বাদল  : ওগো মাধবীলতা, ভীষণ মনে পড়ছে
           তোমায়; মনে পড়ছে সেই দিনগুলোর
           কথা।
মাধবী : আমারো ভীষণ মনে পড়ছে তোমায়,
           তোমার পরশে যে আমি পেয়েছিলাম
           স্নিগ্ধতা।

বাদল  : মনে আছে তোমার? ঘুমুতে দিতে না
           আমায়, জাগিয়ে রাখতে সারাটা রাত।
মাধবী : হুম, খুব মনে আছে। তোমায় ছুঁতে
          খোলা জানালায় বাড়িয়ে দিতাম হাত।

বাদল  : আমি সে হাতে পরশ বুলাতাম গভীর  
           ভালোবাসায়।
মাধবী : হুম, আর আমি গভীর উপলব্দি করতাম  
           তোমায়।

বাদল  : দক্ষিণা বাতাসে তোমার এলোকেশ উড়ে
           পড়তো আমার গায়। আমি তোমার
           কেশে হাত বুলাতাম।
মাধবী : আমিও হারিয়ে যেতাম তোমায় নিয়ে দূর
           মোহনায়। আদরে সোহাগে পূর্ণতার জল
           ঢালতাম।

বাদল  : অনুভবে তুমি আমাকে বড্ড জরিয়ে
           ধরো, অথচ চোখ মেললেই তুমি নেই।
মাধবী : তুমিওতো আমার অধর জরিয়ে আদর
           করো, অথচ ঠোঁট উচালে তুমিও নেই।

বাদল  : তাই বুঝি?
মাধবী : হুম, বড্ড দুষ্টু তুমি, তবে তোমার
           দুষ্টুমিতে খুবই প্রীত আমি।
বাদল  : আমিও প্রীত ওগো মাধবীলতা, ছুঁয়ে
           তোমার কোমল ভূমি।

মাধবী : ওই দিনের কথা মনে আছে তোমার?
বাদল  : কোন দিন?

মাধবী : যেদিন কামিনী হাসছিলো বাহারে আর
          এই মাধবীলতা ভাসছিলো বাদল বীনায়!
বাদল  : হুম মনে আছে, তবে সেটা কী দিন
           ছিলো? ছিলো তো রাত। তুমি দিয়েছিলে
           সব বিনা দ্বিধায়।

মাধবী : তখন চাঁদের আলো ছিলো না,
          জোনাকিরা যেন রঙিন করে সাজিয়ে
          ছিলো সেই স্মৃতিঘেরা রাতটা।
বাদল  : হুম, তুমি আমি আঁধারে বাসর
          সাজিয়েছিলাম। আঁধারে সব হারালেও
          হারাইনি তোমার ঠোঁটটা।

মাধবী : কি করে হারাবে বলো, জোনাকি যে
          তোমার সাথে সখ্যতা করেছিলো।
বাদল  : হুম, তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁটটা
          আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দিয়েছিলাম। ওষ্ঠ যুগল
          যেন বড় বেশি তৃষ্ণার্ত ছিলো।

মাধবী : হুম, বড় বেশি তৃষ্ণার্ত ছিলো। তৃষ্ণাতুর
          এই মাধবীলতা স্নান করেছিলো বাদলের
          জলে।
বাদল  : তুমি বিনা বাদ্যে নৃত্য করছিলে; ঘুঙুরটা
           শব্দ করছিলে খুব যতনে, সাবধানে;
           ঘাম ঝরছিলো তোমার কপালে।

মাধবী : শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন ছিলো আমার, কিন্তু তা
          ছিলো পরম শান্তির। পূর্ণ প্রাপ্তিতে
          তোমায় শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিলাম।
বাদল  : তোমার কোমল আবদ্ধতায় আমিও
           নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

মাধবী : তারপর?
বাদল  : তারপর যা হবার তাই হলো। আমি
          কলমিলতা হয়ে নুয়ে পরলাম আর তুমি
          মাধবীলতা।
            ...

মাধবী : ফুলের কলি ছিলাম আমি, যেন অস্ফুট
          ফুল।
বাদল  : আর আমি তা প্রষ্ফুটিত করে সমস্ত গন্ধ
          নিয়ে তোমায় বাসি করে দিলাম। যেন
          গন্ধহীন, রসহীন নির্জীব বকুল।

মাধবী : হুম, আজ ফুলের গন্ধ নেই, রস নেই,
          নেই সেই সজীবতা। পাপড়িগুলো যেন
          টলে গেছে, অথচ ভিতরে ভিতরে
          সজীবতার নানান বাহানা।
বাদল  : বাহানা কেন বলছো, ও তো কামিনীর  
          কামনা।

মাধবী : ও শুধু তুমিই বুঝ, বাকীদের কাছে
          আমি যে মুকুলঝরা বকুল ফুল!
বাদল  : তাতে কী, তবুতো মনোহরা গন্ধেভরা
          প্রেমে আকুল। কোন কাননে গন্ধ
          ছড়াও? ছিলো যে সবাই তোমাতেই
          ব্যাকুল!
মাধবী : এখন আর সে কাননে মালি নেই, নেই
          ভ্রমর; ফুলটা আজ অযত্নেই পড়ে আছে,
          নেয় না কেউ তার খবর।
---------------------------------------------
            ২০ জুলাই ২০১৮ খ্রী: শুক্রবার