সেদিন ছেলেবেলায় পৌষের শীতে পূর্ণিমারাতে
আমরা মেতেছিলেম নব নবীন চড়ুইভাতিতে।
অল্প বয়সে চঞ্চল সাহসে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে,
রান্না-বাটির নানা উপকরণ জোগাড় করেছি উল্লাসে।
পুকুর জলে জাল ফেলে মাছ ধরে কাতল-রুই,
কোটা ধোয়া নানা কাজে কত আনন্দ হৈ চৈ!
বাড়ির অদূরে চুলা কেটে আগুন জ্বলে বড়রা করে রান্না
সে রাতে দাদীর খোপের মুরগি হয় চুরি দাদী টের পাননা।
দুরন্ত ছেলেরা খেঁজুর রসের ঘটি পেড়ে আনে রসসহ
গোয়াল ঘরের ঘুমন্ত গরুর দুধ দু'য়ে আনে কেহ।
কাঁচা রসের সুমিষ্ট জাউ চিনিগুড়া নয়া চালে রাঁধা,
আধেক রন্ধনেই জিভে আসে জল বয়স্করাও মানেনা শীতের বাঁধা।
ঐ হিমের রাতে চড়ুইভাতিতে সবে এলো চাতালে,
এ বাড়ি ও বাড়ি হতে কত খুশিতে শীতে দুয়ার খুলে।
সে রাত ভোর হয় হাসি খুশি গানে খানায়,
চাঁদ ডুবে যায় কুয়াশা ধবল কম্বল জড়িয়ে গায়।
এই শৈত্যউৎসব রাত- চড়ুইভাতি ভাত, বাঙালীর মনের পুষ্টি
যুগে যুগে যোগায় নব পুরাতনে বাঙালী জাতির কৃষ্টি।
এ বাড়ি ও বাড়ির 'ভাতি' উপাদান যোগান কত দুষ্টুমিতে মাখা
একটু বকুনি আনাড়ী যোগান আনন্দেে আজীবন মনে রাখা।
এমন সরল নির্মল সমাজ পল্লীবাংলার সেই পুরাতন কাল,
রঙ বেরঙের ছোঁয়ার সৌন্দর্যে এখনো রয়েছে বহাল।
সেই কালের পুরাতন আমরা এখন এই কালের জরা
কামনা করি-
হে প্রজন্ম তোমরা নব নবীন দীর্ঘায়ুতে সুখে ভোগ করো এ ধরা।
সদা হাসিতে খুশিতে আপন পরে সুন্দর শান্তিতে,
যদি থাকে মানুষ তবেই জীবন সুন্দর এই ধরনীতে।