হলো কী, পুরোচন? বিবেকে করেনি দংশন
করতে দুর্যোধনের আজ্ঞাবহন
চলে গেলে বারণাবতে জতুগৃহ গড়ে তুলতে
পঞ্চপাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারতে
রাজাজ্ঞা পালনে ব্রতী পঞ্চপাণ্ডবেরা মহামতি
জেনেও হতে পারে দুর্গতি
পৌঁছলো বারণাবতে রাজমাতা কুন্তী সাথে
পুরোচনের গড়া সেই ভিতে
তাঁদের জানাতে সম্ভাষণ প্রবেশদ্বারে পুরোচন
সাদরে তাঁদের করলে গ্রহণ।
মনে পুষেছিল কী দুর্মতি হায়রে, এ কী মতিগতি
পাণ্ডবদের জীবনে টানবে ইতি।
উদগ্রীব পিতামহ ভীষ্ম বিদুর কে দিলেন পরামর্শ
যেন বিপদ পাণ্ডবদের না-করে স্পর্শ
বোঝো যাহা সংগত করো যথাযথ বিহিত
পাণ্ডবেরা যেন থাকে অক্ষত
এই নির্দেশ প্রতিপালনে বিদুর ভাবলো মনে মনে
কী করতে হবে প্রতিবিধানে?
কৌরবদের সব ষড়যন্ত্র যুধিষ্ঠিরকে করতে অবগত
তিনি হলেন অতিশয় ব্যস্ত
তাঁর পাঠানো বার্তাবাহক কোনও এক সুদক্ষ খনক
পঞ্চপাণ্ডবদের হতেও রক্ষক
পৌঁছে গিয়ে বারণাবতে যুধিষ্ঠিরের সাথে সাক্ষাতে
বিদুরের বার্তা দিলো সংকেতে।
সে বিদুরের নির্দেশমতো সুড়ঙ্গ খুঁড়তেও হলো রত
তার সাধ্য মতো অতি দ্রুত
যেন সুড়ঙ্গপথটি ধরে জতুগৃহ থেকে যেতে পারে
পাণ্ডবেরা নিকটবর্তী নদী তীরে
ঘাটে বিদুরের পাঠানো তরী তাদেরকে নিয়ে তড়িঘড়ি
ও-পাড়ে পৌঁছে দেবে সরাসরি।
প্রতি রাতেই পাণ্ডবেরা পালা করে দিয়েছে প্রহরা
কেউ এ কাজ করেনি দায়সারা
যাতে না-আসে দুর্যোগক্ষন আর তাঁদের বাঁচে জীবন
অগ্নিসংযোগ না-করতে পারে পুরোচন
সুড়ঙ্গ নির্মাণে গেছে একবছর সেসময় বেঁচে থাকাও দুষ্কর
তারা রোজ গুনেছে প্রতীক্ষার বহর।
কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী সমাগত কুন্তী পশুপতি-নাথের শরণাগত
রাজমাতা দেবার্চনায় নিয়োজিত
পঞ্চপাণ্ডবেরা ভেবে রেখেছে রাতে পূজাপার্বণ শেষে
সুড়ঙ্গপথ ধরে পালাবে অবশেষে।
পুরোচন ও ভেবে রেখেছে সেই রাতে হিসাব কষে
জতুগৃহে আগুন লাগালে সরসে
মৃত্যু মুখে পড়লে পাণ্ডবেরা কেউ বাঁচবে না তারা
সেও হতে পারবে দায়সারা।
হলো কী সেই রাতে? পাঁচ পুত্র ও মাহুতের সাথে
পুরোচন সুরাপানে উঠলো মেতে
হয়তো ছিল বিধির বিধান করে অতিরিক্ত সুরাপান
ঘুমের জন্য জতুগৃহে নিলো স্থান
তারা জতুগৃহে যখনি ঘুমলো পাণ্ডবেরা অগ্নিসংযোগ ঘটালো
পুরোচনেরা সকলেই মরলো
পাণ্ডবেরা বারণাবত ছেড়ে গেল রাজমাতা সহ তারা রক্ষা পেল
এ দুষ্টচক্র এভাবে নিঃশেষ হলো।
কী জানি একে বলে কি নিয়তি উদ্যত হলে করতে পরের ক্ষতি
বাড়ে বৈকি নিজের-ই দুর্গতি।
(মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে)