রানীমার পোষা ময়নার জুড়ি মেলা ভার।
অভাবও নেই তার তৎপরতার।
সেটি বেশ রপ্ত করেছে রানীমার শেখানো
বুলি, 'যা গেছে যাক। সেসব খোঁজাখুঁজির
আর নেই দরকার।'
'খাঁচা বন্দি পাখি সারাদিন সেই বুলি বলে
যাচ্ছে অনর্গল।'
কে জানে, কালনদী বইছে কোন খাতে আর
কোন দিকে গড়াচ্ছে জল।
বিহ্বল দৃষ্টিতে দেখেছে অনেকেই দাউ দাউ
করে জ্বলে উঠলো অভাগীর চালাঘর আর
পুড়তে শুরু হলো তার গৃহস্থলী, চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়েছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
কী কারণে লেগেছে আগুন সে তো তদন্ত
সাপেক্ষ, তবে বাতাসে কান পাতলে এখন
বিড়ালের ম্যাও ম্যাও ডাক শোনা যায়।
কি জানি, খুঁজলে কার থলি থেকে বেরবে
সেই কালো বিড়াল।
তার ঘর জ্বলছে দেখে অভাগী করেনি দেরি।
হাতের সমস্ত কাজকর্ম ফেলে রেখে হন্তদন্ত
হয়ে ছুটে এসে প্রতিবেশীদের সাথে সে হাত
লাগালো আগুন নেভাতে।
লেলিহান আগুনের শিখা, চেষ্টা করে পারেনি
নেভাতে। ব্যর্থ হয়ে ভাবলো সে এই কি ছিল
বরাতে?
শাড়ির আঁচলে ঘাম ও চোখের জল মুছে সে
দেখলো চেয়ে, রানী মা পেয়াদাদের নিয়েই
তার সামনে এসে হাজির, কাঁধে সেই পোষা
ময়না।
ভাবলো অভাগী, রানী মা হয়তো জানাবেন
তাকে সমবেদনা। ভাগ্যের বিড়ম্বনা, সে আর
হলো না।
রানী মা অভাগীকে আগুনে লোহার শিক দিয়ে
কিছু খোঁজাখুঁজি করতে দেখে তাকে জিজ্ঞেস
করে জানলেন, খুঁজছে সে তার জীবনের শেষ
সম্বল, ছোট্ট এক বাক্স যাতে ছিল তার দু'গাছা
রুপার চুড়ি ও দু'টি কানের দুল।
তারপরও তাকে হুলে বিদ্ধ করতে যেন এই
রানীমার বিবেকে বাঁধেনি।
তিনি তাকে সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ দূরে সরে
যেতে বলে পেয়াদাদের নির্দেশ দিলেন,'এখনি
আগুন ছাই চাপা দাও। দেরি হলেই এই আগুন
চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পেয়াদারা তাকে দূরে সরিয়ে দিলে অভাগী সরে
এলো বটে, তার অন্তরে বয়ে যেতে লাগলো সর্বস্ব
হারানোর যন্ত্রণা।
সেসময় ময়না গাইতে শুরু করলো, 'যা গেছে যাক।
সেসব খোঁজার আর নেই দরকার'।