ধকার তো দিনের আলোতেও। চোর কি শুধু রাত্রির অন্ধকারে? সে তো আছে দিনের আলোয় সর্বসমক্ষে। তবু তাকে চিনি না। কারণ দিনের আলোয় যে সুভদ্র, সহাস্য, সম্ভ্রান্ত মানুষ, তার এই রূপের পেছনে শরীরের গভীর জটিল অন্তপুরের অন্ধকারে সেই লুকিয়ে রাখে তার আসল স্বরূপ, আসলে সেই তো চোর। চৌকিদারের সাধ্য কি তাকে খুঁজে পায়! ওই সুভদ্র মানুষকে সম্ভ্রমে শ্রদ্ধায় ঘিরে থেকে সমাজরক্ষক ভাবে যে সব মানুষ, তারাও কি খুঁজে পায় ছদ্মবেশী তস্করকে, ‘যে তোর জীবন থেকে চুরি করে পয়মন্ত দিনের খোয়াব, / যে-তোর শিশুর স্বাস্থ্য, দুধভাত, চুরি করে বোনের সিঁদুর,’ বা ‘চুরি করে মানুষের ঘিলু-মাংস-রক্ত-হাড় বুকের বাসনা’। তাহলে সে কে? বিশাল ক্ষমতাবান কারও পক্ষে এসব করা কি  একেবারেই অসম্ভব? পাঠক যে যার মতো করে এর উত্তর খুঁজবেন – কবি হয়তো এরকমই চেয়েছেন। পাঠকের মুগ্ধতা জানাতেই এই লেখা, কিন্তু ভালো লাগা বা মুগ্ধতা কি এতো সহজে অন্য মনে পৌছে দেওয়া যায়? এই যে ‘হোই কে যায়? কে যায়?’ কথাটা ঘন অন্ধকারে ছুঁড়ে দেওয়া শব্দবাহী একটা তীর – বহু দূরের অজ্ঞাত জনের দিকে, ওই হাঁক যেতে যেতে আমাকেও যেন এসে স্পর্শ করে। কেন, কী ভাবে? তাহলে এই বচনাতীত অনুভব আমি কীভাবে প্রকাশ করবো, সত্যিই কি তা করা যায়?
    ‘পাটের পচানি থেকে গন্ধ আনে রাতের বাতাস।’ মনে হয় সাধারণ একটি বাক্য। কথাটিকে শুধুমাত্র বার্তা হিসেবেই নেওয়া যায়। কিন্তু পাঠকের ‘তাকিয়ে দেখার’ চোখ যদি উন্মিলিত হয়, তাহলে এখানেও দেখবো – বাতাস দেহ ধারণ করে কী ভাবে গন্ধ বহন করছে, দেখবো শব্দে আঁকা অনুভবচিত্রে। আসলে বাক্যগঠনে সামান্য পরিবর্তন পাঠকের চোখে পড়ার কথা নয়। কিন্তু যে পাঠকের ইন্দ্রিয় সজাগ ও তৃষ্ণার্ত, তাঁরা কবিতায় রৌদ্রের গন্ধ পান। তেমনি ঘ্রাণেন্দ্রিয়র সঙ্গে চক্ষুরিন্দ্রিয় সজাগ থাকলে তাকিয়ে দেখার আনন্দ পেয়ে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, ‘....মন চক্ষুরিন্দ্রিয় দিয়া যেটাকে দেখিতে পায় ভাষা যদি ইন্দ্রিয়স্বরূপ হইয়া সেইটেকেই দেখাইতে পারে তবে মন তাহাতে নতুন একটা রস লাভ করে।’ কবি রচিত কবিতার এই মানচিত্রে প্রাণী-অপ্রাণী সবাই কোনো এক জাদুতে জীবন্ত, সক্রিয় ও বোধসম্পন্ন। এই জাদুকে উপেক্ষা করলে কবি ও কবিতাকেই উপেক্ষা করা হয়। এই কবিতার ভাষায় সেই চেষ্টা দেখে আমরা আনন্দিত।
  কবি যে অন্ধকারের কথা বলেছেন, তা কোনো গ্রামে-গঞ্জে, দেশে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বলেছেন – ‘পৃথিবীর অন্ধকারে চৌকিদার চলে।’ কবিরা তো পৃথিবী নামক গ্রহকেই স্বদেশ বলে ভাবেন। রক্তিম সূর্যোদয় দেখিয়ে কবিতাটি শেষ হয়নি, কবিতা এসে থেমেছে একটা অসহ দৃশ্যে – কবর খুঁড়ে, নাকি স্মৃতির গভীর থেকে শেয়ালের টেনে আনা আধ-পঁচা লাশের সামনে। লাশ ও মৃতদেহ দুটো শব্দেরই অর্থ এক, তবু ‘লাশ’ শব্দটি বুকে এসে ধাক্কা দেয়, যেন শব্দটি আরো বেশি কিছু বলতে চায়!
    কবিতার শুরুতে যে ভাবে  আমাদের  মনে করানো হয়েছে  অন্ধকার  অরণ্যের  ভিতর বাঘ ও হরিণের


অর্থাৎ খাদ্য-খাদকের বিষয়টি, ঠিক তেমনই তো খাদ্য-খাদক এই জনবহুল জনারণ্যের অসম জীবনযাপনে। কবিতায় এরকম জটিল গদ্যময় প্রেক্ষাপটে লালিত্য ও মাধুর্য যুক্ত করা খুব কঠিন। এমন বিষয়কে কবিতায় যুক্ত করতেও যথেষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন হয়। তবু কবির লিখনভঙ্গিমায় এমন একটা সুর আছে যার জন্য বার বার পড়তে ইচ্ছে হয়। এ ছাড়া কবিতাটিতে কবির নির্মাণের সঙ্গে শিল্পকলা যুক্ত করার সাফল্যে কবিতার উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ-র ভিতরে জীবনানন্দীয় উত্তরাধিকারকে অভিনন্দন জানাই। কবিতা শুধুমাত্র বিষয় বা বক্তব্যের শক্তিতেই ভালো কবিতা হয়ে ওঠে না। কবিতার ভাণ্ডারে যে সব সম্পদ থাকে, তা কবির নির্মাণে যুক্ত হয়ে কবিতাকে জ্যোতির্ময় করে তোলে। শব্দ, উপমা, ব্যঞ্জনা, কল্পনা, চিত্রকল্প, চিত্ররূপময়তা, অনুভবচিত্র ইত্যাদি গুণপনা যেন শিল্পীর প্যালেটে নানা রঙ, প্রয়োজন মতো যা দিয়ে অধরা মাধুরীকে প্রকাশ করার চেস্টা হয়। সম্ভবত কবিতা তা পারে, পারে বলেই এখনো কবিতা সূক্ষ্মতম শিল্পমাধ্যম।
    কবি সম্পর্কে জানতে গিয়ে একটা প্রচণ্ড ধাক্কায় মুহূর্তে যেন চারপাশে অন্ধকার নেমে এলো! কবির একটি কাব্যগ্রন্থের নাম ‘মানুষের মানচিত্র’। সম্ভবত আলোচ্য কবিতাটি সেই বইটির অন্তর্গত। কবির জন্ম ১৬ অক্টোবর, ১৯৫৬, আর ২১ জুন, ১৯৯১ তারিখটা তাহলে কীসের? মৃত্যুর? চৌকিদারকে ডেকে বলতে চাই –
তাহলে তুমি  কী ভাবে অন্ধকার তাড়াও? ভয়ঙ্কর অন্ধকার নিয়ে আসা মৃত্যুকে তাড়াতে পারো না, যে মৃত্যু ‘অসময়ে চুরি করে বোনের সিঁদুর’?
০০০

                                                                                                                                                                                        (– ‘উপাংশু’ পত্রিকায় প্রকাশিত )