বিবর্ণ
      ইফতেখার হোসেন


ওর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না
কেননা ! ওর মুখের দিকে তাকালে
চোখ ফেরানো যাচ্ছিলো না
না! বিশাল কোনো কিছু নয়
এক্কেবারে নিরেট ছোট্ট খাট্ট ব্যাপার
পড়ন্ত দুপুরে মেঘ মাখা আকাশের নীচে
অড়হড়ের বন পেরিয়ে চুপিচুপি
নদীর ঘাটে ও  এসেছিলো সেদিন
সৌভাগ্য আমার আরও একবার
অতীতের ছোঁয়া পেলাম ।
হাতে ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বালতি
জেটির উপর হাটুগেড়ে বসে
বহমান জলের স্পর্শে ওর মনের কথাগুলোকে
এক এক করে বিদায় দিতেছিলো ।
চোখ এড়াতে পারলাম না ।
ভয়ও হচ্ছিলো পড়ে যাবে না তো !
না! রোজকের অভ্যেস !
রোজ আসে বার বার আসে
সব্বাই আসে আমিও এসেছিলাম
এই ঘাটে , সেইদিন
আসা যাওয়ার মাঝে ও যেন
কিছু দেখাতে চাচ্ছিলো
চুপসে যাওয়া মুখের হাসি
কিংবা আঁতে আঁতে লেগে থাকা উদর খানি
আর নয়তো বা নদীর জল দিয়ে
প্রশমিত করা উদর খানার দৃশ্য !
বেশ ভালোই সুডোল আর চাকচিক্য
করে দেই উদর খানাকে !
একবুক জলে নেমে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে
আরও উদ্বেল হয়ে পড়ি ,
কৌতুহল বশতঃ জিজ্ঞেস করি
তোমার নাম কী ?
“বিউটি”!
বাহ! সুন্দর নাম তো !
সুন্দরের মাঝে অসুন্দর
অসুন্দর সত্যিই !
ফ্যাকাশে মুখ, পেট আঁতে আঁতে লাগা
তুমি স্কুলে যাও ?
হ্যাঁ দুপুরে যখন খিচুড়ি দেয় !
আজ যাওনি --
ওরা বলছে পঁচিশে বৈশাখ
মা বলছিল “এইমাসেই আমাদের ঘরে
আগুন লেগেছিল”, তারপর !
আব্বা ওই কুশরের ডিহির
পাশের জমিতে গাড়া আছে ।
আমি রোজই যায়
“তুমি ওঠো মা কাঁদে
আব্বা জবাব দেয় না”
দাতুঁড়কি ঘাসগুলো রোজ বড়ো হয়ে যায়
মা বলে “তোর আব্বা
খুসমনের জন্য রোজ আনতো
আর হাটেও বেচতো
আমাদের হাড়ি চড়তো”।
আব্বা নেই’
মা ওই .........
দু-চার মুঠঠা যেই বাঁধে
আমিও মুড়তে শিখেছি ।
মা বলেছে  .........
“অ্যায়বার থ্যাকা আমরা
রোজ ভাত খেতে পাবো”।
সহমর্মীতা দেখানোর সাহস হয়নি......।
কিংবা কোন অধিকারে দেখাবো--
ফ্যাল ফ্যাল চোখে চেয়ে থাকল মেয়েটি ।
তোমার বয়স কতো ?
নয় !
সকাল থেকে কিছু.........
না,আর কথা বলার মতো অবস্থায়
ও রইলো না...
এক্কেবারে নীচে মাথা করে
মুখটাকে ঘুরিয়ে নিয়ে
গুরুদায়িত্বের কথাগুলো
মনে করিয়ে দিলো  !
সত্যিই লজ্জিত !
কথাটা আমার জিজ্ঞেস করার
দরকার ছিল না !
কিন্তু রোজ দেখি বলেই
আর দেখতে পাই না
কিংবা দেখা হয়না
ওদেরকে দেখার ভ্রূক্ষেপ থাকে না !
ভ্রূক্ষেপ ওর সৎ দাদারও নেই !
নানান কৌশলের শিকার হয়েই
অবশেষে নদীকে বন্ধু করেছে ‘ও’
দায়িত্বশীলা হয়ে গেছে এ বয়সেই  ।
চোখের কোণ বারবার মুছতে থাকে
নদীর জল লাল হয়ে এলে
ওপার থেকে আঁধার  নেমে আসে ...
আর এপারের দালানকোঠার
ভিতর দিয়ে বেরিয়ে আসে......
“এই তোর কয় বালতি হলো ?”
.........................................