ওগো ঘুমোঘোর কবিতা, ঘুমাও তুমি
কেবলই ঘুমিয়ে যাও রঙিন মলাটে আচ্ছাদিত
এই নরম সেলুলোজ নির্মিত বিছানায়;
বন্ধ করে ফেলো চক্ষু যূগল, সুযোগ দাও অন্ধকারদের,
নির্লিপ্ত হতে দাও, স্থিতু হতে দাও, অমানিশার প্রগাঢ়তা,
জমাট বেঁধে যাক গান, 'শতাব্দীর সমূহ আঁধার' উপমায়।
একের পর এক, উল্টিয়ে চলি পাতা, এক একটি পত্রপল্লব
শুরু, একটা লম্বা ধুম্র ইতিহাস তারপর শেষ হবে বলে অশেষ
কখনও জলজ, কখনও স্থলজ কিম্বা মরুভূমে মায়া খেলা;
কেবলই পাতা উল্টাই, ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছুটে যাই অভিমানে,
আঙ্গুলের ডগায়, ধমনী সমূহের নীলাভ শিরায়, প্রতিটি
লৌহকণিকায় গুন গুন গেয়ে যায় গীত, কেউ ভীষণ সুরেলা।
ললাট ছুঁয়ে নাক, তারপর ঠোঁট বেয়ে শোনাই গল্প
জ্বলজ্যান্ত রূপকথা, উপকথা, পরম আদরে
বন্দি রাজা, রাজার কন্যা, দৈত্য দানব, সাত সমুদ্র তেরো নদী;
চোখ খোলো না সোনা, ঘুমপুরীর রাজকন্যা তুমি
সোনার কাঠি জাগে শিয়রে তোমার, নিয়ে যাবো স্বপ্নলোকে
মন্ত্রমুগ্ধ, নিষ্পলক, অবাক মোহে নীরবে ঘুমাও যদি।
বন্ধ চোখে অতিরিক্ত নিষ্পাপ তুমি, আর এখানেই কবির
সফলতা, জীবন, পুঁজা এবং নিখাদ পৌত্তলিকতা
হরতন রুহিতন চিড়েতন সর্বোপরি প্রতিষ্ঠিত তাসঘর;
ইচ্ছে করে দৃষ্টি দান করি শব্দের কারাগারে বাঁধি প্রেম
উতল ভালোবাসায় গেঁথে যাই মালা, স্বর-ব্যাঞ্জনে
অবিরাম, অবিরত, শ্রান্তিহীনভাবে যতক্ষণ না হয় ভোর।
তারপর ভোর আসুক, ডিমের গলিত কুসুমের মত সূর্যোদয়
হোক, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি অদল-বদল হতে থাকুক
তার নিজস্ব নিয়মে পুনশ্চঃ পূণর্বার;
দীর্ঘ শীতরাত, বসন্তের সন্ধ্যা, ভাদরের পূর্ণিমা, অলস দুপুর,
ঝুম বর্ষণমুখর বিকেল, তুমি ঘুমিয়ে পরো ফের সেলুলোজের
ভাঁজে, মলাটের বদ্ধ কুঠুরিতে তুমি নীলকন্ঠ, মৌন মনিহার।