হিমালয় দেখতে চাইনি একা একা
একরোখা মনকেও সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি
ভাবিনি জীবনের পথ বড়ো আঁকাবাঁকা,
কী একটা বোধ যেন বাদ সেঁধেছিল, কি জানি!
ভেবেছিলাম হিমালয় দেখবো সন্তানকে নিয়ে
সে নিজেও দেখবে, আমাকেও দেখাবে
রোজ ভেবেছি সেই স্বপ্নপূরণ হবে কিভাবে?
স্বামী সন্তান নিয়ে ছিল অভাবের সংসার,
নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতোই ব্যাপার
একটা ছোট্ট দরমার ঘরে ঠাই
ভালোভাবে আলো বাতাস চলাচলেরও ব্যবস্থা নাই।
যে যাই বলুক তাকাইনি কোনদিকে ফিরে
সারাজীবন কাটিয়েছি দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে।
প্রতিদিন ঘুমিয়েছি আর কতখানি?
রোগ ব্যাধির কাছেও হার মানিনি
মনের ভিতর সারাক্ষণ কাজ করেছে ভয়
যাচ্ছে যে সময় বড়ই নির্দয়, তাকাবে না ফিরে।
কি জানি, জীবনসংগ্রামে পিছিয়ে পড়ি কিনা
তাই বিনা দ্বিধায় রোগব্যাধিদের নিত্যসঙ্গী করে
রোজ সারাদিন ধরে খেটেছি হাড়ভাঙ্গা খাটুনি
মুখ বুজে টেনে গেছি সংসারের ঘানি।
সারাদিনের কাজের পরে নড়বড়ে শরীর নিয়ে
রাতে ঘুমোতে গিয়ে বিছানায় শুয়ে
ভেবেছি নিজের জীবনে যতই কষ্ট হোক
সন্তানকে বড় করতেই হবে,
শিক্ষায় প্রতিবেশী কারো চেয়ে যেন পিছিয়ে না পড়ে
মাথা তুলেও দাঁড়াতে পারে প্রতিযোগিতার দৌড়ে।
সে এখন উচ্চ শিক্ষিত, বিদেশে কর্মরত।
নিজে পছন্দ করে বিয়ে করে পেতেছে সংসার
এক সন্তানও হয়েছে তার।
জীবননদী বদলেছে অভিমুখ
সুখ সাগরের দিকে ছুটতে গিয়ে
মায়ের কথা বেশি ভাববার অবকাশ নেই তার।
ক'বছর হলো স্বামীও হয়েছে গত
এখন বার্ধক্যে পৌঁছেছি, শরীরও জবুথুবু
একা থাকতে গিয়ে আগলে ধরেছে একাকীত্ব।
রোগব্যাধির কারণে প্রায়শ হতে হয়
চিকিৎসকের শরণাপন্ন
কখনো কখনো চলে বৈকি যমে মানুষে টানাটানি
ভাবি, জীবনের দিকদর্শন ঠিক ছিল কিনা, কি জানি!
এখন জীবন সায়াহ্নে এসেও হিমালয় দর্শন দুরস্ত
ভাবি, কখন ঘনিয়ে আসবে সূর্যাস্ত।