শুনছো মা? এদিকে একটু শোনো না!
বেডটা দেখ নতুন কেমন, কোলবালিশটা মানাল না,
(মা) কিরে! হঠাৎ করে কোলবালিশে আবার কী হলো?
— ইয়ে মানে কই কিছু নাহ্! বললাম এটা কতদিন হয়ে গেল...
(মা) কতদিন বা কই? সবে তো মাস ছয়, বেশিদিন তো নয়!
— ওহ্ তাইত, তাহলে কোলবালিশ নয়, বয়সটা বড্ড আমারই বোধহয়।
(মা) তবে রে বেটা! বলার ছিল বুঝি এটা?
— আসলে তা নয় রে মা, আমার বন্ধু জয়’টা,
ওর বেডে তো আর এখন কোলবালিশই লাগে নাহ্;
(মা) ওহ্ তাই নাকি? তবে তো বেশ ভদ্র ছেলে, বাহ্!
ধূর মা! তা না; শোনো আমার আরেক বন্ধু জিয়া,
ওর ও তো সামনে মাসের পঁচিশ তারিখে বিয়া।
(মা: কানমলা দিয়ে) অবশেষে বের হলো তোর ইয়েটা?
কী ভেবেছিস কিছুই বুঝি না? সাহস থাকলে বল্ ‘করতে চাস বিয়েটা’;
না—না-না, এমন ভীতু ছেলেকে তো বিয়ে দেয়া যাবে না,
যার মুখে বিয়ের কথাটাই স্পষ্ট বের হয় না!
ওই তো! তোর বাবা এসে গেছে, দেখো তো ছেলের...
(ছেলে মায়ের মুখ চেপে ধরে) —বললে কিন্তু খাওয়াব ভাত জেলের!
(বাবা) দেখ-তো কী লঙ্কাকাণ্ড!
(মা) লঙ্কাকাণ্ড না রে বাপু, এটা কোলবালিশকাণ্ড!
(বাবা) ওহ্ তাই নাকি! কিন্তু কোলবালিশকাণ্ডটা আবার কী?
(মা) তেমন কিছু না, তোমার ছেলের কোলবালিশে এলার্জি। (হি-হি-হি!)
(বাবা) ও.. এই বেপার! স্টোর-রুমে রেখে দিলেই হলো।
(মা) তাতে যদি হতো, ছেলে কি মাথা করত নত? কিরে বাবাকে বলো...
—বা..বাবা! আমি আর টিনা......
(বাবা) মানে তুমি এখন আর্জেন্টিনা?
না বাবা, আমি তো সাপোর্ট করি ব্রাজিল;
(বাবা) আচ্ছা বাপু বল তো কী মুশকিল!
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা!
(মা: হাসতে হাসতে) এ টিনা আর্জেন্টিনা না, এ টিনা অন্য টিনা!
(ছেলে: এবার সাহস করে) বাবা, আমি টিনা’কে ভালোবাসি।
(বাবা: রেগে) কী? কী বললে তুমি? কী করে হলে এতবড় সাহসী?
এ কথা তুমি আমাকে আগে বলনি কেন? কিসের ভালোবাসাবাসি?
আগে বললে করিয়ে দিতাম বিয়ে জবাই করে এক’শ খাসি!
(মা ছেলে শুনে থ!)
(বাবা: মজা করে) আর আমি তো আমার বাপকে এটা বলার করিনি সাহস’ই!
(ছেলে) কেন?... (বাবা) বললে তোমার দাদা দিত দণ্ড ফাঁসি।
(ছেলে কৌতুহলে) তবে কী করে করলে বিয়ে ভালোবেসে মা’কে?
(বাবা) একটু তো বেগ পোহাতেই হয়েছে আমাকে,
সে কালে তো আর তোমার মতো কোলবালিশকাণ্ড না বুঝতাম,
বাবাকে রাজি করাতে ভাবির পা ধরে তিন দিন বসে ছিলাম।
(ছেলে) হা-হা-হা! তারপর কী করলেন জনাব আবুল কালাম?
(মা) তারপর একটা কোলবালিশ-পাগল ছেলে কুড়িয়ে পেলাম। (হি-হি-হি!)
(বাবা) যাগ্যে, ছাড়ো, তোমাদের কোলবালিশকাণ্ড ভাল্লেগেছে, (হা-হা-হা!)
(মা) আহারে! যেমন বাপ তেমন ছেলে, সাথে কেমন তাল দিতেছে!
(বাবা: অন্যদিকে তাকিয়ে টানটান স্বরে)
রিণা, এটা কিন্তু তুমি ঠিক বললে না! বাবা-ছেলে,
বলো দেখি কোথায় মেলে?
আমার কোলবালিশ পাল্টেছিলাম সেই ত্রিশে,
আর তোমার ছেলের কিনা চাইছে এসে বাইশে!
(মা: দাঁত কামড়ে) এই দেখ, দুষ্ট’টা! এখন তুমি বাবার ভূমিকায় আছ কালাম।
(বাবা) ঠিক আছে, বাবা হলাম, এবার তবে আমি গেলাম...
(মা: শার্ট টেনে ধরে) যাবে আর কতদূর, আগে থামাও ছেলের কোলবালিশ সুর!
(বাবা) ঠিক আছে; রবি, দেখাও মেয়ের ছবি, আর বাড়িটা কদ্দুর?
(ছেলে) ধন্যবাদ বাবা, মেয়ে কিন্তু সুন্দর ছবির চেয়ে,
আর বাড়ী নিয়ে ভেবো না, তোমার অফিসের বড় বস রফিকের মেয়ে।
(বাবা, ফ্লোরে পড়তে পড়তে) ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন।
(মা) ও... রবি’র বাপ! কিসের উত্তাপ? কুল ডাউন কুল ডাউন।
(বাবা: শুয়ে) এবার যে আমার কোনো কূলই থাকবে না, কোন কূল ডাউন করব?
(ছেলে: হিরো পার্ট নিয়ে)
বাবা, তুমি কোনো চিন্তা করো না, এই কেসে আমি একাই লড়ব!
(বাবা) হারামজাদা দূরে গিয়া লড়, ভুলে যা এটা তোর ঘর।
(ছেলে) ঠিক আছে বাবা, তোমায় ছুঁয়ে কথা দিলাম আমি অনড়।
(বাবা) ধূর ছ্যারা, আর দিস না প্যারা, তোর মাকে ছুঁয়ে কথা দে রে...!
(মা) চাই মাফ, ওরে বাপ পথ মাপ, নইলে দেবো জলে ঝাঁপ রে...!
—এই শীতে জলে ঝাঁপ দিতে হবে না তোমার,
বুঝেছি, এই যুদ্ধে একাই লড়তে হবে আমার।
(কাঁদো কাঁদো সুরে) ঠিক আছে যাচ্ছি, বিদায় পৃথিবী!
(মা) ও বাছা..., তুই কি সত্যিই যাবি?
—হ্যাঁ মা, তোমাদের দেখাবই কোলবালিশকাণ্ডের শেষফল।
(মা) তুই তো এখনই ভয়ে কেঁপে শেষ, অনেক হয়েছে, এবার ঘরে চল;
নইলে তোর বাবার বস কেড়ে নেবে যে শেষ সম্বল।
(বাবা) তখন এই আলিশান বাড়ি নয়, ঠিকানা হবে জঙ্গল।
(রবি এক দৌড়ে রুমে গিয়ে টিনাকে টেলিফোন করল, কল ধরতেই কাঁদো কাঁদো সুরে বলল:)
দেখ টিনা, তোমার শয়তান বাবা রফিকের জন্য,
আমার ভীতু বাবা কালাইম্মা সব প্ল্যান করে দিল ক্ষুণ্ন!
কিরে, কই গো টিনা, কিছু বলছ না যে ঠিক?
(ও পাশ থেকে কাশি দিয়ে) এইত বলছি, আমি টিনার বাবা রফিক।
আমি তো অবাক! কালামকে দাও ডাক,
(ছেলে) কালা....ম্...., থুক্কু বাবা...., (বাবা) দেখ কাণ্ড, নাম ধরে দেয় হাঁক!
(বাবা আসতেই হাতে টেলিফোন ধরিয়ে দিল, আর ওই পাশ থেকে উচ্চ চিৎকারে:)
কালা.......ম্! (কালাম ভয়ে আচমকা বলে উঠল:) রফি......ক্! থুক্কু, ব....স্..,
(বস্) আগামীকাল অফিসে আয়, তোকে বানাব স...স্!
রচিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৩; বাসা: সাতমসজিদ হাউজিং লিমিটেড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭