গৃহিনীর কথা মেনে, ঢাকেশ্বরী আর শ্রীনিকেতনে -
কেনাকাটা না করলেও হতো ।
বন্ধুর বউয়ের কথা মতো , পাঁচতারা হোটেলে-
ডিনার পার্টি, না হলেও হতো ।
এসব না হলে, ভালো হতো ,
হতো ভালোই হতো , যদি-
ফুটপাতে থাকা আশ্রয়হীন ,
পথশিশুদের, কিছু পোশাক দিতে পারতাম ।
প্লাটফর্মে, ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো,
অসহায় অনাথ বাচ্চাদের-
নিজের হাতে করে, কিছু খাওয়াতে পারতাম ।
পারতাম সবই, করিনি কিছুই !
এখন কবিতা লিখতে বসেছি ।
দু হাজার টাকা দিয়ে, টিকিট কেটে-
আই পি এল, আই এস্ এল ;
না দেখলেও কিছু ক্ষতি হতো কি ?
বাড়িতে বসে, টিভিতে, মোবাইল অ্যাপে -
খুব সহজেই খেলা দেখা যেতো ।
একান্ন পদ ব্যঞ্জন রেঁধে,
দশ হাজার লোক নিমন্ত্রণ করে !
মহাসমারোহে, বাজি পটকা ফাটিয়ে-
সুবিশাল কমোনিটি হল ,
আলোর রোশনাই জ্বালিয়ে -
বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠান, না করলেও হতো ।
ভালো হতো এতসব না হলে ।
ভালো হতো, ভালোই হতো যদি-
সেই অর্থে, অন্তত তার কিছুটা দিয়ে ;
যাদবপুরের কমিউনিটি কিচেনের -
একদিনের খাবারের ব্যবস্থা করা যেতো ।
আরো ভালো হতো, যদি-
আমাদের বাড়ির দোতলায়
ডাক্তার নার্স, কোভিড যোদ্ধাদের
থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতাম ।
পারতাম সবই, করিনি কিছুই !
ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে -
বিবেক মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে ;
কেবলই কবিতা লিখছি,
কবিতাই লিখে চলেছি ।
তেরো বছরের যে ছেলেটি
ইঁট ভাটায় কাজ করে ;
বিধবা মায়ের সংসার চালায় ।
তার জন্য আমার কলমের কালি শূণ্য !
পাড়ার যে মেয়েটি -
অসুস্থ বাবার চিকিত্সার জন্য ,
ছোট্ট ভাইয়ের পড়ার খরচ যোগানোর জন্য ;
রোজ রাতে লুকিয়ে শরীর বেঁচে,
তার জন্য আমার কবিতার পঙতি নগণ্য ।
এসব কথা, এসবের কবিতা
পাঠক পাঠিকারা কেউ খায় না ।
এতসব লিখে, সরকারি পদ পাওয়া যায় না ।
কবিতার শীর্ষে ওঠার সিঁড়ি ,
একাডেমী পুরস্কার জোটে না ।
তাই অন্ধের ছদ্মবেশে-
বোবা কালা সেজে ,
কবিতা লিখছি,লিখে চলেছি কবিতার কথা ।