কবিতাঃ পলিন কাউসার
আবৃত্তিঃ মূনীব রেজওয়ান, জার্মানি
সংগীতঃ পাবলো আরেল্লানো
(আবৃত্তির লিঙ্কটা নিচে দেয়া আছে)
রাতে, ঢোকার মুখে গাড়ির চোখ যে ব্লকটির দিকে তাকায় সবার আগে
ওরা ওখানেই থাকতো, আমরা একটু ভেতরে
নূতন আসায় আলাপ হয়নি তখনও কারো সাথে
সবে ডিসেম্বরের শুরু, শীতের পিঠা আর খেলা নিয়ে মেতে গেছে সবাই
আমার বয়সি ক’জন কে দেখলাম
সম্পাদ্য আর উপপাদ্য আঁকছে মাঠ জুড়ে
দু’এক কথায় পরিচয় আর সাথে ব্যাডমিন্টনের আমন্ত্রণ এলো
সন্ধ্যা হলে র্যাকেটের চাবুক চালাই বাতাসে, সাঁই, সাঁই,
হঠাৎ একদিন, ঐ ব্লকেরই তিন তলায় ছায়া দেখি
ওদিকটায় আলো তেমন নামে না
আবছা দেখেও বেশ বোঝা যায় আক্ষেপ হচ্ছে খেলা দেখে
প্রথম দেখা হলো গেটে
বই বোঝাই স্কুলব্যাগ, পানির খালি ফ্লাক্স
হাতের পিঠে ঢাকছে ঘামের লাল মুখ
কপালে ক’গাছি চুলের দুষ্টুমিতেও বিরক্ত
এক থেকে দুই হতে যতটুকু সেকেন্ড লাগে
তারও কম সময়ের চোখাচোখি
শিরদাঁড়া দিয়ে কি যেন একটা বয়ে গেলো আমার
সেদিন থেকে, প্রতিরাতে, বুকের কাছে সুখের মতো একটা দুঃখ টের পেতাম
কৈশোরের বয়ঃসন্ধির নিয়মেই ব্যাস্ততা বেড়ে গেলো আমার সাইকেলের চাকায়
অযথাই ঘেমে যেতে লাগলো টি-শার্ট
কলম্বাসের মতো আমিও আবিষ্কার করলাম
ছায়া দর্শকটি সে ছাড়া আর অন্য কেউ না
শাসনের নিকুচি করে প্রথম ঝুঁকি নেয়া
বুক কাঁপা, অহেতুক তেষ্টা, আরো কতো কি
পাহারায় দু’পাশে কৃষ্ণচূড়া
সাইকেল, আমি আর সে, চোখ বিছানো পিচের পথে
“আপনি তো একদিনও জিততে পারেন না”
নির্বাক আমি লজ্জায় মিশে যাই
অপ্রাপ্ততা সত্ত্বেও আমরা জমে যাচ্ছিলাম এক অজানা হিম সুখে
আচমকা বিরতি, দিন তিনেক হলো দেখা নেই
কাউকে জিজ্ঞেস করবার সাহসও নেই হাতে
কি ভীষণ কষ্ট ! কি ভীষণ কষ্ট !
শোবার বালিশ জানে, কতোটা জল শুষেছে ভোরের আগে
একটি কিশোরের বোবা আর্তনাদ বোঝেনি প্রকৃতিও
আবারো কাঁটা দিলো গায়ে
ব্লকের সামনে ঠেলা গাড়ী সাংসারিক আসবাব বোঝাই
সারা দুপুর দাঁড়িয়ে থেকেও দেখিনি তাকে, জানলাম চলে গেছে রাতেই
বাকি ছিলো শুধু বাক্স পেঁটরা, বদলি হয়েছে আরেক শহরে
মনে পড়ে, শেষ দেখার দিন
“কাল ঠিক ১১টায়, এখন সোজা বাসায়, কোন আড্ডা না, আমার কথা না শুনলে আর আসবো না আমি”
তুমি আসোনি, আমি তোমার কথা রেখেছিলাম
আজ ১৮ বছর পর আবারো সেই স্মৃতির জাদুঘরে, সেই ব্লকের সামনে
আগের মতো সব আছে যেমনটি ছেড়ে গেছিলাম
বিদায়েরও আছে কিছু রীতি
এভাবে চলে যাওয়া অন্যায়, এভাবে চলে যাওয়া যায় না।
https://soundcloud.com/user180691959/spebtoyzrdw9