ইদানীং তার শরীরের এ কী হাল! কঙ্কালসার
শরীর, ভাঙ্গা চোয়াল। শরীরে নেই মাংসপেশি,
অপুষ্টিতে যেন এই হাল।
অকালবার্ধক্যে ধরাশায়ী এই বৃদ্ধের ভেঙেছে
বুকের পাঁজর। কষ্ট সইতে না পেরে করেছে
চিৎকার।
তবু কেউ সেদিকে তাকায়নি ফিরে। অগত্যা
সে আর কি করে? বাধ্য হয়ে দাঁত খিঁচিয়ে
চোয়াল শক্ত করে শুয়ে আছে।
নির্মমতার শিকার! মোটেও বিরাম নেই। তার
বুকের উপর দিয়ে অহরহ ছুটছে গাড়িঘোড়া,
যাতায়াত করছে অগণিত লোকজন।
যাচ্ছে বটে, যেতে হচ্ছে প্রাণ হাতের মুঠোতে
নিয়ে। মুহুর্মুহু ধাক্কা লাগছে এ বৃদ্ধের বুকের
পাঁজরে।
কষ্টে সে উহু আঃ করছে চিৎকার। তবে তাতে
কী? যারা জনসেবায় নিয়োজিত তাদের কেউ
সেদিকে তাকায়নি ফিরে। তবে বিপত্তি লেগে
আছে তাকে ঘিরে!
তার বুকের উপর দিয়ে যাবার সময় কত যে
পথচারী, গাড়িঘোড়া মুখ থুবড়ে পড়েছে, কে
সেই হিসাব রেখেছে?
এইতো সেই ছোট্ট ছেলেটা যে কিনা টিউশনি
পড়তে যাবার সময় পথ দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
তারপর শুরু হলো জনগণের ক্ষোভ বিক্ষোভ,
বাড়লো জনরোষ।
বৃদ্ধের প্রতি যাদের অবহেলায় প্রায়শ ঘটছে
পথদুর্ঘটনা, তাদের সবাই এখন পগারপার।
দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও তাদের দেখা নেই
আর।
বিক্ষুব্ধ জনগণ তাদের প্রতি ধিক্কার জানালে
কি হবে? বৃদ্ধ এই রাস্তার প্রতি তাদের আছে
নাকি দায়িত্ববোধ?
শুধু কি তাই? হতে বাকি নাই গোঁদের উপরে
বিষফোঁড়া!
এই ভঙ্গুর, অবহেলিত রাস্তাকে সামনে রেখে
অনেকে অবৈধ উপায়ে করছে আয় রোজগার,
ভাবখানা এ যেন তাদের অধিকার।
রাস্তার দিকে একটু নজর দিলে ঘটতো নাকি
এতো পথ দুর্ঘটনা? তবে হতো নাকি তাদের
অবৈধ রোজগার?
বুঝেছে তারা রোজগারের এই সুবর্ণ সুযোগ
থাকতে সেই পথে যাওয়ার কি দরকার?
বৃদ্ধের প্রাণ ফুস করে উবে গেলেও তাদের
কি আসে যায়? পথচারীরাও দুর্ঘটনায় পড়ে
মারা গেলে কিংবা বড় বিপত্তির শিকার হলে
তারা নেয় না সেই দায়।
দেখে মনে হয় তাদের মনুষ্যত্ববোধ ফর্মালিনে
সিক্ত, নয় তো কেন এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়?