ক্ষুদিরাম এক নীলকন্ঠ পাখি!
কাজী হেলাল
লাল ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে মজাফফরপুরে
তখনও উদিত হয়নি সূর্য পুবের জানালায়!
বৃদ্ধ বাবার চোখে ছানির মতো ঘন কুয়াশায়
ঢাকা ছিল দিঘির জলে ভাসমান কচুরি ফুল,
ব্যাঙের চোখে শীতল ছায়া!
দূরে কে যেন নাড়ায় দিয়েছে আগুন!
সেই আগুনের ফুলকি মোজাফফরপুর থেকে
পৌঁছে গেছে মেদিনীপুরের আকাশে!
গাঁও গেরামের ঢেকির মত ঢিবঢিব করে জননীর হৃদপিণ্ড ---
১৯০৮ সালের আগস্ট মাসে,
সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ আকাশের আঙ্গিনায় সূর্য নয়,
দেখেছিল এক নীলকন্ঠ পাখি!
খুদের দামে বিকানো সেই পাখি,
দীপ্ত পায়ে মেঘের উপর দিয়ে হেঁটে যায় ফাঁসিকাষ্ঠের দিকে!
মুখে তার সদ্য ফোটা পলাশ ফুলের মত হাসি!
একটি নয়, দুটি নয়, লক্ষ কোটি ফাঁসির দড়ি থেকে
উচ্চারিত হচ্ছে বন্দেমাতরম!
ঝাকে ঝাকে বিদ্রোহী মৌমাছিরা থেমে থেমে গায় --
"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখতে জগৎবাসী"
বিবর্ণ রাত্রির থকথকে অন্ধকার ভেদ করে,
আকাশ জুড়ে ভেসে আছে যুবকটির প্রস্ফুটিত মুখ!
উজ্জ্বল চোখ থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার মত আগুন!
সেই আগুনের পলকে ঝলকে ভিতসন্ত্রস্ত
ফিরিঙ্গিবাদিরা তড়িঘড়ি ঢেকে দেয় তার মুখ!
তবে লক্ষ কোটি হিমালয়ের মতো স্থির মুখ
তখনো উচ্চারণ করছে;
স্বরাজ আসছে,স্বরাজ আসছে,আসছে স্বরাজ!
বন্দেমাতরম!
তার আত্মা স্বাধীন হবার পূর্বে এক অমোঘ বাণী
উচ্চারণ করেছিল সেদিন ---
"I wish to die for the freedom of my country.
The thought of the gallows does not make me
unhappy in the least".
"আমি মনীকর্নিকা'র মত আনন্দময় জীবনকে কচুরিপানার মত
দুহাতে ঠেলে বীরত্তের মৃত্যুকুপে দিতে চাই ডুব !
আমি এতোটুকুও বিচলিত নই ফাঁসিকাষ্ঠ
আমার কন্ঠকে আলিঙ্গন করবে বলে,
দুঃখ এইযে; জঘন্য অত্যাচারী কিংসফোর্ডের
শাস্তি হবেনা জনতার আদালতে"
শুধু এই ভাবনায় আচ্ছন্ন আমি সাঁঝের ঝোপে অন্ধকারের মত !
আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, আমার মৃত্যু ত্বরান্বিত হোক,
আমি যেন ফিরে আসি আবার----
জন্মভূমির কাছে এই প্রতিজ্ঞা আমার" !
"আঠার মাসের পরে,
জনম নেব মাসীর ঘরে,
মা গো চিনতে যদি না পার মা,
দেখবে গলায় ফাঁসি,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি"।
টরোন্টো, কানাডা
২৮শে নভেম্বর, ২০২৩