অনিমেষ, ঘনিয়ে আসছে সূর্যাস্ত,
বার্ধক্য এসে জীবন যুদ্ধে হয়ে পড়ছি বিধ্বস্ত
তোকে বলার মতো রয়েছে অনেক না বলা কথা,
বলবো কি বলবো না সেনিয়ে করেছি ইতস্তত।
বলি, সেই কবেকার কথা, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ
অভিমুন্যও চক্রব্যূহে হয়ে পড়লেন অবরুদ্ধ
বাদবাকি পদাতিক ও অশ্বারোহীদের কথা থাক,
না-ই বলা হলো, নজরে যখন মহাবলীদের যুদ্ধ।
কালের রথের চাকা ক্রমাগত গড়াচ্ছে বলে
কে আর শুনতে পায় চাকায় কড়কড় শব্দ হলে?
শোনার সুযোগ হয়নি যোদ্ধাদের তজ্জন গর্জন
জানতে পারেনি যোদ্ধাদের কে কখন পড়েছে ঢলে।
বলবি বোধ হয় এখন ঝেড়ে ফেলতে পেরেছি কি হতাশা?
বুঝলি অনিমেষ, আজও দোলাচলে আশা নিরাশা
বোধ হয় একথা না বললেই নয়
সন্ধ্যা গড়ালেই শব্দদানব এখানকার বাদশা।
প্রায়শ চারিদিকে চলছে এক অদ্ভুত খেলা
না বললেই নয় সঙ্গতে আছে নানান মেলা।
একটুকু থমকে গেলেই মেলা খেলা
মুখ ভার না-করে বাদশার গর্জে ওঠার পালা।
ঠক ঠক করে কাঁপে ঘরের কাচের জানালা
বুকের ভিতর কী যে অবস্থা হয় যায় না বলা!
বোধ হয় ঘনীভূত হয় দুর্যোগের মেঘ
তার গম্ভীর গর্জনও শুরু হয় অবেলায়।
মেঘের হাঁকডাক ভাবিয়ে তোলে বারংবার
বুক কেঁপে উঠলেই একটিবার
আবারো মেঘ যদি গর্জে ওঠে এই ভেবে  
ভয়ে কানে তুলো গুঁজে বুক চেপে ধরি বারবার।
যখন আরাধ্য দেবতার নাম জপ শুরু করি
দুর্যোগের মেঘ কাটবে কখন এই ভেবে
কানে পৌঁছায় মাইকে ঘোষিত বার্তা তড়িঘড়ি
প্রকৃতির মুক্তমঞ্চে প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে সবে।
শুরু হচ্ছে সাড়া জাগানো গান বাজনার আসর
প্রতিযোগীরা পালা করে আসর জমাতে তৎপর
কারো কষ্ট হলেও কেউ আতঙ্কিত হবেন না অযথা
শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীকে শিরোপা পড়ানো হবে অতঃপর।
প্রতিযোগীরা প্রস্তুত হয়ে আছে সবুজ ঘরে
একের পালা শেষে পরবর্তী প্রতিযোগী উঠবে আসরে
অনিমেষ এই শব্দের খেলায় কানে ধরে ঝালাপালা
আকাশের মেঘরাশিও ভয়ে পালাচ্ছে দূরে।
একটু আগেও ছিল এর থেকে পরিত্রাণ খোঁজার পালা
নিজে স্বেচ্ছায় বন্ধ করে ঘরের দরজা জানালা
আদিম গুহাবাসীদের মতোই আছি,
কাটাচ্ছি রাজা মশাইয়ের বন্দিদশায়।
অনিমেষ, তবুও নিষ্কৃতি মিলছে কোথায়?
দরজা জানলা বন্ধ করেও শব্দদানবকে রোখা যায়?
বদ্ধ ঘরে বন্ধ হয়ে আসে নিঃশ্বাস
কে জানে, এভাবে কাটাতে হবে কত আর বন্দিশালায়?
যে যতোই খবরাখবর নিতে ব্যস্ত থাকুক
মোবাইলের রিংটোন ঘন ঘন বাজাতে থাকুক
কথোপকথন দূরস্ত, কানে পৌঁছায় না রিংটোন,
কিংবা টিভির দূরভাষ যতোই জোরে বাজুক।
অনিমেষ, সেজন্য চিন্তা করিস না, সব সয়ে যাবে
শরীর ও মগজ মানিয়ে নেবেই নিজ স্বভাবে
কে যেন প্রথম বলেছেন, মানুষ অভ্যাসের দাস!
যুগান্তকারী তার এই বার্তা মানুষ বয়ে বেড়াবে।
যখনি ঢলে পড়ি হার্ট ফেল করার অবস্থায়
তখন ভাবি, ’কেউ কি রাখে কেমন আছি সে খবর?’
তারপর বেশ কাটে শব্দদানবের বন্দিশালায়
সেজন্য চাপাতে চাই না কারোর উপরে দায়।