অন্ধ কবির সূর্য দর্শন  
কাজী হেলাল

রাত্রি দ্বিপ্রহর!
কবিকে জেলখানার কনডেমড সেলে নেয়া হলো।
অন্ধকারাচ্ছন্ন কুঠুরি এক,
যেখানে পৌঁছেনি সূর্যের আলো কোনদিন।
যদিও তার কোনো তফাৎ করেনা সৃষ্টি ,
কারণ; তিনি কোন দিন সূর্যোদয়, সূর্যাস্তে স্নাত হননি।

নীরব নিস্তব্ধ নগরী!
প্রলম্বিত নিরবতা ভেঙ্গে
থেকে থেকে শুধু ডেকে ওঠে তক্ষক।

একটি ভোরের অপেক্ষায় বসে আছেন কবি,
সম্বল শুধু একটি ঘটি ও কম্বল।
যে শুভ্র ছড়িটি অবলম্বন করে চলাফেরা করতেন তিনি,
সেটি কেড়ে নেয়া হয়েছে।
প্রিয় দোয়াত কলম, যা ছিল তার হৃৎপিন্ড সম,
ছুড়ে ফেলা হয়েছে নগরীর বৃহৎ ভাগাড়ে।
পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সেটি তুলে নিয়ে অগ্নি জঠরে করেছে নিক্ষেপ।

কবির বিরুদ্ধে অভিযোগ;
তিনি রাজন্যবর্গের সমালোচনায় লিপ্ত থেকেছেন,
বঞ্চিত মানুষের কথা লিখেছেন তার কবিতায়,
বিদ্রোহের আগুনে দিয়েছেন ঘৃতাহুতি,
উজ্জীবিত করেছেন সাম্যবাদ-
তাই, নৈরাজ্য সৃষ্টির ভয়ঙ্কর অপরাধে তিনি অপরাধী;  

তিনি সমগ্র নারী জাতির, সম-অধিকার সুরক্ষার কথা বলেছেন।  
তার বিরুদ্ধে উগ্র নারীবাদকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে;    

তিনি ট্রান্সজেন্ডারকে, মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলেছেন।
কবিকে ভাবা হয়েছে অপ্রকৃতিস্থ।

পুরুত ও মোল্লা কে তিনি ধর্ম-ব্যবসায়ী বলেছেন,
আহ্বান করেছেন রুদ্রাক্ষের মালা ও তসবিকে একসুত্রে গেঁথে
মানুষের জয়গান করতে!
তাই জারি হয়েছে ফতোয়া তার বিরুদ্ধে!
তার কপালে সেঁটে দেওয়া হয়েছে নাস্তিকতার তিলক!

কবিকে দেশদ্রোহী চিহ্নিত করে মৃত্যুদণ্ডে করা হয়েছে দণ্ডিত;  

ভোরের সূর্য উদিত হবার মুহূর্তে কবিকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যাওয়া হলো;
জিজ্ঞেস করা হল "তোমার শেষ ইচ্ছার কথা বলো"।
স্মিত হেসে, তিনি সূর্য দর্শন করতে চাইলেন!

আঙ্গুলের ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়া তরল সূর্যকে তিনি স্পর্শ করলেন,
যখন সিপাহী তার বক্ষ বিদীর্ণ করে বেয়নেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো-
করুন সুর ভেসে এলো সূর্যমুখী ভায়োলিন থেকে,
জ্বলে উঠলো আগুন সমগ্র দেশে।

কবি ফিরে পেলেন দৃষ্টি,
আকাশ জুড়ে হাজার চক্ষু মাঝে!
যার অপেক্ষায় ছিলেন আমৃত্যু।
দেখলেন, জাতি অন্ধকার ভেদ করে উজ্জ্বল আলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে ।
আকাশ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে অপূর্ব এক সৌন্দর্য।
ঘোরগ্রস্থের মতো কবি সূর্যের দিকে একবার তাকালেন---
তারপর নতজানু হয়ে ভূপৃষ্ঠকে চুম্বন করলেন তিনি।

২১শে জুলাই ,২০২১
টরন্টো।