কত সখ ছিল লাতুর! একটা করবে প্রেম,
হইল না রে লাতুর এক’শ একটা প্রবলেম;
পকেটে নাই যে টাকা, হাতটা পুরো ফাঁকা,
ওদিকে স্বপ্ন লাতুর যাবে রাজধানী ঢাকা;
করবে একটা প্রেম এলিট মাইয়া পটাইয়া,
এভাবে সে স্বপ্ন দেখে ঘুমায় নাক ডাকিয়া।
একদিন ভোরে লাতুর ঘুম ভেঙে শোনে,
তারে নিয়ে করছে হাসাহাসি লোকজনে;
ভাঙা ঘর তাই সব সদর, দেখে ততক্ষণে—
প্যান্ট নাই পরোনে, জানে না কী কারণে;
পরে দেখতে পেল প্যান্ট ঐ কুকুরের মুখে,
যেমন কুকুর তেমন মুগুর মেরে দিল বুকে।
এবার লাতু লজ্জায় মুখ দেখাবে না কাউকে,
করল এক মহা পণ:- খুঁজতে যাবে বউকে;
তবে লাতু কিন্তু হুট করে করবে না প্রণয়,
হবে লাতুর এলিট প্রেমিকা, যে-সে তো নয়;
বহুকাল ধরে লাতু স্বপ্ন দেখেছে ভাঙা ঘরে,
খাবে সে বসে-বসে প্রেমিকা-বউয়ের পরে।
তাইত লাতু আজ রাতেই দেবে ঢাকা পাড়ি,
কিন্তু পকেট যে ফাঁকা, তাই জুটল না গাড়ি;
তাও যে যেতেই হবে তাই আঁটল এক ফন্দি,
বাসের পেছন ঝুলে-ঝুলে হবে যাত্রার সন্ধি;
যেই ভাবা সেই কাজ, কেউ বলে ধান্দাবাজ,
কেউ নামায় কলার ধরে, এভাবে পার আজ।
এখন লাতু ঢাকায়, কপালে চিন্তার ভাঁজ,
হাত পা ধরে রেস্তোরাঁয় নিল একটা কাজ;
ব্যস্! এবার শুরু অভিযান প্রেমিকা ধরা,
মেয়ে দেখে-দেখে ধরাকে জ্ঞান করে সরা;
নিজেরে ভাবে সে রাজ্যের রাজা-সহোদর,
বকশিশ পেয়ে-পেয়ে লাগে যেন তুলে কর।
কিন্তু লাতু কারো কাছেই পায় না সুযোগ,
ইতোমধ্যে কয়েকটি থাপ্পর করেছে ভোগ;
এভাবেই চলতে থাকে প্রস্তাবের অভিযান,
থাপ্পর-লাথি-উষ্টা পড়তে থাকে অফুরান;
এবার অধৈর্য হয়ে গেল রেস্তোরাঁ-মালিক,
বাধ্য হয়ে ঘাড় ধরে বের করে দিলো ঠিক।
অসহায় হয়ে রাস্তার পাশে করছিল কান্না,
এক ধনীর দুলালী দেখে এসে দিলো ধন্যা;
লাতুর অবস্থা শুনে গাড়িতে উঠাল তারে,
বাসায় নিয়ে দিল চাকুরী কেয়ারটেকারে;
এবার বুঝি খুলে গেল লাতুর ভাগ্য-মহল,
মেঘ না চাইতে পেয়ে গেল সে বৃষ্টির জল।
এতদিনের স্বপ্ন এইত মিটে বুঝি যায় রে,
তাইত লাতু মনে-মনে ডুগডুগি বাজায় রে;
মোটেও দেরি নয়, প্রস্তাবটা দেবে আজই,
মনে সে কি কনফিডেন্ট! হবেই হবে রাজি;
আর রবে না অভাব এবার পাবে চালিকা,
পা তুলে খাবে রে জুটিয়ে এলিট প্রেমিকা।
লুকিয়ে টপ থেকে ছিঁড়ে একটা গোলাপ,
সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে শুরু আলাপ—
লাতু: সারা জীবনের জন্য পাশে তোমার,
হয়ে থাকতে চাই ও ললনা কেয়ারটেকার;
ললনা: (রহস্যজনক হাসি দিয়ে) তাই বুঝি?
তোমার মতো পোলাকেই তো আমি খুঁজি।
লাতু তো খুশিতে বাকবাকুম করে উঠল,
অবশেষে কপালে এলিট প্রেমিকা জুটল;
লাতু সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল,
এমন সময় পাশে এক ভদ্রলোক আসলো;
লাতুর গলে ছুরি ধরে বলল: দিয়ে দে সব,
লাতু: ওগো কে যেন দুষ্টুমি করছে যত্তসব!
ললনা এসে: হা হা হা! দুষ্টুমি নয় রে বাবু,
তুমি আজকে আমাদের ফাঁদে মুরগি হাবু;
(পেটে ছুরি ধরে) দে সব জলদি দিয়ে দে,
লাতু: অ্যা... কী করলাম রে মোর খোদে!
সত্যি-মাইরি বলছি আমার তো কিছু নাই,
ললনা: ধর শালারে ধর, ল যা আছে তাই।
অতঃপর মোবাইল, ঘড়ি, বেতনের টাকা,
শার্ট, প্যান্ট তাও রেখে, দিয়ে দিল ছ্যাকা।
পরে শর্ট-প্যান্ট খালি গায়ে রাস্তায় হাঁটছে,
পাগল প্রায় নিঃস্ব হয়ে এখন লাতু ভাবছে:
“কী করলি রে লাতু? কী করলি ওরে গাধা!
এলিট প্রেমিকার লোভে চক্ষে দেখলি ধাঁধা।”
রচিত: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩; মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭