অন্ধকার, চির স্যাঁতসেঁতে অবস্থানে
দণ্ডায়মান জীর্ণ দেয়াল খুঁড়ে দেখি, "এক প্রতিবাদি ইট।"
সে ক্রন্দনরত. শেওলায়
লজ্জা নিবারণের বৃথা চেষ্টায় লাল হতে হতে মরছে।
আমি প্রশ্ন করলাম, "কোন যুগের অবতার তুমি?"
সে শুনাতে শুরু করলো, কিসসা!
বরং আত্মকাহিনী_
"যশ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, নাম, ডাক, সামর্থ্য, শক্তি, শিক্ষা
সব ছিল অপরিমেয়।
কতক বিশেষণ,
এবং 'তিনি' সর্বনামে সম্বোধন, আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
আলো হয়ে জন্মেছি, ভাবতে ভাবতে
অসময়ে অভিসম্পাত হলাম 'বিপ্লবী' কুখ্যাতি তে।"
-বিপ্লবী!
-হ্যাঁ, বিপ্লবী। এক বিপজ্জনক সত্তা।
কলম ছেড়ে তরবারি হাতে, মাঠে নেমেছিলাম। ভাবছিলাম, "তরবারি না, এটা বরঞ্চ প্রজ্বলিত মশাল।"
আঁধার কাটতে কাটতেই, ভুলে গেছিলাম_
'এরা কেউ আমার আপনজন না।'
যাদের তরে খাল কাটলাম, তারাই কুমির হয়ে কাটলো।
কেড়ে নিল বস্ত্র,
সন্ত্রাসী বলে, ফেলে দিল নোংরা নর্দমায়।"
কত যুগ, কত কাল, কত শতাব্দীর কথা,
জানি না।
শুধু মনে আছে, সেদিন ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। তারপর, বিবস্ত্র করে, ফেলেছিল নর্দমায়। সেখানেই পঁচে গলে, মাটিতে মিশে গিয়েছিলাম। সেই মাটি থেকে, ইট বানিয়ে আমাকে বাঁধানো হয়েছিল এই দেয়ালে।
আজ মানুষ আমাকে ভুলে গিয়েছে।
ভুলে গিয়েছে আমার অস্তিত্বকে।
আমি সেই যুগের অবতার। যে যুগে, খাপছাড়া হয়ে মরতে হয়েছে
বিপ্লবীদের,
ধ্বংস হতে হয়েছে
সব প্রতিবাদী সত্ত্বার। যারা, একা যুদ্ধ করতো
কোটি মানুষের জন্য,
কোটি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য,
কোটি মানুষকে বাঁচতে শেখানোর জন্য।
তারা বাঁচতে শিখেছে,
তাদের অধিকার আদায় হয়েছে,
তারা এখন স্বাবলম্বী।
অবশেষে তারাই আমাকে দমন করেছে, সন্ত্রাসী জ্ঞান করে। এবং ফেলে দিয়েছে, এখানে।
স্বয়ং ইতিহাসও আমাকে তাই ভেবে মুছে ফেলেছে, তার পাতা থেকে।"