আদম জন্মের পর থেকে তোমার জন্য
আমার মহাকালের অপেক্ষা শুরু,
তুমি পৃথিবীতে আসবে, আমিও আসব,
জনম জনমের তরে তোমায় ভালোবাসব।
বহুকাল পরে সে অপেক্ষার ঝিম কাটলো,
ক্যালেন্ডার-বিহীন বিশাল সময়ের পরে
খ্রীস্ট শতাব্দীর দু’হাজার বছর গড়ালে তোমার আসার সময় হলো।
তুমি আমি দুটি ফুটফুটে নবজাতকের শরীরে প্রবেশ করলাম।
বেড়ে উঠলাম আপন-ছলে, নিজস্বতার বৈশিষ্ট্যে।
কেটে গেল আরো বছর দেড় দশক।
বিদ্যাপীঠে তোমার আমার প্রথম দেখা,
দেখেই কেমন চমকে উঠলাম, অতি পরিচিত যেন।
আবিষ্কার করলাম মহাকালের সেই যোগসূত্র।
তুমিও চিনতে পারলে আমায়;
ধীরে-ধীরে ঠিক সখ্যতা হয়েই গেল।
এ যেন পদার্থের চৌম্বকীয় শক্তি, ভীষণ সম্মোহন।
মিলে গেল পরমাত্মার শান্তি সুনিবিড় নীড় আর আমার পূর্ণতা।
মহাকাল ধরে যে কথা জমেছিল তোমার আমার,
ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে সে কথা বলতে লাগলাম অবিরাম।
কথা যেন শেষই হয় না, আরো বেড়ে যায় শাখাপ্রশাখা।
এরই মাঝে প্রেম-ভালোবাসা, আদর-সোহাগ আর রাগ-
অভিমানের দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্কে ভীষণভাবে আটকে গেলাম দুজনে।
এ যেন অসীম তৃপ্তি, কেন আরো আগে পাইনি তোমায় খুঁজে!
এক জনমে তোমায় ভালোবেসে ফুরোবে না প্রেম,
জন্মান্তরেও তোমার তৃষ্ণা মিটবে না কিছুতেই।
ওগো, ছেঁড়ে যাবে না তো কখনো?
আমি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাব তবে।
কথা দিয়েছিলে, “জীবনপণে তোমার রবো চিরদিন।”
শান্তির নিশ্বাস নিয়ে বেঁচেছিলাম কিছুদিন,
অতঃপর আমার মৃত্যু হলো; স্বাভাবিক মৃত্যু নয়,
আমি খুন হলাম, কোনো শত্রুর হাতে নয়,
পরম আপন মানুষের বিষাক্ত একটি কথায়।
“আমি মুক্তি চাই তোমার থেকে”।
বেশ, সেই থেকে প্রাণের মানুষকে মুক্ত করে দিলাম।
আর আমি বন্দি হলাম ছোট্ট একটা কফিনে।
মৃত্যুর স্বাদ এত তিক্ত, জানলে বোধহয় পৃথিবীতে আসতে চাইতাম না।
অপেক্ষাই সুন্দর তবে, তারপর তোমার জন্য
আবার অপেক্ষা করতে শুরু করলাম।
আমি জানি, তুমি কেবল আমার জন্যই,
কারণ তোমার রেডিয়েশন আমাকে প্রচণ্ড প্রভাবিত করে,
আর আমার রেডিয়েশনও তোমাকে।
নেটওয়ার্কের বাইরেও আমরা যুক্ত থাকতাম,
না, আমি কোনো রোবোটের কথা বলছি না,
তবে পরমাত্মার আধ্যাত্মিক সিগন্যালের কাছে
রোবোটিক সিগন্যাল জীর্ণ বটে।
আমি এখনো অবচেতনে তোমারে পাই প্রতিনিয়ত,
তুমি তো ছেড়ে যাওনি আমায়,
তবে চোখ মেলে দুই দেহের এত দূরত্ব দেখি কেন?
চেতন মনে এত হোঁচট খাই কেন?
আচ্ছা, তুমিও কি আমার মতো হোঁচট খাও না?
আমাকে ভেবে তোমার নতুন মানুষকে জড়িয়ে ধরে ধোঁকা খাও না?
নাকি কেবল আমিই বোকা বনে আছি বিশ্বাসের কাছে!
জানি না, তবে আমি অপেক্ষায় রইলাম সেই চাঁদের,
যেই চাঁদ আমায় জড়িয়ে জোছনা মেখে দিবে নিয়ন আলোয়।
প্রকৃতির প্রাচীর ভেঙে যেভাবে তুমি আমি এসেছিলাম পৃথিবীতে,
ঠিক সেভাবেই আবার এক হব, অনন্তকাল তব বুকে রব।
ফিরে আসার যত বাঁধা তোমার, ভেঙে যাক কোনো প্রলয়ে,
সহস্র জনমেও তোমার শূন্যতা রয়ে যাবে আমার
তাই একটা তুমির জন্য আমি অপেক্ষা করব,
মহাকালের অপেক্ষা, জন্ম জন্মান্তরের অপেক্ষা।
রচিত: (মধ্যরজনী) ২৭ জুলাই, ২০২৪; সোলাই, রিয়াদ, সৌদি আরব।