প্রকৃতির মুখোমুখি
কাজী হেলাল
আজন্ম স্বেচ্ছাচারী মানুষ ---
কখোনই ছিলনা প্রকৃতির মত কোমল;
অবিরাম হিংস্র আঁচরে ক্ষত বিক্ষত করে ভূমি,
আকাশের বুকে আঁকে রক্তের কালিমা,
বনরাজির বক্ষ বিদীর্ণ করা হাহাকার মিলিয়ে যায়
অসীম নীলিমায়,
অগ্নিঝরে বন্ধ্যা নদীর বুকে বড় অসহায়।
প্রকৃতি সর্বংসহা, ফুঁটিয়ে ফুল অন্তরে -
বাহিরে আনন্দ-ভৈরবী উৎসবে মাতে,
কোন অভিযোগের ফিরিস্তি আনেনি কোনদিন।
তুমি যখন তৃষ্ণার্ত ;
জলের আশায় চাতকের মত
চেয়ে থাকো আকাশপানে,
মেঘ নেমে এসে ভেজায় চরাচর, আর্দ্র করে
চোখের ছাঁওনি, ঠোটের বন্দরে নোঙ্গর করে নির্ঝরের সাম্পান!
তুমি যখন প্রেমিক পুরুষ;
তখন জ্যোৎস্নার ফুলেরা খেলা করে তোমার আঙ্গিনায়,
শিশির ভেজায় প্রেমিকার চিঠি সুগন্ধি বাতাসে---
তুমি যখন যোদ্ধা;
অগ্নি দেবতা ধরা দেয় হাতের মুঠোয়,
পবন নামে শত্রু নিধনে যুদ্ধের ময়দানে।
প্রকৃতির বিপরীতে;
মানুষ শুধু অঞ্জলি ভরে পান করে প্রকৃতির অমৃত সুধা,
আকাশ, নদী,জলের, অকৃপণ ভালোবাসা।
মানুষের এত ঋণ, প্রকৃতি কখনোই হিসেবে রাখেনি তার ---
একদিন আমি বয়স উত্তীর্ণ কালের সাক্ষী
এক বটবৃক্ষকে জিজ্ঞেস করলাম,
এই যে তুমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে,
প্রয়োজনে তোমার হাত কেটে নেওয়া হয়,
অকারণে বুক থেকে রক্ত ঝরায়,
অশান্ত আত্মারা আশ্রয় নেয় তোমার কোটরে,
মানুষ ও পাখির বিষ্ঠা ঝুলে থাকে তোমার পত্র-পল্লবে !
কত ভন্ড পীর তোমার পদ প্রান্তে বসে
নষ্টামির চূড়ান্ত ব্যবসা ফাঁদে!
কোন অভিযোগ নেই তোমার ?
বাকরুদ্ধ বটবৃক্ষ ফেলেছে দু -ফোটা চোখের জল,
বাড়িয়েছে দু হাত সকরুণ---
"তুমি ওই শীর্ণকায় নদীর কাছে যাও,
ভেজাও তোমার চরণ যুগল,তোমার উত্তর পেয়ে যাবে"!
ঐযে সোনামুখী চীল, যার পালক দগ্ধ হয় তীব্র তাপদাহে,
জিজ্ঞেস করো তাকে;
উত্তর পেয়ে যাবে তোমার!
শিকোইওয়া বনাঞ্চলে যাও, আমার অগ্রজ ওরা,
নুজ্জ বয়সের ভারে,ওদের ঘোলা চোখের দৃষ্টিতে
খুজে নিও তোমার উত্তর ---
আমি এখন নিদ্রামগ্ন হব, তুমি বিদায় হও!
আমি অবনত মস্তকে বাংলার শীর্ণকায় নদীর কাছে গিয়েছি,
সোনামুখী চিলের ডানায় লেখা রোদ্রের কবিতা পড়েছি।
দেখেছি,ক্যালিফোর্নিয়ার শিকইওয়া বনরাজির দগ্ধ শরীর ছুঁয়ে!
সবকিছুতে লেখা ছিল অকৃতজ্ঞ মানুষের গল্প ----
১৪ই আগষ্ট, ২০২২
টরোন্টো, কানাডা