গত ২১শে অক্টোবর ২০২৩ বিকালে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেছেন দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা আবৃত্তি প্রশিক্ষক শমীপর্ণা চক্রবর্তী।
তাঁর কাছে আধো-শৈশবে আবৃত্তি শিক্ষার পাঠ শুরু করেছিল আমার শিশুপুত্র শ্রীজিৎ। তারপর কেটেছে বেশ কিছু সময়, এসেছে এবং স্তিমিত হয়েছে ভয়াবহ অতিমারী। প্রতিকূলতা, ভৌগোলিক দূরত্ব সত্বেও সাপ্তাহিক ক্লাস বন্ধ থাকে নি।
অত্যন্ত স্নেহশীলা শমীপর্ণা ম্যাডাম স্নিগ্ধ ব্যবহারের যাদুতে ওকে বশ করেছিলেন। রবীন্দ্র সদন থেকে বাংলা আকাদেমী, গড়ফা থেকে নজরুল মঞ্চ- নানা অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে তিনিই ওকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রবেশ করতে শিখিয়েছেন বাংলা সংস্কৃতির মঞ্চে। পিতৃ-মাতৃ বিয়োগের মতোই মর্মান্তিক, বেদনাতুর এ বিচ্ছেদ, তাঁর স্নেহের ছাত্র শ্রীজিৎ-এর কাছে। আমাদেরকেও বাকরুদ্ধ করে দেয় বিপর্যয়ের এই মেঘভাঙা বৃষ্টি।
আমাদের ঘরের শিশুরা কবিতার সাথে পরিচিতি লাভ করে তো আবৃত্তি-শিক্ষার হাত ধরেই। শিশুমনে এইভাবে যদি বিস্তার ঘটে কবিতার মায়াবী ভুবনের, তবে সেই প্রাপ্তি শুধু শিশুর নয়, কবিতারও।
বড়ো যত্ন নিয়ে "যাদবপুর শব্দবিহঙ্গ" -এর পরিচালক শমীপর্ণা চক্রবর্তী তাঁর অনুরাগী শিশুদের কবিতা বলতে শেখাতেন। তাঁর আকস্মিক বিসর্জন, মহাসপ্তমীর বিকালেই এনে দিল, বিজয়ার বিষাদ।
অবশ্য বিজয়া দশমীতে বাংলার নানা প্রান্তে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কন্ঠে তাঁর শেখানো নানা কবিতার অনুরণন জানিয়ে দিল, শমীপর্ণা ম্যাডাম কোথাও যান নি। তাঁর কন্ঠ মিশে রইল বাংলার শীতল বাতাস হয়ে, তিনি রয়ে গেলেন তাঁর ছাত্রছাত্রীদের স্বরক্ষেপণের প্রতিটি পরিশীলিত ভঙ্গীতে।
শিল্পের বিনাশ নেই, শিল্পীর মৃত্যু নেই- কবিতা যাপনে সার্থক শিক্ষিকা শ্রদ্ধেয়া শমীপর্ণা চক্রবর্তী ম্যাডামের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শীতের এই বিষণ্ণ দ্বিপ্রহরে জানাই, অশ্রুসজল প্রণতি।
----------------০৪/১২/২০২৩---------------