শ্রমিক, এ যে এক দিন-যোদ্ধার উপনাম;
যাদের যুদ্ধ নির্ভর এই পৃথিবী তামাম।
সাধক মহা-সাধক সব তুচ্ছ এ যোদ্ধাদের নিমিত্তে;
যারা পৃথিবী বক্ষের সক্রিয় হৃৎপিণ্ড।
যতদিন রবে এ হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন,
ততদিন রবে পৃথিবী, ততদিন বাঁচবে মনুষ্য।

হয়ত ওদের নেই ব্যক্তিত্ব, নেই মহত্ত্ব,
তবে আজ আমি স্বীকৃতি দিলাম,
ব্যক্তিত্বের মহত্ত্ব ওদের কাছে তুচ্ছ ভর্ৎসনা মাত্র;
ব্যক্তি ওরা তৈরি করে, ওরা জীবন দাতার কারখানা।
ওরা পৃথিবীর জীবন বাহন, ওদের কাঁধেই সকল জীবন,
তাকিয়ে আছে বিশ্ব, ওরা জীবিকার জোগান দিবে বলে।

সাধক, সে তো শ্বেত ভূষণে ধ্যানরত ঐ নির্জন কক্ষে,
বাস্তব পৃথিবী তার উপলব্ধির বাইরে,
ওরা জানে না যুদ্ধ কী করে হয়!
ওরা বোঝে না জীবন কারে কয়!
জীবন মানে চার দেয়ালের ঐ বেষ্টনিতে থাকা নয়,
জীবন মানে মাটির যুদ্ধে ছিনিয়ে আনা নিত্য-জয়।

যেই জয়কে দিন শেষে এনে দেয় প্রতিটি শ্রমিক,
দেহের সর্বস্ব দিয়ে বিসর্জন সুখ করে বর্জন,
জীবন হারাতেও দমে না এই সাহসী বীরের দল!
তবে কেন বিলাসীতার সাধক ঐ নোবেল পায় ঘরে বসে?
আমি বলি এ নোবেল প্রাপ্য তো ওই সব বীরের,
যারা দৈনিক যুদ্ধে জয় এনে জীবন বর্তায় মানবের।

দেখ মাটির সাথে ওই কৃষক মিশে কাদায় ভেসে ভুঁই চাষে,
রিকশাওয়ালা ওই ঘামে ভাসে অবিরত বার মাসে।
পৃথিবী সংস্কারে রাস্তার শ্রমিক ওই নিজেকে বিলায়,
প্রাণ বাজি রেখে শূন্যে দাঁড়ায়ে রাজ শ্রমিক ঐ গাঁথে অট্টালিকা,
জলে ডুবে রোদে শুকায়ে কত শ্রমিক ঐ সেতু নির্মাণ কাজে,
কত অজস্র এলোপাথাড়ি, কত শিল্প শ্রমজীবী ঐ কর্মরত।

যেদিকে তাকাই তাদের কৃতিত্বই দেখতে পাই,
শ্রমিক বিনা এই পৃথিবীর চলার বিন্দু সামর্থ্য নাই।
সেই শ্রমিক আজ লাঞ্ছিত বঞ্চিত বিত্ত সম্ভ্রমের দ্বারে,
এই লজ্জা আর বোঝাই কারে!
নির্লজ্জ কৃতঘ্ন মানব এ সংসারে।
ওহে মনুষ্য এক হও- শ্রমিক বাঁচাও, নিজে বাঁচ, সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়।


॥ রচিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮; আপনালয়, বংকুরা, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ॥