মাকড়সা চিরকাল মেতে থাকে জাল বুনে
পোকামাকড় শিকার করার নেশায়। দেখেছি
এক মাকড়সার কাণ্ড।
এক যুগের বেশি সময় সেটি যেখানে সেখানে
জাল বুনে পতঙ্গদের শিকার ধরার ফাঁদ পেতে
বসেছে।
এ কাজে সে একা নয়, কিছু চেলা-চামুণ্ডাদের
সাথে জুটিয়ে নিয়েছে।
জোনাকিরা রাতের অন্ধকার ঘোচাতেই ব্যস্ত।
তারা রাতে আলো না- ছড়িয়ে থাকতে পারে?
হায় রে, এ কী দুঃসময়! মাকড়সার জালের
ধারেকাছে আলো ছড়াতে গেলে বিপদ যেন
তাদের কেও তাড়া করে!
এযাবৎ বহু জোনাকি পড়েছে মাকড়সার জালে।
খাবার নাগালে পেয়েও মাকড়সা সেটি ছেড়ে
দিয়েছে কোন কালে?
নির্যাতনের শিকার হয়ে বহু জোনাকির জীবন
বলি দিতে হয়েছে। কালের চাকা বন বন করে
ঘুরলেও কী, সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে।
এইতো সেদিন এক জোনাকি কে এভাবেই
জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে।
কে জানে, মাকড়সা কি ভেবেছে? সে এভাবে
চালাবে জীবৎকাল? সে কি বোঝেনি এখন
পরিস্থিতি আমুল বদলেছে?
দেখেছি জোনাকির মৃত্যুর পরে ঘটছে কত কী!
সব জোনাকিরা একত্রিত হয়ে এই অন্যায়ের
প্রতিবাদে মাকড়সার কাছে এ কাজের সাথে
যুক্ত সব অপরাধীদের যথাযথ শাস্তির দাবি
করেও হলো কী?
এমন ঘটনাও আর যেন না ঘটে সেই ব্যবস্থা
গ্রহণের জন্য মাকড়সার কাছে অনুরোধ করলে
সে তাদের কোনও কথায় কর্ণপাত করলো
কোথায়?
আপোষে সমঝোতার সব রাস্তাও বন্ধ করে
নিশ্চিন্তে বসে আছে। কে জানে, মাকড়সা
মেতেছে কিসের নেশায়? এই অন্যায় কি আর
সহ্য করা যায়?
জোনাকিদের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছে
মথ, প্রজাপতি, মশা, মাছি যারা ডানায় ভর
করে সব সময় উড়ে বেড়ায়।
তারাও উড়ে বেড়াতে গিয়ে নিয়ত মাকড়সার
জালে আটকে জীবন দিচ্ছে। জোনাকিরা সহ
তারা সকলে মাকড়সার এই অন্যায় কাজের
প্রতিবাদ করেও হলো কী?
মাকড়সা তাদের সব দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে
দিয়েও থেমে থেকেছে নাকি?
জোনাকিদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ করার
হুংকার দিয়ে বসেছে। ভাবখানা জোনাকি সহ
পতঙ্গরা মরলেও ওর কি যায় আসে?
এই পরিস্থিতিতে কেউ কি আর থাকতে পারে
বসে? বাঁধতে পারতো আরেকটা কুরুক্ষেত্র
যুদ্ধ।
দেখেছি জোনাকিরা ন্যায়ের পক্ষে, রক্তক্ষয়ের
বিরুদ্ধে। তারা দাঁতে দাঁত চেপে কষ্ট সহ্য করে
নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে করছে আমরণ
অনশন।
দুর্ভাগ্য বটে, এই ধর্মযুদ্ধ এক পক্ষকাল কেটে
গেলেও তারা মাকড়সার বিবেক কে নাড়াতে
পারলো আর কোথায়?
বিরোধের দায় কাঁধে নেওয়া দুরস্ত মাকড়সা
বরং মেতে উঠেছে জোনাকিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করার নেশায়।
এখন জোনাকিরা পৌঁছে গেছে সহ্যের শেষ
সীমায়। কে জানে, জোনাকিরা বুকে কষ্ট চেপে
রেখে অনশন করতে গিয়ে প্রদীপের সলতে
পোড়াবে আর কতদিন?
অন্যান্য পতঙ্গরা এই দৃশ্য দেখে চুপ করে
থাকতে পারে? তারাও জোনাকিদের পক্ষ নিয়ে
এখন প্রতিবাদে হয়েছে সোচ্চার।
মনের অলিন্দে জিজ্ঞাসা উঁকি মারে এরপরে
তাদেরকে নামতে হবে নাকি সরাসরি বৃহত্তর
সংগ্রামে?
পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, মনে জাগে সংশয়
আবারো ঘটবে কি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ?
এই যুদ্ধ এখন কোনদিকে গড়ায় থাকতে হচ্ছে
সেটি দেখার অপেক্ষায়।
জানতেও ইচ্ছা হচ্ছে এই যুদ্ধে ধর্ম না অধর্ম
জিতবে কে?