আমি যতবার এই পৃথিবীতে এসেছি
ততবারই ভালোবেসেছি
ভালোবেসেছি পাহাড়কে,ভালোবেসেছি আকাশকে
ভালোবেসেছি ঝর্ণা কে,ভালোবেসেছি নদীকে,
আর সবথেকে ভালোবেসেছি তোমাকে
যেমন করে অরণ্য নিরবতাকে ভালোবাসে
যেমন করে আকাশ শুন্যতা কে ভালোবাসে
ঠিক তেমন করে আমি তোমায় ভালোবেসেছি
অন্ধকার ঘরে হারানো প্রজাপতি যেমন
আলোর আভা দেখে হন্যে হয়ে ছোটে..
ঘাসের মিষ্টি সবুজটা যেমন জীবনকে জুড়িয়ে দেয়
ঠিক তেমন করে..
খরস্রোতা নদীর মত তুমি আমার হৃদয়কে বিদীর্ণ করে
প্রত্যুষের কুহেলিকার মতো আমার হৃদয় কুহকে প্রবেশ করেছিলে
তোমার অন্বেষণে কোথায় কোথায় না ঘুরেছি আমি
কত পৈশাচিক নরহত্যার সাক্ষী থেকেছি আমি
কত নৃশংসতা বর্বরতা হৃদয়হীনতা মাদকতার সাক্ষী থেকেছি আমি
কিন্তু মনের কোণে তোমার নরম আভাকে কখনো মলিন হতে দিইনি,
ভাগ্যবলে আমি বার বার থেকেছি ওই নিপীড়িতদের দলে
আমি দেখেছি আলেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের আনন্দের আড়ালে
লক্ষ লক্ষ মায়ের বিভৎস্য কান্নার রোল
সম্রাট অশোকের হত্যালীলাই বলী হওয়া চতুর্দশ বয়সী বালিকা আমি!
আমি দেখেছি আর্মেনিও,কাতিন,হলোকস্ট,চীন
কম্বোডিয়া,বসবিয়ান,বেঙ্গল,হিরোশিমা নাগাসাকির গণহত্যা!
যখন 1945 সালে 6 আগস্ট ঠিক 8 টা বেজে 15 মিনিটে শহরটা কেঁপে উঠেছিলো
নাগাসাকির এক চাষার ঘরে দোলনায় দুলতে থাকা ছোট্ট শিশু তখন
আগুনের তাপে পুরো শরীর টা ঝলসে গেছিল, সেকথা ভাবলে আজও ভেতরটা ভয়ে হিম হয়ে যায়!
শান্তির কথা যারা বলে ইতিহাস সাক্ষী তাদের সবারি হাত আমার রক্তে লাল।
তোমাকে চাওয়া এত প্রবল ছিল যে এত ঘৃণার মাঝেও
তন্ন তন্ন করে তোমায় খুঁজেছি তোমায় ভালোবাসবো বলে
এক বর্ষার দিনে তোমায় দেখেছিলাম,তোমার চোখ দেখে জ্ঞান হারিয়েছিলাম
তার পর হাজার বছর ধরে আমার যাওয়া আসা
আর সম্মোহিতের মতো তোমায় খুঁজে চলা
প্রচন্ড বর্ষায় বাবুইয়ের বাসা থেকে আগ্নিয়গিরির অগ্নুৎপাতের পর রয়ে যাওয়া ছাইয়ে
আমাজনের গভীর অরণ্য থেকে থর হয়ে সাইবেরিয়ার নিকষ অন্ধকারে
সহস্র জনসুমুদ্রের ভিড় ঠেলে আটলান্টিকের হিম শৈলেও গিয়েছিলাম আমি।
আফ্রিকার জঙ্গলে সুপ্ত হীরের খনির উজ্বলতম হিরে হাতে…
আমি গিয়েছিলাম আন্দামানের জারোয়া জনজাতির কাছে তোমার খোঁজে,
কোথাও পাইনি তোমায়!তবুও তোমার থাকা আমার মনে সংশয় জাগাইনি
আমার প্রত্যেকটা অপ্রাকৃতিক অনুভূতি তোমার থাকার প্রমান যোগায়!
যখন সাহারার বুকে বৃষ্টি নামলো,সে বৃষ্টি আমায় ভেজাতে পারেনি,
আমি ভিজেছি তোমার চাহনিতে,তোমার দুচোখ আমায় বন্দি করে রাখে,
তাই যুগের পর যুগ আসা যাওয়া,এই বদ্ধতা আমার মন্দ লাগে না,
কিন্তু সভ্য যুগের আদিম শিলাবৃষ্টি আমায় মর্মাহত করে প্রতি মুহূর্তে।
তাই আজ আমি ক্লান্ত,শরীর সায় দিলেও মন আর সায় দেয় না।
তাই আজ বিজয়যাত্রার ডঙ্কা বাজিয়ে যাত্রাপথের ইতি টানবো।
তোমার আমার মাঝের দূরত্ব আর মুছে যাওয়ার নয়,
এ দূরত্ব শাসক আর শোষিতের,ন্যায় আর অন্যায়ের,অগ্নি আর বারীর।