দেখেছি রামবাবুর অসুখ বাড়াবাড়ির
পর্যায়ে পৌছলে তখন তাকাওনি আর
কোনদিকে ফিরে। তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে
ছুটে গেলে আর জি কর হাসপাতালের
উদ্দেশ্যে।
শুনেছি দু’ ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছে যে
অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটি ছিলনা মোটেও
সুখকর।
আউটডোরের দরজায় ঝুলেছিল মস্ত বড়
এক তালা, ইমারজেন্সিতে গিয়ে দেখলে
রোগীদের অস্বাভাবিক ভিড়।
সেসময় সেখানকার পরিস্থিতি এমনি ছিল
তীর্থের কাকের মতো অধীর আগ্রহে সেই
চিকিৎসকদের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ থাকতে
হলো।
তারপর কাটলো যখন সেই অপেক্ষার প্রহর,
রোগীকে নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছলে তারা
তাকে পরীক্ষা করে ভর্তির পরিস্থিতিতে নেই
বলে দিয়েছিল ফিরিয়ে।
বুঝতে বাকি রইল না দুঃসময় ধরেছে ঘিরে।
কে না জানে দুঃসময়ে দুর্গতি আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে
ধরে। তখন তোমার শিরে সংক্রান্তি, ভাবতে
হলো করবে কী?
বহু চেষ্টার পরেও রোগীর চিকিৎসা হলো কৈ।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে
না পারা সত্যিই যেন কষ্ট কল্পনা।
দুঃখের বিষয় অনেকে সেই পরিস্থিতি আদৌ
উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে না।
ক’জন ভাবে তখন দুঃস্থ রোগীদের আত্মীয়
পরিজন করবে কী? কিভাবে করবে তার
মুশকিল আসান?
তখন নিশ্চয় ছটফট করেছ মৃগয়ার উদ্দেশ্যে
বেরিয়ে পড়া যুবরাজের বানে বিদ্ধ শিকারের
মতো। হয়তো মনে হয়েছিল হাসপাতালে
অব্যবস্থা চরমে।
‘ হয়তো’ কেন? তখন নিশ্চয় তেমনি এক
অনুভূতি বিঁধেছিল মরমে।
হয়তো ছিল না ভাববারও সেটুকু অবকাশ,
হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা কেন বাড়িয়ে
দেননি সাহায্যের হাত? কেন হতে হয়েছে
এই নির্মমতার শিকার?
বাধ্য হলে ক্ষোভে, দুঃখে, প্রতিবাদে গর্জে
উঠে শিরা ফুলিয়েই তাদের প্রতি সেসময়
ছুঁড়ে দিতে একরাশ ধিক্কার।
লক্ষ্য করোনি অদূরে কে যে দাঁড়িয়েছিল।
সেটি হওয়া স্বাভাবিক। আশু কর্তব্য নিয়ে
মনের মধ্যে হয়তো চলেছিল টানাটানি।
কাকাতুয়া উড়ে এসে বলে গেল, সে তখন
অদূরে হুকায় তামাক খেতে ব্যস্ত। হয়তো
যমদূত এভাবে হয়েছিল অবতীর্ণ।
রোগীদের বাঁধভাঙ্গা আত্মচিৎকার শুনে সে
কখনো কর্ণপাত করেনি। বহু মৃত্যু মিছিল
দেখে তার এখন সেসব সহে গেছে।
ভাবলেনা যে কথা দুর্নীতির জাল কোথায়
বাঁধা? একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পেতে
সেটি বাঁধা যমদূতের আস্তিনে।
শুধু দেখে গেছো আকাশ জুড়ে মেঘের
ঘনঘটা। হয়তো ভেবেছিলে ঝড়বৃষ্টি শুরু
হলে সামলাতে পারবে সেই ঝাপটা?
তবে দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে ফেলার কাজটি
সহজ হতো না কোনমতে। একবারও কি
ভেবে দেখেছিলে, ‘নদী বয়ে যাচ্ছে কোন
খাতে?
ডাক্তারবাবুরা করবেন কী? তাদের টিকি
শুধু নয়, এখন প্রাণভোমরা ও বাঁধা তার
হাতে।