ইতিহাস থেকে জেনেছি,নদী শুকিয়ে গেলেও -
তার ধারা বয়ে চলে যুগ যুগ ধরে
রাতের চাঁদ অস্ত গেলেও;জ্যোৎস্না লেগে থাকে
পাহাড়ের স্তন চূড়ায় ।
আর তুমি,কি গো তুমি !
কাব্যটাব্য সৃষ্টি করছো ?
মহিলা কবি 'চারুলতা' হবে নাকি !
পরে কথা বলছি বলে-সেই যে ফোন রাখলে
তারপর কোথায় যে উড়ে গেলে
আর গেলে তো গেলে;ফিরে আসার নাম নেই !
তুমি তো ডানা গজানো পাখি নও -
তুমি তো আমার মানস প্রতিমা ।
একটি মাত্র কল করতেই এক যুগ ।
কি গো নতুন কিছু সৃষ্টি করছো -
নাকি সৃষ্টির পেছনে ছুটে চলেছো ?
কি জানি বাবা ;কত কিছু পারো তুমি !
তাই তো কবির ভাষায় বলি -
"আমার হৃদয় তোমার আপন হাতে দোলো"
জানি তোমার আনন্দে উচ্ছাসে ভরা
নিজস্ব পরিবেশ আছে ; তোমার বাবা মা
আত্মীয় - পরিজন আছেন ; তাদের প্রতি তোমার
দায়িত্ব আছে,কর্তব্য আছে ।
কিন্তু আমার প্রতি ?তুমি তো জানো -
তোমার ওই কাকলির মতো কণ্ঠ
আমার কাছে বিঠোফেনের স্বরলিপি ।
তোমার সমুদ্র কলতানের মতো হাসি
আমার হৃদয়ে সজ্জিত হয় -
বসন্তের বিচিত্র রঞ্জিত সুরভিত ফুলে ।
তোমার ওই ভূবন ভোলানো চাহনি -
আমাকে নিয়ে যায় শত শত আলোকবর্ষ দূরে ।
কোটি কোটি নক্ষত্রের আলোক ছটায়
ক্ষনিকের জন্য হলেও;আমারও মনটা
ভরে ওঠে উচ্ছ্বল আনন্দে ।
এমনিতে আমি কোনো জাদুকর নই, একথা আমি -
তুমি কেন, সকলেই জানে ।
তবে মাঝে মাঝে আমি বোধ হয় -
স্বপ্নে যাদুকর হয়ে যায় ।
সত্যিকে মিথ্যের রঙিন ফুল
আর মিথ্যেকে সত্যির ভূ-গোলক তৈরী করি ।
জানি এখন আমি তোমার কাছে -
নিছক কোনো জড় বস্তু ;কম্বা কয়লা পোড়া ছাই ।
ধূসর ছাইয়ের মাঝে এখন আর
আগুন খুঁজে পাওনা তুমি ।
জানো গত কয়েক দিনে কতবার মোবাইলটা দেখেছি
তুমি কল করোছো কিনা জানতে ;
সে সব গুনতে হলে ;ক্যালকুলেটার লাগবে ।
কত বার ভেবেছি নিজেই তোমাকে কল করি
পাছে তোমাকে বিড়ম্বনা সইতে হয় ,
প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হয় ,
তোমাকে অকারণে কষ্ট পেতে হয় ,
শুধু মাত্র সেই ভয়ে আর কথা বলা হয়নি ।
তাইতো নিজে কষ্ট পেলেও
তোমাকে কষ্ট দিতে চায়নি ।
কেননা তুমি কষ্ট পেলে -
আমার ভালবাসার গায়ে কলঙ্ক লাগবে ।
আকাশ -বাতাস, গোধুলির ঝেঝি পোকা
কিম্বা রাতের জোনাকি ;সবাইকে বলেছি
তোমরা শুধু এই খবরটা এনে দাও ;
কি করছ তুমি শরীর -মন ভালো আছে তো ?
জানি তোমার হাতে সময় খুব কম
শিক্ষিকার কাজ কর ,নিজের পড়াশনা কর
সংসারের কাজও কিছু করতে হয় ।
কিন্তু এগুলি কি তুমি একা কর -
এর আগে কেউ করেনি কখনো ?
একটি প্রচলিত কথা আছে জানোতো -
"যে রাধে সে চুলও বাঁধে"
সে তুমি কবি হতে চাও হও
সাহিত্য সৃষ্টি করতে চাও কর -
আর সেটা হলে আমার চেয়ে বেশি খুসি কেউ হবে না ।
তবে এরকম কিছু দিন চললে ,
তুমিও হয়ত একদিন বড় সাহিত্যিক হবে ।
সাহিত্যে নোবেলও পেতে পার ।
তার পর তুমি হবে ভারত -রত্ন !
তোমার নামে স্কুল- কলেজ-
বড়ো বড়ো শহরে রাস্তা হবে তোমার নামে ।
রাজধানী কিম্বা জাতীয় সড়কের মাঝে -
বসবে তোমার প্রতি- মূর্তি ।
স্কুল কলেজের পাঠ্যাধ্যায়ে তোমার রচনা
তোমার প্রবন্ধ পড়বে সকলে ।
তখন তুমি ভারত -কন্যা -
চারিদিকে তোমার জয় ধ্বনি ।
আর আমি কোথাকার কোন চণ্ডিদাস !
কবে ভালবেসে ছিলাম 'রজকিনী' কে ।
আজ আমি ভিক্ষারী, হ্যাঁ ভালবেশে আমি ভিক্ষারী হয়েছি !
বোগলে ভিক্ষার ঝুলি, আর হাতে একতারা
পথে-ঘাটে বাউল গেয়ে বেড়ায় -
"খাঁচার ভীতর অচীন পাখি কেমনে আসে যায়
তারে ধরতে পারলে মনবেড়ি দিতাম পাখির পায়" ।
তবে ও গান তুমি শুনবে না কখন
ধন্যি মেয়ে বটে তুমি, যা ভুলোমনা !
এই দেখনা সেদিন তুমি নিজের মুখে বললে -
আমার বাড়িতে বেড়াতে আসবে ।
সেদিন মঙ্গল ছিল; আমার মনে হঠাৎ
সানাইয়ের সুর বেজে উঠেছিল ;
নিশ্চয় আসছো তুমি ।
ঘরদোর কি পরিপাঠি; ঝুলঝাড়া -
জামা-কাপড় কাচা-কাচি, গায়ে সাবান দেওয়া
চুলে স্যাম্পু করা;যেন মনের সব জং পড়া -
রাগ-দুঃখ,তেলচিটে পড়া অভিমান সব
ঘসে মেজে শুকিয়ে আয়রন করে নেওয়া আর কি ।
আজই প্রথম সাদা রঙের বেড কভার টা বের করলাম
সাদা রঙ যে তোমার খুব পছন্দ ;
তুমি রবীন্দ্র সঙ্গীত পছন্দ কর বলে -
কম্পিউটার বক্সে রবীন্দ্র গীতি চলছে সেই কাক ভোর থেকে ।
তোমাকে আমার হৃদয়ের সবচেয়ে দামি অভ্যর্থনা দেব বলে -
এত সব আয়োজন চলছে সারাক্ষণ ।
তুমি বরষা পছন্দ করো বলে -
ঘরের পিছনের জিনালা টা খোলা আছে সারাক্ষণ ,
যাতে ঐ জানালা দিয়ে সরবরের শাপলা ফুলের উপর
শিশির বিন্দু দেখে ,তোমার বৃষ্টির কথা মনে পড়ে ।
অনিমেশ হঠাৎ আমার দরজায় এসে বলে -
কি ব্যাপার বন্ধু; ঘরে তো দু-পাঁচ মাসে
এক-আধ বার ঝাটা পড়ে কি পড়ে না !
আর আজ দেখছি, একে বারে ঝকঝকে ঝলমলে !
দরজা-জানালায় নতুন পর্দা -
নতুন সাদা বেড কভার, টেবিলে ফুলদানিতে- তরতাজা ফুল, ওদিকে বক্সে মৃদু সুরে রবীন্দ্র সঙ্গিত !
নিজেও দেখছি একেবারে ঝকঝকে তকতকে -
'বুদ্ধদেব গুহের' নায়ক সেজে আছো ।
কি ব্যাপার, মনের মানুষ আসছে নাকি ?
আমিতো লজ্জায় মরে যায় আর কি ।
কিছু কথা খুঁজে না পেয়ে, মুখে বলি -
কি যে বলো তুমি, আমার আবার মনের মানুষ !
ওমা শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি -
প্রতি লোমকূপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তো সেই কথাই বলছে
গভীর এবং স্তব্ধ সমুদ্রের মাঝখানে -
ঝড় ওঠে প্রতিনিয়ত।
অসংখ্য জলপরী, সূর্যের রঙে রূপবতী তারা -
তবু অন্ধকারে সমুদ্র কে কাছে পায় !
তারা চুম্বনে আলিঙ্গনে ভরিয়ে দেয় তাকে।
কোথায় ও যেন আড়ষ্টতার চিহ্ন মাত্র না থাকে ।
এত সব ভেবে এত ভালোবেসে জলপরী রা -
জলের উপর সাজিয়ে তুলেছে ফুল সজ্জার খাট ।
তবু অসীম অন্ধকার ও তার সমস্ত ব্যথা নিয়ে -
অবিরাম আছড়ে পড়ে সৈকতে ;
বালি কণায় লুকাতে চায়,
এমনি ভাবে আশ্রয় ভিক্ষা করে অনন্ত কাল অবিরত।
বলতে পারো -
ভালোবাসায় কতটা কষ্ট পেলে;
এমন হাস্যোময় হিল্লোল রাশি -
লজ্জায় মুখ লুকাতে চায় পাড়ে ।
বন্ধু আমার কথা শুনে -
ফ্যাল ফেলিয়ে তাকিয়ে থাকে
কিছুক্ষণ আমার মুখে;
তার পর চলে যায় উত্তরের দিকে।
আর এই যে তুমি -
শোন না তোমাকে বলছি ;
তুমি কি ভাবছ
ভাবছ কি তুমি ?
তোমাকে কাছে পাওয়ার আশায় -
এত সব ভাষা, মত সব কথার ফুলঝুরি !
না না না, শুধু তাই নয় ।
তোমাকে ভালোবাসি বলেই -
শুধু ভালোবাসি তাই;
অক্ষর বিন্যাসে , প্রচ্ছদ অলঙ্করণে -
কালির আঁচড়ে , এত সব লিখি ।
আমি শুধু তোমাকেই চাই,
তুমি ঠিক যেমনটা তেমনি।
হয়তো বলবে -
নিরুপায় তুমি, অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপির মতো
কাটা- ছে৺ড়ায় জীর্ণ!
সে যাই হোক, তবুও তুমি আমার স্বপ্ন।
দয়া করো প্রিয়া -
জীবনে একবার অন্তত সুযোগ দাও।
আমাকে আঁকতে দাও ,
আমি শুধু তোমাকেই আঁকতে চাই।
আমার বিশ্বাস, সে চিত্র দেখে -
তুমি তোমার সম্পূর্ণ অবয়ব খুঁজে পাবে।
একবার এবং শেষ বারের মতো -
তুমি আমাকে দাও;
তোমার কালো মেঘের মতো চুল।
তাই দিয়ে আমি অমাবস্যা রাতের আকাশে -
তোমার মুখের মতই চাঁদ আঁকব।
তোমার সে পূর্ণিমার ছটায় -
ঘোর অমানিশা মুখ লুকাবে ধরনীর কোলে।
একটি বার কেবলই শেষ বারের মতো -
তোমার হাত দুটি আমাকে দাও;
পদ্ম ফুলের মতো তোমার করতে দুটিতে,
আমি এ৺কে দেব বসন্ত উৎসব
আর আবির রাঙা স্বপ্ন !
একটি বার মাত্র, শুধু একটাবার -
সুযোগ দাও এই 'ভগীরথ' কে ।
দ্যাখো ; পারি কি না -
শিবজটা থেকে গঙ্গা কে, আনয়ন করে,
ধুইয়ে দিতে, তোমার রক্তে যত সংক্রমিত বিষ !
প্রিয়- তুমি যতোই অবহেলা করো ;
ভালোবাসা এখনও মায়ের স্নেহের মতই পবিত্র।
জলন্ত বিভীষিকা, কিম্বা কোন সভ্যতা পতনের মতো
এখনো সে উদ্ধার মন্ত্র ।
হিরোশিমা নাগাসাকিতে -
পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পরেও ;
এতো ভয়ঙ্কর আম্ফান ঝড়ের পর ও
এতো বড় মারণ ব্যাধি-
কোভিড ১৯ সারা বিশ্বে সংক্রমিত হওয়ার পরও
তার মুখে আজও, সদ্য ফোটা ফুলের মতো হাসি!
কচি পাতার মতো শ্যামল তার রূপ।
সে ভালবাসা এখনো তোমার প্রতিক্ষায় ।
ভালোবাসা মানে -
রামধনু রঙে রঙিন , শ্বেতশুভ্র আলোকছটা।
প্রিয়, তোমার ভালোবাসার কাছে এসো প্রিয়;
দ্যাখো - তোমার উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা,
দক্ষিণ পশ্চিম ও পূর্বে -
ভারত মহাসাগর, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর ।
তোমাকে পরীখার মতো ঘিরে আছে,
অহর্নিশি সজাগ দৃষ্টি তার।
কোন শত্রু তোমাকে,
সাহস পাবেনা সীমানা স্পর্শ করার।
এখানে তুমি বিলীন হতে পারো-
তোমার সৃষ্টিতে, তোমার কর্মে,
তোমার কেবলই তোমার নিজস্ব জগতে ।।

          ____