একটি স্বকীয় কবিতা লিখবো বলে
সহস্র বিনিদ্র রাত জেগে আছি, ঘুম হয় না।
স্বকীয় কবিতা মানে- স্বকীয় কবিতা
যা একান্তই আমার, নিজের
যার প্রতিটি শব্দ-বাক্য, শরীরী গঠনগাঠন
একান্তই আমার মনোজাগতিক, মস্তিষ্কজাত;
অধিকতর সরল অর্থে বলা চলে- স্বকৃত।
আমার সর্বাধিক প্রিয় এবং পরিচিত প্রেমিকার
রক্তাভ চিবুকের মতো শব্দ-বাক্যগুলো
কবেই গোগ্রাসে গিলে খেয়েছেন জীবনানন্দ দাশ!
শুধু চুষে চিবিয়ে ছোবড়া করে রেখে গেছেন
অতৃপ্ত যৌবনের মতো কুলটা বর্ণমালাগুলো।
তিনি হাজার বছর ধরে কামাসক্ত ছিলেন কিনা!
কুমারী শব্দ-বাক্য ছিনতাইয়ের সামগ্রিক দায়ভার
জীবনানন্দের কামুক বাহুতে সপে দেয়ার মানে
নিছক অত্যুক্তি করা, নিরর্থক গল্প ফাঁদা।
কে খায়নি আমার নির্বাচিত শব্দ-বাক্যগুলো!
একদিন স্বযত্নে 'অপসৃয়মান' শব্দটি লেখার পর
বিড়ম্বিত বর্ণমালার পিঠে আঙুল বুলিয়ে দেখলাম
নির্মলেন্দু গুণ বহু আগেই স্বহস্তে গোমটা খোলে
এ যাচিত শব্দখানির সম্ভ্রমহানি করে দিয়েছেন।
কে খায়নি আমার স্বনির্ভর শব্দ-বাক্যগুলো!
শক্তি খেয়েছেন, শম্ভু খেয়েছেন,
সুনীল সমুদ্র রফিক খেয়েছেন
মারজুকসহ অধুনার সুমন সুবহান, শোয়েব মাহমুদ-
কে খায়নি আমার প্রিয়তমা শব্দগুলোকে?
কে খাচ্ছে না ঊর্বর পলিমাখা বাক্যগুলো?
আমার বল্গাহীন, বিদ্যুতায়িত শব্দ-বাক্যগুলো
সবচে বেশি খেয়েছে মলয় হারামজাদা।
মলয় মানে হিমালয় ত্যক্ত মলয় নয়
মলয় মানে বঙ্গোপসাগর তাড়িত মলয় নয়
মলয় মানে 'মলয় রায়চৌধুরী', একটি মহানাম!
কৃষ্ণপক্ষের প্রত্যেকটি কৈবল্য তিথিতে
আমি তার বার্ধক্যপীড়িত পোঁদে চুমু খাই
দুই চন্দ্রমাসে শেষ করি তিরিশ দিনের হাজতবাস।
এমন সব হোমড়াচোমরাদের বেদখল থেকে
অনাথ বধূর প্রশব ব্যথার মতো
শাণিত শব্দবাক্যগুলোর আগাম জামিন এনে
এখনো লিখতে পারিনি একটি স্বকীয় কবিতা।
স্বকীয় কবিতা মানে- স্বকীয় কবিতাই
শব্দ-বাক্য-দ্যোতনায় যা একান্তই আমার, নিজের।
এমন একটি অতীন্দ্রিয় কবিতা লিখতে পারিনি বলে
কতোরাত জেগে আছি, ঘুম হয় না।