তুই যে এমন সন্ধ্যার ঘোরলাগা মুখে
আত্মহননের স্তব্ধতায় মূক দৃশ্যের ভিতরে পথ হারালি--
তুই কোথায় যাবি?
তোর চোখের কোণে নির্জনতার ভৌতিক মেঘ, উড়াল পাখির ছায়া
বুকের মাঝে পথ হারানো নিঠুর পথের মায়া
তোর উত্তরে শীত দক্ষিণে রাত
পূবদিকে তোর কীটদংশ গোলাপের ঘুম, পশ্চিমে প্রপাত;
মুষড়ে-পড়া এক হিম রাত্রির অনিঃশেষ সন্তাপ তুই,
দীর্ঘ-দহন-বেলা
দুঃস্মৃতির ঘোড়াগুলি নিয়েছে স্বপ্নের পিছু তোর,
ওর খুরের আঘাতে ছিন্নভিন্ন নৈঃশব্দ্যের সকল কিনারা ছুঁয়ে
ত্রস্ত পায়ে এই যে এলি, তুই কোথায় যাবি?
কোন্ পথ ধরে?
মাথার উপরে তোর মর্মপীড়ার মতো ঝুলছে ছত্রিশ টুকরা আকাশ
ডাইনে দেয়ালের পর দেয়ালের অন্ধ সারির গহ্বরে বিলীন বৃক্ষের ছায়া,
জলের উপরে ঝুঁকে-থাকা আকাশলীনার মুখ,
নিভৃত-নিসর্গ-বীথি, বসন্তের মায়া।
বাঁয়ে তোর উন্মার্গরেখা--পলিথিনের প্রাসাদে
এ কার নগ্নমূর্তি আঁকা?
ছুটির সারামাস ধরে হ্যাঙ্গারে ঝুলে-থাকা নিখোঁজ বালকের
বোতাম-ছেঁড়া লাল হাওয়াই শার্ট তুই,
আধখোলা কবিতার বই জানালার পাশে পড়ার টেবিলে
বহুদিন না-খোলা ডাকবাক্সের ভিতরে
বিমর্ষ শব্দাবলী নিয়ে পড়ে থাকা চিঠির অস্ফুট গোঙানি-
পায়ের তলায় তোর কালোর চেয়ে কালো জলের
কোলাহল ডিঙিয়ে এই যে এলি, তুই কোথায় যাবি?
কোন পথ ধরে?
স্বপ্নের বয়সী তুই আমার, দুঃখ-রাতের যমজ।
জন্মদাগের মতো তোর বক্ষলগ্ন হয়ে আছে
দারুণ গ্রীষ্মের আলোহীন সব রাত্রির উত্তাল,
এক জলার্ত বর্ষায় স্রোতহারা মানুষের উজানমুখি স্রোত
রৌদ্রের অপেক্ষায় সারা শীত ধরে
কুয়াশার ঘুমে ডুবে থাকা শীতার্দ্র সকাল।
জলের ছোবল আর হাওয়ার কামড় চিরে আগুনের ফুল
হয়ে ফুটে ছিলি তুই--
নদীর গভীরে প্রবল আরো এক নদী,
স্বপ্নের মতো অবিরল শব্দোচ্ছল--নিরবধি।
তবুও কি দুর্লক্ষ্যে পথ হারালি তুই সন্ধ্যার এই ঘোরলাগা মুখে?
আত্মহননের স্তব্ধতায় মূক দৃশ্যের ভিতরে?
তীরবেঁধা তোর দেহের অলিন্দে, ভাঁজে, চোয়ালের নিচে
হাটের হট্টগোলের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে
সন্ধ্যার আর্তনাদের ধুসর সেই রঙ,
শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় নিভুনিভু এক উচ্ছন্ন স্টেশনের
ধুকপুক লন্ঠনের ছায়ার মতো কাঁপছে বিভ্রম তোর চুলে,
নখে ও আঙুলে--যেন ঝড়ের ডানার নিচে
একরত্তি পাখির পালক তুই;
তুই কি জানিস্ কী রক্তদৃশ্য সামনে তোর?
কী খরদাহ--আগুনের ঢল?
কতোটা বরফের জলের তলে ডুবে আছে
পথঘাট, বাড়ি ও বাগান, ত্রিকালের অন্যূন সম্বল?
ধুলোর ধারালো ছুরি, খানাখন্দ, তপ্তস্রোত আর
ভয়ের উজান জেনেও এই যে এলি, তুই কোথায় যাবি?
কোন পথ ধরে?
দৃশ্যের সন্ত্রাস থেকে দূরে, কোন্ দৃশ্যান্তরে?
কে থাকে অপেক্ষায় তোর, লাল ফিতা চুলে?
কোন প্রিয় ঘরে, মাঠে-বনে-সমুদ্রের ঝড়ে?
হৈচৈ কানাঘুষা দরাদরি ভুলে,
হলুদ ছাতার মতো পথের উপরে
ফুটে থাকে সারাদিন বুড়ো ছায়া কদমের তলে?