প্রিয়তমা!
শুনে রাখো গত রাত ছিলাম রেল লাইনের
ধারে এক জনহীন প্রান্তরে।একটা বনভূমি
ছিল অদূরে।আগের রাত্রিতে ঘটলো ঘুমের
ব্যাঘাত।গত রাতটুকু  ঘুমিয়েছি অঘোরে।
তারপর আজ এক কাণ্ড ঘটলো ভোরে।
ঘুম ভাঙ্গলে চোখ মেলে অপ্রত্যাশিত ভাবে
দেখেছি একটি হনুমান,বসে আছে শিয়রে।
মনে জাগলো ভয়।তখন ভেবেছি কি জানি,
কী হয়!
তোমাকে বলিনি আগে,বন্য-পশুদের প্রতি
এই ভয় আমার শৈশব থেকে।ধারে কাছে
এই হনুমানকে দেখে আতঙ্ক বাঁধলো বাসা
মনের ভিতর।কাঁপন ধরলো শরীরে।
প্রিয়তমা,পশু-শক্তির কাছে হার মানা রপ্ত
করেছি সেই শৈশবে।সেটা বহাল তবিয়তে
এখনো মিশে আছে স্বভাবে।হনুমানকে দেখে  
কা-পুরুষোচিত ভয়ে সে সময় নিজ শরীরে
চিমটি কেটে বুঝতে চেয়েছি আমি তখনও
কি বেঁচে আছি?
বুঝেছি নিউরনের দৌলতে অনুভূতি গুলো
জেগেই আছে।কী বলে বোঝাবো তোমাকে,
আমি হতবাক,সেও আমার দিকে তাকালো
করুণ দৃষ্টিতে।দু ফোটা জল ঝরতে দেখেছি
তার চোখ থেকে।অনুভব করেছি সে সময়
সেও আমাদের পূর্ব পুরুষের বংশধর।হয়তো
আজকের কোন বার্তাবাহক।
তারপর সে চলে গেল নিঃশব্দে নীরবে।
প্রিয়তমা,পরিযায়ী হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে
দেখেছি অদ্ভুত ব্যাপার।এক শ্রেণীর মানুষ
এখন বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমণে সুনির্দিষ্ট
ভাবে সব পরিযায়ীদেরকে অপরাধী ধরে
তাদের সবার উপর নিয়ত চালাচ্ছে কড়া
নজরদারি।
বিধাতা দেখছেন অলক্ষ্যে অধুনা সমাজের
কতিপয় সুধী জন পরিযায়ীদের নিজেদের
গৃহে প্রত্যাবর্তনকে প্রতিরোধ করতে লাঠি
হাতে প্রস্তুত হয়ে আছে এখন।
ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় কোন ভাবে
যেতে দিতেও দিচ্ছে না তাদের নিজেদের
বাড়ি ঘরে।সংক্রমণের আশঙ্কা অমূলক নয়,
তাই বলে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ীদেরকে ঠেলে
পাঠাতে হবে যমের দক্ষিণ দুয়ারে?
প্রিয়তমা,জেনে রাখো সেই দাসপ্রথা থেকে
বিশ্ব জুড়ে পরিযায়ীরা সুলভে নিজেদের
বিকিয়ে দিতেও অভ্যস্ত।এই আবহে রোগ
সংক্রমণ রোধে ওরাও প্রস্তুত হয়ে আছে  
কোয়ারেন্টীন সেন্টারে যেতে।
তাদের দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলো
কিনা যাচাই করে সেথায় পাঠালে ক্ষতি
নাই,কিন্তু আছে কি সেটুকুর ও যথাযথ
বন্দোবস্ত?
জানো,বিজ্ঞরা বলেন পরিকাঠামোর অভাব।
তাদের কাছে সবিনয়ে জানতে ইচ্ছা করে,
বিশ্ব জুড়ে কালো টাকার মজুত ভাণ্ডার কি
পরিযায়ীদের নিজেদের ঘরে?সেই ব্যাপক
অর্থের ছিটে ফোঁটাও যদি পরিকাঠামোর
উন্নয়নে খরচ করা হতো,তবে এই দুর্যোগে
এই সমস্যাকে নিয়ে কি ভাবতে হোত?
এই কথাটি জানা দরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ
নানান রূপে আসবেই বারংবার।তারা কি
একই অজুহাতকে হাজির করবে বারবার।
জানতে আরও ইচ্ছা করে কতদিন একই
অজুহাতকে মাগুর মাছের মতো  জিইয়ে
রাখা সংগত?
পরিযায়ীদের দুর্দশা পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।
তাদের জন্য গঠিত কোয়ারেন্টীন সেন্টারে
নেই মাথা গোঁজার ঠাই।তর্ক-বিতর্ক চলছে,
তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা।সেসব নাকি
যথাযথ ভাবে হচ্ছে না যাচাই।
প্রিয়তমা,জানতে খুবই ইচ্ছা করে স্ব-দেশের
লক্ষ লক্ষ শ্রমিকেরা কি সবাই উহান থেকে
করোনা ভাইরাসে নিয়ে ফিরে গেছে দেশে?
যতদূর জানি,কাজে কর্মে বেরিয়ে অনেকেই
এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে নিজ দেশে।
বিজ্ঞ জনেরা কি বলবেন,ওরা কী অপরাধ
করেছে?কেন সমাজ সব পরিযায়ীকে দূরে
ঠেলে দিচ্ছে সন্দেহের বশে।
কোন দেশের সংবিধানে কি কোথাও লেখা
আছে এই তুঘলকি করা যায় ইচ্ছার বশে।    
প্রিয়তমা,প্রত্যেক রাষ্ট্র দেশের নাগরিকদের
নিরাপত্তা নিতে অঙ্গীকার বদ্ধ।সংবিধানের
মুখবন্ধে তার উল্লেখ আছে।এই শর্ত পূরণ
না হলে কখনো হবে না রাষ্ট্র-গঠন।আজ
লক্ষ লক্ষ পরিযায়ীর দুর্দিনে রাষ্ট্রের তরফে
শর্তটি রক্ষা করা অতি আবশ্যক।
প্রিয়তমা,বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে জানতে
ইচ্ছা করে তারা কি বেমালুম ভুলে গেছেন
পরিযায়ীদের ছিল এবং আছে ভোটাধিকার।
তাদের ভোটেই গঠিত হয় দেশের সরকার।
বিজ্ঞরা কি এবার স্বীকার করবেন তাদের
ব্যর্থতার দায়,নাকি তারা ভাসবেন স্রোতে,
আবহমান জল যেদিকে গড়ায়?
জানি না,জনগণ ভাববে কি পাশাপাশি এই
অচলাবস্থা কাটাতে কী করা দরকার।
প্রিয়তমা,এখন মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ
পর্যায়ে।খুব শীঘ্রই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ
বিচ্ছিন্ন হতে পারে।সেজন্য বলছি আগেভাগে,
আমাদের গন্তব্যের এই পর্যায়ে সাংবাদিক ও
চিত্র সাংবাদিকরা রাখছেন নজরে।যদি দেখো
আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন,সেসময় টিভির
নিউজ চ্যানেলের খবর দেখে নিও।আমাদের
সব খবর পাবে সেখানে।
সাংবাদিকরা দায়িত্ব সহকারে পরিযায়ীদের
সব খবরাখবর টিভির মারফৎ পৌঁছে দেবেন
ঘরে ঘরে।
তোমাকে আরও বলে রাখি,খোকন সহ মা
এবং বাবার দিকে লক্ষ্য রেখো।নিজের প্রতি
নজর দিতেও ভুল করো না।
প্রিয়তমা,রেললাইনের দুধারে শুধু ঝোপঝাড়।
কোন অস্থায়ী আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা নাই।মুক্ত
আকাশের নীচে রেললাইনের উপর সারিবদ্ধ
ভাবে ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া দেখছি না কোনও
উপায়।
আজ রেল লাইনে ঘুমবো সবাই।রাখছি তবে।
                  ইতি
            তোমার প্রাণেশ্বর।

          (সমাপ্ত)