যেদিন তোমার সময় হবে, সেদিন আমার দিন ফুরাবে;
তুমি আসবেই, আসবে ঠিক অকালে।
যখন আমার নামে বাঁধাই করা নামফলক শোভা পাবে
একটি সদ্য সমাহিত সমাধিতে।

হয়ত হঠাৎ কারো মুখে শুনবে: “আকাশ মারা গেছে!”
তুমি থমকে উঠে বলবে: “কোন্ আকাশ?”
তার মতো করে তোমায় মনে করিয়ে দিবে;
আর তোমার মাথায় যেন আকাশটা‘ই ভেঙে পড়বে।
কিছুক্ষণের জন্য বিহ্বল হয়ে যাবে।
হয়ত চোখের কোণে দুফোঁটা জল এলেও আসতে পারে;
পুরোনো স্মৃতিগুলো তোমায় যাতনা দিলেও দিতে পারে।
কিন্তু আমি তোমায় কখনো দুঃখ দিতে চাইনি,
তাই তো তোমায় সেদিন জোর করে আমার হতে বলিনি।

তবে তুমি আসবেই; — তখন তোমার সময় হবে:
যখন আমি উঠে দাঁড়িয়ে “বড্ড ভালোবাসি তোমায়”
বলার শেষ শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলব।
তবুও তুমি বোকার মতো আমার সমাধির পাশে এসে
আত্ম-চিৎকার করে বলবে: “আকাশ ওঠো, ওঠো না!
কতদিন হলো তোমার মুখে ‘ভালোবাসি’ শোনা হয় না!
কতদিন তোমার লেখা নতুন কবিতা পড়া হয় না!
আমার জন্য আর ক’টা কবিতা লিখেছ? দেখাবে না?
আজকে তোমার সব কবিতা পড়ে শেষ করব। ওঠো প্লিজ!”

(মম পাশ হতে কোনো উত্তর মিলবে না সেদিন,
মায়া-মমতা-ভালোবাসা সব উপেক্ষা করে পড়ে রব;
পার্থিব সবকিছুর উর্ধ্বে আপনারে রচনা করব।
প্রকৃতির কোলে ভীষণ শান্তভাবে ঘুমিয়ে ‍থাকব,
স্বপ্ন এঁকেছিলাম এভাবে একদিন তোমার কোলে ঘুমাব;
কিন্তু জগতে কি সবার সব স্বপ্ন পূরণ হয়!
কিছু আশা অপূর্ণ রয়ে যায় বলেই তারে জগত কয়।
জগত কি আর স্বর্গ হয়!)

নিরুত্তর লাশের সাথে কথা বলে কেঁদে হুঁ-হুঁ করে উঠবে তুমি।
তখন আমি হয়ত সজাগ হতে বাধ্য হব,
আর বলব: “তোমার কান্না আমি সই কী করে বলো?
তোমার আবদার আমি ফেলি কী করে বলো?
যেদিন মুক্ত হতে চেয়েছিলে, সেদিনও আমি ‘না’ করতে পারিনি,
কারণ, ‘তোমার সুখের বিপরীতে আমার দুঃখ ভীষণ তুচ্ছ।’
ফিরে পেতে তবুও মিনতি করেছি কত!
আজ তুমি এলে, অথচ আমার সব ফেরার পথ বন্ধ!”

তুমি হয়ত আমার কোনো কথাই শুনবে না।
কী আজব তাই না? দুজন দুজনের কথা একপেশেই বলে যাব।
—এরই মধ্যে আমার ঘনিষ্ঠ কেউ তোমাকে ডেকে একটি চিরকুট দিবে,
যা আমার পুরোনো ডায়েরির মাঝে রেখেছিলাম।
চোখ মুছে চিরকুট’টি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করবে।

❝জীবিত থাকতে না হোক, মৃত্যুর পরে হলেও এসেছ;
আসবেই জানি, কারণ: এখন না হোক,
কখনো তো ভালোবেসেছিলে!
কিন্তু আমি তোমায় সবসময় ভালোবাসি।
নিজের যত্ন নিও। —ইতি: তোমার ‘ডিয়ার’ আকাশ।❞

এটি পড়ে শেষ করতে না করতেই তোমায় পেছন থেকে কেউ ডাক দেবে:
“আপু এখন চলো, ভাইয়া বাসায় এসে খুঁজবে তোমায়।”
— (কণ্ঠটি তোমার সঙ্গে নিয়ে আসা ছোটবোনের।)
তুমি পেছন ফিরে চোখ মুছতে-মুছতে বলবে: “হু! চলো।”
চিরকুট’টি হাতে মুড়িয়ে নিয়ে ফিরে যেতে শুরু করবে,
শেষবারের মতো যেতে-যেতে পেছনে তাকাবে আমার দিকে,
অথচ তোমার দৃষ্টিতে আমি থাকব না। থাকবে সমাধিস্থ কিছু মাটি।
আমার কাছে এসেছ, অথচ আমি কোথাও নেই।

—‘মানুষ এক আশ্চর্য প্রাণী, যার মৃত্যুর পরে কদর বাড়ে।
সময় ফুরালে আদর করে, ভালোবাসে, কাছে আসে।’
‘যখন পাওয়ার পথ সব খোলা থাকে, তখন দূর-দূর করে,
আর যখন পাওয়ার পথ বন্ধ হয়, তখন খুব করে চায়।’
                —মানুষের বরাবর বিরলের প্রতি ঝোঁক;
              লোহা যদি বিরল হতো, তবে ডায়মন্ড নয়,
অলঙ্কারের জন্য লোহাকেই মধ্যমণি হিসেবে চাইত।



রচিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭