আন্ধার রাইতে পরানঘুড্ডি
কাজী হেলাল
একদিন আচমকা পরানের সুতা ধইরা কেউ
দিছে টান।
গ্যাছিলাম ঘাটে, সুনসান বাতাসে বুক ফাইট্টা
বাঁশির সুরে কে য্যান ডাকে আমারে।
ভেরেন্ডার তেলে জ্বলা পিদিম,
নৌকার গতরে ফুটকুড়ি দিয়া নিভে আর জ্বলে !
কিমুন য্যান বিবস হইলো শরীল,
কে ডাকে আমারে এই অবেলা,
ঘরে ফিরে হাঁস হইলদ্যা ঠোঁট দুলাইয়া,
পক্ষীরাও কোটরে লুকায়,
আমার নড়নের ক্ষ্যামতা নাই,
জিগার আঠায় য্যান দিছি পাও।
আছিলনা শরীলে কোন বল!
ঠোঁট শুকাইয়া হইল চৈতমাসা বাকল ।
থামে নাই সেই বাঁশি আর কুনোদিন,
দিবানিশি দিছে ডাক পরানের সুতা ধইরা,
আন্ধারে বাজায় সব্যনাশা বীন!
কই যাই, কই তারে রাখি, কিচ্ছু বুঝিনা!
কতদিন ধরছি চাইপ্যা তার গলা,
তবুও থামনের কুনো নাম নাই ,
খালি মোচরায় বুকের ভিতরে ---
ফিরাই কেমনে তারে, কুনহানে রাহি ?
একদিন যে পাঞ্জর ভাইঙ্গা দিছে ডাক,
দিছে পরানের খুঁটি ধইরা টান!
আমি তো দিছি তারে সাজাইয়া মিষ্টিগুয়ার পান ,
নিছি তারে আন্ধার ঘরে,
হাতে তুইলা দিছি আমারই পরান ।
ছিকায় রাখছি তুইলা, কাউরেই দেই নাই তার খুঁজ,
বুকের খাঁচায় ঝড়ে- জলে রাখছি আগলাইয়া !
কে খেলে বুকের মইধ্যে হাডুডু,
আন্ধার রাইতে উড়ায় পরানঘুড়ি!
কেউ জানে না আচানক কেমনে ওঠে ঝড়,
আগুন জ্বলে বিহান বেলায় নদীর ঘোলা জলে,
কেউ রাখে না তার খবর!
কেউ কইতে পারেনা হুলো বিলাই,
কেমনে শরীলের গন্ধে তরতরাইয়া বায়!
মানুষ তো জানেনা বাঁশির বিষে
ক্যামনে হয় মরণ
কে চুবায় নদীর গহীনে,
ক্যামনে জারবার করে মন।
যেই মানুষটার লাইগা এতকিছু,
হেই একদিন ঘর থাইক্যা বাইর হইল
আন্ধারের মুখে ।
হাত্তড়ে যাওনের কথা কইয়া,
গেল দক্ষিণে সোনাকান্দি বাজার।
মনের মধ্যে কে যে নৌকা বায়,
কে যে টানে গুন, কেউ বোঝেনা।
যতক্ষণ না তোমারে ধইরা দিছে টান ---
জিগাইলে কুনো উত্তর নাই, ঝুলাইয়া রাখে ঠোঁট,
কলার কান্দির লাহান!
শুধু চিক্কুর পাইরা কান্দে আমার পরান!
ইমুন হয় ক্যান পরান পাখি সব?
জিগাইলেই চুপ, য্যান পোড়া পাথার!
কিচ্ছু না জিগাইলেই,
পরীর খুঁজে যায় সোনাকান্দি বাজার !
সেন্ট ক্যাথরিনস,অনটারিও
নভেম্বর, ১৭,২০২৩