মাতাল হওয়ার শত ব্যর্থ চেষ্টাও মনে করিয়ে দেয়:
জীবনের কঠিন সত্য কখনো ভোলার নয়।
মহা দণ্ডাদেশে জেল হলেই কেবল মানুষ জন্ম নেয়,
জন্ম নেয় এক আমৃত্যু কারাদণ্ডের আসামি;
মৃত্যু ছাড়া যার কোনো মুক্তি নাই,
সংগ্রাম ছাড়া যার কোনো যুক্তি নাই,
এ যে সশ্রম কারাদণ্ড, আর জীবন্ত কয়েদি আমি।
কেবল মৃত্যুই বোধহয় আমাকে মুক্তি দিতে পারে
যন্ত্রণাময় এই সীমাবদ্ধ জীবন থেকে।
আমি অসীম পানে ছুটতে চাই,
মহা বিশ্বকে লুটতে চাই, চাই বিশ্বপতির ছাড়পত্র।
আমি ফিরে যেতে চাই আমার ঠিকানায়,
যেখানে আমার জনম জনমের সংসার;
ফেলে আসা সেই সংসারে কে কে আছে
কিছুই মনে নাই এখন, ওরা কি আমায় মনে রেখেছে?
আমি ফিরে গেলে ওরা কি গ্রহণ করবে?
নাকি আবার পাঠিয়ে দেবে পৃথিবীর কারাগারে?
আমি এক ব্যর্থ মাতাল,
মাতাল হওয়ার শত অসার চেষ্টা’রা মনে করিয়ে দেয়:
‘দেহযন্ত্র আর আত্মার বিচ্ছেদ না হলে
তুই মাতাল কি করে হবি রে পাগল?’
-হ্যা হ্যা আমি পাগল, কেবল মাতাল হতে পারলাম না!
একটুখানি মাতাল হতে পারলে
ভুলে থাকতে পারতাম বিষাদের তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা;
অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এই জীবন্ত কারাবাস,
মৃত্যু ছাড়া কি আর মুক্তি নাই?
অসীমের পানে মুক্তির দরখাস্ত নিয়ে ছুটছি দিগ্বিদিক,
কোথায় গেলে হবে মঞ্জুর এই আবেদন?
আমি মৃত্যু নয়, কেবল ছাড়পত্র চাই।
আমি ছুটে যেতে চাই ব্রহ্মাণ্ডের গ্রহ হতে গ্রহান্তরে,
জানতে চাই: আমার চেয়ে দুঃখ বেশি কার?
দেখতে চাই: আমার চেয়ে বেশি ছটফট করে কে?
ওরা কি আমার চেয়েও বড় বিষাদ-দাবানল?
আর সংগ্রামী? ঠিক পৃথিবী গ্রহের কয়েদির মতো!
তবে এবার ঘোষণা হোক মহা-সংগ্রামের,
কেঁপে উঠুক বিশ্বপতির চিরাচরিত মসনদ,
ভেঙে যাক যত একঘেয়েমি নিয়তি-নিয়ম,
মুক্তি পাক প্রতিটি আত্মা, মুছে যাক যত সীমাবদ্ধতা।
আমি যে মাতাল হতে চাই না,
কেবল দুঃখ ভোলার প্রয়াস;
জন্ম হতে জ্বলছি আমি বদ্ধতার বহ্নিতে,
একটি মহাত্মাকে যখন বন্দি করা হলো
এক টুকরো ছোট্ট রক্ত মাংসের সীমানায়;
তারপর দেখিনু এই ক্ষুদ্র গ্রহটাও, আর কিছু কয়েদি;
অতঃপর আবিষ্কার করতে পারলাম ‘এটা কয়েদখানা’
আর আমিও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণ এক কয়েদি।
রচিত: ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩; মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭