যখন জন্ম হয়নি তোমার,
মৃত্যু তোমার কাছে উপহাস কিংবা অর্থহীন।
এখন তোমার জন্ম হয়েছে,
কিন্তু জন্মের পরে প্রাণ পাওনি তুমি;
পেয়েছ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণ এক অদ্বিতীয় যন্ত্র।
যখন তোমার কোষগুলো বিকশিত হতে থাকল,
তুমি বেড়ে ওঠোনি তখন;
মৃত্যুকে উপভোগ করার জন্য তৈরি হচ্ছ সবে!

মাতৃদুগ্ধ পান ছেড়ে দিলে যখন,
তখন তুমি পার্থিব নানান সুস্বাদু খাবার খেতে প্রস্তুত হওনি;
হয়েছ মৃত্যুর মতো‌ সুস্বাদু বিষ পানের যোগ্য।
বেড়ে উঠে খেলতে শিখলে যখন,
তখন তুমি বিনোদনের স্বাদ বুঝে ছুটনি;
ছুটেছ মৃত্যুর মতো মহা বিনোদনের এক অনন্য স্বাদের পেছনে।

সবকিছু বুঝতে শিখলে যখন,
তখন তুমি কিছুই বুঝতে পারনি চারপাশের;
তোমাকে বোঝাতে মৃত্যুই তোমার দিকে ধেয়ে আসছে!
পড়ালেখার বয়স হলো তোমার যখন,
তখন তুমি পড়ালেখা করবে বলে পাঠশালায় ভর্তি হওনি;
ভর্তি হয়েছ মৃত্যুকে স্বজ্ঞানে মেনে নিতে,
মৃত্যুর অনন্য স্বাদ রচনা করতে!

এবার মনে হচ্ছে তুমি যৌবনে পদার্পণ করেছ,
না! তুমি যৌবনে পদার্পণ করনি, যৌবনও পাওনি;
পেয়েছ মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট পরিণত বয়স!
মৃত্যুও তোমাকে ভালোবেসে ছুঁতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।

একসময় পড়াশোনার ইতি টেনে সনদ পেলে যখন,
সে তুমি যোগ্যতার সনদ পাওনি কোনো;
পেয়েছ মরণপত্র!
এই পত্র তোমার জীবন উপভোগের সহায়ক নয়,
করণ: সনদখানা পড়ে দেখ,
তোমার মৃত্যুর কথা’ই লেখা আছে সুস্পষ্ট করে।
আমার কথায় হাসছ বুঝি?
তবে দেখ তো, তোমার জন্মের দিনটি উল্লেখ্য কিনা?
আচ্ছা, এবার নতুন একটি তারিখ ঠিক কর,
মৃত্যুর দিনটি কোন্ দিন হবে তোমার!

তবুও মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে জীবিকা অন্বেষণের জন্য ছুটছ?
সে তুমি জীবিকার তাগিদে ছুটনি,
ছুটেছ মরণকে খুঁজে পেতে;
কারণ: মরণ ছাড়া তোমার খিদে কখনোই মিটবে না।

তারপর যখন বিবাহিত হলে, সন্তান পেলে;
সে তুমি আপন কাউকে পাওনি কিন্তু!
পেয়েছ তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে সাহায্যকারী!
অবাক হচ্ছ? যা-তা বলছি?
না! তুমি সত্যিই এদের চিন্তাতেই মৃত্যুর দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে!

এখন তুমি বাবা/মা থেকে দাদা/দাদি-নানি/নানি হলে,
এ যেন মৃত্যুর সব ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়-স্বজনদের নাম;
কারণ: তোমার জন্য এখন মৃত্যু ব্যতিত সবই অতীত।

তবে কী ভেবেছ? তোমার বয়ঃজ্যেষ্ঠতার জন্য তুমি
মোড়ল কিংবা জ্ঞানদাতায় পরিণত হয়েছ?
না! তাই ভেবে এখনো বেকুব থেক না,
কারণ: তুমি এখন মোটেও বয়ঃজ্যেষ্ঠ নয়;
তুমি মৃত্যু-জমের এক পরিণত খাদ্য।
আর মাত্র কয়েক মূহুর্ত পর হতেই মৃত্যুর পেটে
তোমার হবে চির আবাস, নিবাস, অনন্ত বসবাস!

এখন তুমি আর পৃথিবীতে নেই!
এখনো কি কিছু ভাবছ নাকি?
ভাবছ বোধহয় মৃত্যুর পরে অমর হয়ে থাকবে তুমি;
না! এটি একেবারেই ভুল ধারণা তোমার,
কারণ: তোমাকে মনে করার মতো কারো যে সময় নেই!
আর কে বা তোমাকে অমর করবে?
একই মৃত্যুর খাদ্য যে প্রাণীগুলো?
একটু অপেক্ষা কর, ওরাও তোমার কাছে আসছে...।

আহ্! মৃত্যুর এই অনুধাবনে আমি এখন সন্দিহান:
“আমি কি জীবিত নাকি মৃত এখন?”
আর যদি বেঁচেও থাকি,
তবে আমার মৃত্যুর জন্যই এ গদ্য কবিতা রচিত হলো;
কারণ: নির্ঘুম এক রাত ভেদ করে সকাল এখন।
হয়ত কিছুক্ষণেই মরে যাব, অর্ধ-মরণ কিংবা সম্পূরণ।
বেঁচে থাকতেই প্রতিদিন হেন মৃত্যুর সনে সাক্ষাৎ অনিবার্য।
মৃত্যুই চির জনম তবে, মৃত্যুই পরম আপন তবে;
তাই আমি প্রতিটি বস্তুতেই মৃত্যু দেখি,
প্রতিটি ভাবনাতেই মৃত্যু স্মরি, মৃত্যু লেখি,
প্রতিটি অস্তিত্বের দর্শন হতেই মৃত্যু শিখি।
মৃত্যুর নিদারুণ সত্য সদা আমায় দিচ্ছে যে হাতছানি;
কারণ: আমার সত্যিকারের জন্ম হবে মৃত্যুতেই জানি।

যেদিন মৃত্যুর কোলে পড়ব ঢলে,
উদর ভরবে আবে-হায়াতের জলে;
কারণ: মৃত্যুর পরে আর মৃত্যু নেই,
তাই— সত্যিকারের জন্ম মৃত্যুতেই!



০৯ এপ্রিল ২০২২, ফুলবাড়িয়া বাজার, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।