পৃথিবী গ্রহেরই তো নেই গ্যারান্টি,
আর মানুষ! তারপর মানুষের ঘর বাঁধা,
এ নিছক পাগলের প্রলাপ বৈ কী?
নক্ষত্রেরা ছুটে পড়ে মহাকাশ থেকে,
পৃথিবীর সাথে অভিমান করে
চাঁদ প্রতিনিয়ত যাচ্ছে দূরে সরে।
আর মানুষ! কী যে বলো?
মানুষের আবার ঘর হয় নাকি!
মাথার উকুন জানে না কখন
পড়বে দুই নখের মাঝে,
মৃত্তিকার পিপীলিকা জানে না কখন
পিষ্ট হবে কিসের তলে,
জলাশয়ের মাছ জানে না কখন
পড়বে জেলের হাতে ধরা;
আর এই গ্রহের মানুষও জানে না কখন-
নিয়তির কবলে পড়ে হবে সর্বস্ব হারা।
আয়ুটা যে বড্ড সংকীর্ণ,
ঘর বাঁধার সময় কই রে পাগল?
কোথায় ঘর বাঁধবি বল্?
কেউ দেবে না তোরে ঠাঁই,
এই পৃথিবীর মাটি, বাতাস, জল-
কিংবা মহাশূন্য এবং অন্য গ্রহ!
আরে বাদ দাও এত দূরের কথা,
নিজের দেহকে কতক্ষণ বিশ্বাস কর?
মানুষের কোনো নির্দিষ্ট ঘর নেই;
আত্মা যেখানে দেহকে বিশ্বাস করে না,
সেখানে বাড়তি কথা বলা তো দণ্ডনীয়।
কিসের আশায় ঘূর্ণিপাকে ঘরছ তুমি?
যেখানে জীবন ঘূর্ণির বেহালদশা!
নাটাই তো ঐ নিয়তির হাতে,
কখন যেন টান দিয়ে যাবে নিয়ে
তার অসীম অতল গহ্বরে
ঘর বাঁধার স্বপ্ন কখন দেখ তুমি?
আমি তো ঘরের মানেই বুঝি না!
এখন চতুর্থ প্রহর, রাত চার’টা বাজে;
এই কাব্য সৃষ্টির পরেই মৃত্যুকে দেবো চুম,
অর্ধ-মৃত্যু, যাকে তোমাদের ভাষায় বলে ঘুম।
ছয় ঘন্টা পরে আমি আর উঠব কিনা-
তার গ্যারান্টি আমার কাছে নেই!
তবে কী ঘর-ঘর করছ তুমি?
ঘর বাঁধতে স্বপ্নে বিভোর হতে হয় না,
ঘর তো আমাদেকেরই খুঁজছে;
এইত একটু পরে ঘুম থেকে আর না জাগলে
সাড়ে তিন হাত ঘর প্রস্তুত হবে আমার জন্য;
অথবা মহাবিশ্বের অসীম ঘর তো আছেই,
কোথাও না কোথাও ঠিক মিশে যাব;
এইত আমার ঘর, আমার সংসার,
এর বাইরে আবার ঘরটা কই?
ঘর-ঘর করে আমার মাথা খারাপ কর না তো!
আমি ঘর বলতে বুঝি কবর, শ্মশান আর-
মহাবিশ্ব, যেখানে চিরকাল মিশে রব।
তোমার ঘরের সংজ্ঞায় আমি লবডঙ্কা দেখি,
তোমার চোখে তাই অপদার্থও হতে পারি;
তবু ঘর বাঁধার ভিন্নার্থ আমায় বুঝিও না।
আমি ঘর ছেড়ে এসেছি দুনিয়ায়,
আবার ঘরেই ফিরে যাব, অনন্ত ঘর বাঁধব।
আমার সংসার মহাবিশ্বের সাথে,
প্রলয়ে-প্রলয়ে আমার ঘর ভাঙে, আবার গড়ি,
গড়েই চলি, তাই আমায় ঘর শেখাতে এস না।
আমি বড্ড ঘরোয়া ছেলে, —প্রকৃতির ঘরে।
তোমরা যাকে ঘর বল, আমি নাই তার তরে;
এই সামান্য আয়ু দিয়ে ভালোবাসা অসম্ভব,
এই ঠুনকো জীবন নিয়ে ঘর হয় না রে হাঁদা!
বড্ড বেমানান ধরাধামে মানুষের ঘর বাঁধা।
রচিত: চতুর্থ প্রহর, ২২ জানুয়ারি ২০২৪; মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭।