হয়তো কবিতা এটা।
কিংবা গদ্য,
বাস্তব এর থেকে কিছুটা দূরে।
তবুও কোথাও ছোঁয়া জীবনের।
অমিত ও লাবন্যর শেষ দেখা বারো ই অক্টোবর নন্দনে। সেদিন ছিল দুর্গা পুজোর দ্বাদশী।
বাজছে দূরে বিসর্জন এর বাজনা।
অমিত এর সেদিন তার বন্ধুর বাড়িতে ছিল নিমন্ত্রণ।
তবুও লাবন্যর কথা রাখতে গিয়েছিলো নন্দনে।
কিন্তু লাবন্যর সে দিন এর দেখা করার মানে বোঝে নি অমিত।
মনে ভেবেছিল, হয়তো অনেক দিন না দেখার দেখা।
পুজোর সময় তখন কম ভিড় হতো নন্দন এ। কিছু ক্ষন চুপ চাপ বসে ,
অমিত এর হাজার কথার জগৎ এ হারিয়ে না গিয়ে লাবণ্য বললো সেই কথা টা।
তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। আজ আমাদের শেষ দেখা।
অমিত এর মানি ব্যাগে , লাবন্যর একটা ছবি ছিলো। সেটা চেয়ে নিয়ে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো নন্দন এর জলে।
অমিত এর মনে হলো, বোধ হয় এর চেয়ে মানুষ খুন করা সোজা।
কি মারাত্মক নিষ্ঠুরতা। এর পর কথা নেই। অমিত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে লাবন্যর চলে যাওয়া দেখলো।
ছেলে রা কাঁদে না।
একটা অসম্ভব হতাশা,
একটা দুর্ঘটনার বিস্ময় ,
বিভ্রান্ত কর পরিস্তিতি।
বন্ধু র বাড়ির নিমন্ত্রণ এর সময় চলে গেছে।
তবুও কোনোরকমে শরীর টা হিঁচ্ড়ে নিয়ে অমিত পৌছালো, বন্ধুর বাড়ি।
খাবার ইচ্ছে নেই।
বিকাল চারটে বেজে গেছে।
বাড়ি পৌঁছতে রাত্রি হলো।
পর দিন সকালের ফ্লাইটে ছাড়তে হবে কলকাতা।
এই বার এর ফিরে যাওয়া তে অনেক ছেড়ে যাওয়া। কলকাতা এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়ে অমিত এক চেনা বান্ধবী কে ফোন করলো।
সে বলল, "অমিত রায় ভালোবসেছিল, যে পেলো না , সে হারালো , তুই হারাস নি"
সেই মুহূর্তে যেন তার এই কথাটা যেন অমিতের ক্ষত এ এক ঠাণ্ডা প্রলেপ এর কাজ করলো।
বিমান হারিয়ে গেল উত্তর পূর্ব আকাশে।
তারপর , বেশ কিছু দিন, অমিত নানা কাজে ।
হঠাৎ হাতে এলো , রবি ঠাকুর এর ' শেষের কবিতা ' বই খানি।
চমকে দেখে, এও তো অমিত আর লাবন্যর গল্প।
সময় বদলে গেছে বদলায় নি চরিত্র,
মনের মধ্যে থেকে বিশাল একটা পাথর নেমে গেলো। হাজার মানুষের ভিড় এ সে একলা নয়।
নতুন উদ্যম।
নতুন জীবন।
অনেক সংকল্প।
জীবন গড়িয়ে চলে অনেক দূর।
পরিশেষে নিতে হবে রবি ঠাকুর এর ভাষা,
তারপর একদিন,
বহু বছর পরে,
"রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা ,
ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন" ।।
শেষ হয় , সেই রবি ঠাকুরে।
অনেক কথার পর,
"একটুকু রইলেম চুপ করে ;
তার পর বললেম ,
'রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে"
জীবন অন্য পথে,
ট্রেন বদলি হলো কোনো এক জংশনে।
হাতে হাত রেখে বললে,
"হে বন্ধু বিদায়"।